সাতক্ষীরায় চার দিনের ব্যবধানে দুইবার ধর্ষিত এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :

চার দিনের ব্যবধানে দু’বার ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার ভিকটিম এসএসসি পরীক্ষাথী মাইমুনা ইয়াসমিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ার চাচা মুনসুর আলীর বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

মৃত মাইমুনা ইয়াসমিন সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়া ঈদগাহ এলাকার আজিজুর রহমানের মেয়ে। সে নবারুন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, গত ৩ মে সাতক্ষীরা শহরতলীর ইটাগাছার বনলতা হাউজিং কমপ্লেক্স এলাকায় এক সময়কার সহপাঠীর বাড়িতে যেয়ে পূর্ব পরিচিত জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইরুনিয়নের খলিষাবুনিয়া গ্রামের হৃদয় হোসেন(২১) চেতনানাশক ¯েপ্র করে মাইমুনা ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে গত ৭ মে সন্ধ্যার পর বাড়ির পিছনে এক নারীর সহযোগিতায় গোয়ালঘরে হৃদয় হোসেন তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চার দিনের ব্যবধানে ওই মেয়ে দুইবার ধর্ষিত হয়েছে এমন অভিযোগে তার বাবা আজিজুর রহমান বাদি হয়ে ৯ মে সাতক্ষীরা সদর থানায় হৃদয় হোসেন ও দুই নারীর নাম উলে­খ করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(২)/৩০ ধারায় মামলা(২০) দায়ের করেন। মামলা রেকর্ড করার ঘটনাস্থলে যেয়ে ও ওই দুই নারীসহ চারজনকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভিকটিমের বক্তব্যের সাথে মামলায় বণিত অভিযোগ গোলমেলে মনে হওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১০ মে মেয়েটি সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। একই দিনে সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। মামলার পর থেকে মেয়েটি বিমর্ষ ছিল।

মিজানুর রহমান আরো জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মাইমুনা ইয়াসমিনের লাশ তার বাড়ি সংলগ্ন ঢাকায় অবস্থানকারি চাচা মুনসুর রহমানের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ রেখে চাবি তার বাবা আজিজুর রহমান নিয়ে গিয়েছিলেন।

এদিকে মঙ্গলবার সরেজমিনে ইটাগাছার বনলতা হাউজিং কমপ্লেক্সে মাইমুনা ইয়াসমিনের পুরাতন বান্ধবী বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসার নিকটবর্তী পলিটেকনিক স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাড়িতে গেলে কথা হয় ওই পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে। তারা জানান, মাইমুনা ২ মে বিকেলে তাদের বাড়িতে এসেছিল। ৩ মে ঈদের দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টি চলাকালিন সময়ে চলে যায়। ৭ মে সকাল ১১টার দিকে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ এসে পলিটেকনিক কলেজের ওই শিক্ষার্থী ও নবারুন মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে (পার্শ্ববর্তী) থানায় জিজ্ঞাসাদের জন্য নিয়ে যায়।

গভীর রাতে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে ছেড়ে দিলেও পলিটেকনিক স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ৮ মে সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদেরকে ছাড়াতে পুলিশের নাম করে স্থানীয় একটি চক্র মোটা অংকের টাকা আদায় করে বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে দক্ষিণ কাটিয়া ঈদগাহ পাড়ায় যেয়ে গেলে পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ি আজিজুর রহমান জানান, তার মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে দুইবার। তিনি দেড় মাস যাবৎ তাকলিব জামাতে ছিলেন। ৫ মে তিনি বাড়ি ফেরেন। তবে তার মেয়েকে ধর্ষণে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিবেশি যে অসুস্থত নারীকে দায়ী করা হয়েছে তার সত্যতা মেলেনি।

এদিকে দক্ষিণ কাটিয়ার ঈদগাহ পাড়ার একাধিক ব্যক্তি জানান, মাইমুনা ইয়াসমিন ও তার ্কটি প্রতিবন্ধি বোন রয়েছে। মা নেই তাদের। বাবা সন্তানদের ঠিকমত দেখভাল করেন না। তাদের ফুফু স্বামী পরিত্যক্তা থ্যালাসামিয়া রোগে আক্রান্ত ময়না খাতুনের ছেলে আল আমিন মাইমুনা ইয়াসমিনকে ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধর্ষণ করে আসছে বলে তারা জানেন। এ ছাড়া বাবা মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে মারপিট করতো। ফলে কখনো কখনো ঘরের চালের উপর রাত কাটাতে দেখেছেন তারা। ধর্ষণের ফলে মাইমুনা ইয়াসমিন অন্তঃস্বত্বা ছিল বলে জানান তারা। মেয়েটিকে ঘুমের ঔধষ খাইয়ে রাখা হতো। মেয়েটি মানসিক বিষাদে ভুগছিল। ৭ মে পুলিশ মাইমুনার লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করে যাতে সে দু’ মাস অন্তঃস্বত্তা ছিল বলে উলে­খ ছিল।

কাটিয়া দক্ষিণ পাড়ার মুকুল হোসেনের বাড়ির চার বছর আগের ভাড়াটিয়া মাসুদ হোসেন জানান, তিনি কিছু না জানলেও তাকে ৭ মে দুপুরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তাকে থানা তকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুলিশের নাম করে কতিপয় ব্যক্তির কাছে খেসারত গুনতে হয়েছে অনেক। ওই এলাকার ট্রাক চালক রবিউল ইসলামেসর স্ত্রী রাশিদা খাতুন জানান, মামলায় তার ভাইপো হৃদয় হোসেনকে আসামী করা হয়েছে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুরে চাচা বাপ্পির কাছে থেকে ইলেকট্রিকের কাজ করে।

হৃদয়কে না পেয়ে তাকে ও তার স্বামীকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে পুলিশের নাম করে। তরে হৃদয় হোসেনের চাচা বাপ্পি হোসেন জানান, ঈদের আগের দিন হৃদয় স্থানীয় একটি মাঠে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিল। সে আদৌ সাতক্ষীরায় যায়নি। তবে শালে­্য গ্রামের আব্দুল আলিম জানান, মাইমুনার ফুফু ময়নার সঙ্গে তার তালাক হয়ে গেলেও ছেলে আল আমিন তার এখানে মাঝে মধ্যে আসতো। মাইমুনাকে বিভিন্ন সময়ে ছেলে আল আমিন উত্যক্ত করতো উলে­খ করে তিনি বলেন, আল আমিন তার মামাত বোনকে ধর্ষণ করতো ও ভয় দেখিয়ে ঘুমের ঔষধ খাওয়াতো।
তবে স্থানীয়রা দাবি করেন যে, ধর্ষণের ফলে অন্তস্বত্বা হয়ে পড়া মাইমুনাকে হত্যা করা হতে পারে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর জানান, মাইমুনা ইয়াসমিনের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের বাবা বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। লাশের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)