শ্যামনগর এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে ৪ কি:মি: ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার

অনাথ মণ্ডলঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব কালীনগর, দক্ষিণ কদমতলা ও গাবা গ্রামের জনগণ তাদের নিজস্ব অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে মাধ্যমে প্রায় ৪ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ীবাঁধ সংস্কার করলেন । উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ীবাঁধ কারণে প্রতিনিয়ত ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস নদী ভাঙ্গনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। ২০০৯ এর আইলা থেকে ২০২১ এর  ইয়াস ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ কদমতলা, কালিনগর ৩ বার নদীর বাঁধ ভেঙ্গে এলাকায় লবণ পানি প্রবেশ করেছে। ২০১৯ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই বেড়ীবাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছিল। যে কারণে উচ্চ জোয়ারের লোকালয় পানি ঢুকতে পারেনি। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে এখানে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মাপ নিয়ে যায়, কিন্তু সংস্কার করে না সে কারন স্থানীয় জনগণ উদ্যোগে আবার সেই বেড়িবাঁধটি ৪ কিলোমিটার নদীর রাস্তা সংস্কার করেছেন।
আতরজান মহিলা মহা বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক কিশোর মণ্ডল জানান, দক্ষিণ কদমতলা ,পূর্ব কালিনগর ও গাবা গ্রামের প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে গিয়ে  ইউনিয়ন প্লাবিত হতে পারে। এখানে একাধিকবার স্থানীয় সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে তিনি কথা বলেছেন সর্বশেষ মাপ জরিপ করে নিয়ে গেল কোনো কাজ হয়নি ১০ বছরেও। স্থানীয় সমাজসেবক সুবোধ মণ্ডল বলেন, আমাদের চিংড়ি নির্ভর এলাকা। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হলে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে অনেকে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছে।এছাড়াও আমাবস্যা পূর্ণিমার সময় নদীতে জোয়ারের জল বৃদ্ধি পায় তাতে দেখা যায়, নদীর পাড়ের কানায় কানায় জল চলে আসে। তাই  এলাকার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য  আমরা প্রতিটি পরিবার থেকে ২ শত করে টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এছাড়াও সামার্থ যোগ্য ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছেন।এবং কিছু মানুষ সেচ্ছায় অনুদান দিয়েছেন।
সমাজ সেবক ভবসিন্ধু মন্ডল বলেন, এখানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে আমাদের সবচেয়ে ক্ষতি হবে তাই এলাকায় টিকে থাকার তাগিদে আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করেছি। স্থানীয় সুধীজন আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে আমরা বেড়ীবাধের কাজ শুরু করেছি ,একদিকে যেমন স্বেচ্ছাশ্রম অন্যদিকে যিনি কাজ করতে পারবেন না তিনি টাকা দিয়ে  সহযোগিতা করেছেন। অশোক মন্ডল বলেন, আমাদের তিন গ্রামে প্রায় ৮শ পরিবার যারা বাঁধের পাশে বসবাস করছে, তারা সবাই সহযোগিতা করার কারণে এই বেড়িবাঁধটি সংস্কর করা সম্ভব হয়েছে। চিংড়ি চাষী অরুণ সরদার বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ঝড় জলোচ্ছ্বাস আমরা মোকাবেলা করছি, একটি বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আসে আরেকটি জলোচ্ছ্বাস অথবা ঘূর্ণিঝড়। আমাদের ব্যাপক পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হয়নি। এখন আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এই চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ প্রায় সংস্কার করে ফেলেছি।
মৎস্যজীবী সবিতা রানী বলেন কারা আসে ,এসে মেপে নিয়ে চলে যায় কিন্তু বেড়ীবাঁধ কোন কাজ হয়না এই পাঁচ বছর দেখছি ,আর কত দেখব? দেব প্রসাদ মন্ডল বলেন,  এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস লেগেই আছে। মে মাস আসলে আতঙ্ক থাকে আমাদের এই এলাকার মানুষ তাই এবছর আমরাও উদ্যোগ নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছি এবং প্রায় কাজ সম্পন্ন। সুন্দরবন লাগোয়া মালঞ্চ নদীর কূলে এই বেড়ী বাঁধ যেখানে চিংড়ি শিল্পের অপরূপ সম্ভাবনা সেখানেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে না বলে জানান এলাকাবাসী। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের , স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের এই এলাকার দিকে দৃষ্টি রাখার সদায় আহ্বান জানিয়েছেন।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধার কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্ব কালীনগর, দক্ষিণ কদমতলা ও গাবায় বেড়ীবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । স্থানীয় মানুষের এই উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ডাদপরকে সাধুবাদ জানাই।আরও বলেন আমি একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করেছি কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকায় স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে ।শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ‌ মাসুদ রানা বলেন, প্রকল্প না থাকায় আমরা কাজ করতে পারিনি।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)