সাতক্ষীরার প্রধান সড়ক ও পৌর সড়ক দখল করে বালির স্তুপ, বিপাকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ

রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরা- খুলনা মহাসড়ক, বাইপাস সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের অংশ বিশেষ দখল করে রাখা হচ্ছে বালি। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বিপন্ন হচ্ছে জনজীবন। অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে বিনেরপোতা, বিনেরপোতা থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, সদর হাসপাতাল মোড় থেকে বাকাল চেকপোষ্ট ও শহরের নারিকেলতলা মোড় থেকে সরকারি কলেজ রোড ঘুরে দেখা গেছে বিনেরপোতা পাওয়ার হাউজের সামনে, তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যুব উন্নয়ন অফিস, উপকর কমিশনারের অফিসের সামনে, সদর হাসপাতালের প্রধান ফটের বিপরীতে ক্রিস্টাল ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের সামনে, বাইপাস সড়কের কমপক্ষে ২০টি পয়েন্টে, শহরের হাটের মোড়, ফুড অফিস মোড়ে নির্মানাধীন এনএসআই অফিসের সামনে, স্টেডিয়াম ব্রীজের পাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে বালি ও নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে।

তালতলা মোড়ের ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ি শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা তরিকুল ইসলাম, স্কুল ক্যান্টিনের স্বত্বাধিকারী তৌহিদুজ্জামান, সাইকেল মিস্ত্রী আব্দুল হাকিম জানান, দক্ষিণ তালতলা মসজিদের সামনে থেকে গোপীনাথপুর তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজ করার জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন সাতক্ষীরার প্রভাবশালী ঠিকাদার ইকবাল জমাদ্দার। এ কাজ করার লক্ষ্যে ওই ঠিকাদার এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বালি কিনে তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষ প্রান্তের প্রাচীরের সামনে থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তার অংশ বিশেষ দখল করে বালি রেখেছেন। এ ছাড়াও বালি ফেলা হয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনের রাস্তার অংশ জুড়ে। রাস্তার পাশে বালি রাখার কারণে গাড়ি চলাচলের সময় ও বাতাস হলে বালি উড়ছে। ফলে এখানে দোকান খোলা রাখা যেমন দুষ্কর হয়েছে তেমনি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১৫ এপ্রিল সকালে তালতলা প্রাইমারী স্কুলের সামনে দিয়ে সাইকেলে চড়ে যাওয়ার সময় রাস্তাজুড়ে বালি রাখার কারণে কৈখালি গ্রামের আব্দুল কাদের (৬০) মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দুই পা ভেঙে বর্তমানে শয্যাশায়ী। একইভাবে গত শনিবার সকালে স্কুলের পাশ দিয়ে সাইকেল নিয়ে রাস্তায় ওঠার পরপরই বালির কারণে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় মারাত্মক জখম হয়েছেন মাগুরা তালতলার নুনুখোকা ওরফে আহাদ আলী (৬২)। তিনি বর্তমানে খুলনা সিটি মেডিকেলে সঙ্গাহীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার জামাতা ইদ্রিস আলী। এ ছাড়াও তালতলা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাস্তা জুড়ে বালি ফেলার কারণে ইতিমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছে না।

তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প ম শ্রেণীর ছাত্রী (ক্রমিক নং-১) মমতাজ জাহান মুক্তি ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মোঃ আজিম (ক্রমিক নং-৩) জানায়, শ্রেণীকক্ষের জানালার পাশে রাস্তায় বালি থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তারা ঠিকমত ক্লাস করতে পারছে না। বালি উড়ে চোখে মুখে পড়ছে। তবে ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি ওবায়দুল্লাহ বলেন, বালি নিয়ে বিড়ম্বনা সহ্য করতে না পেরে তিনি স¤প্রতি ৯৯৯ এ রিং দিয়েছিলেন। কিন্তু মেলেনি প্রতিকার।

তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা খাতুন জানান, প্রায় দেড় মাস রাস্তার ধারে এ বালি রেখে দেওয়ায় ক্লাস করা যাচ্ছে না। জানালা দিয়ে বাতাসের সঙ্গে বালি ঢুকছে। তিনি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম স্থানীয় প্রশাসনে কথা বলেও কোন প্রতিকার পাননি। বিষয়টি তিনি তার শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন।

তবে তালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসেন মোঃ রেজাউল করিম জানান, স্কুলের সামনে রাখা বালি সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য। তাই জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি তিনি।

তবে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশিষ কুমার মণ্ডল জানান, তার অফিসের সামনে যিনি বালি রেখেছেন তার নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করে কথা বলে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সম্পাদক ও জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অতিরিক্ত পিপি অ্যাড.মোস্তফা নুরুল আলম বলেন, উপ কর কমিশনারের অফিসের সামনে(কারা ফটক) রাস্তার উপর, সদর হাসপাতালের সামনে ক্রিস্টাল ডায়াগোনস্টিক সেন্টারের সামনে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে, শহরের ফুড অফিস মোড়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার নির্মাণাধীন ভবনের উত্তর পাশে, ইটাগাছা মোড়ে ও বাইপাসের কমপক্ষে ২০টি পয়েন্টে ফুটপাত ও রাস্তার অংশ বিশেষ দখল করে বালি বা নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। কেই বা বিক্রির জন্য আবার কেউ বা নিজের ও প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য রেখেছেন। এতে পরিবেশ নষ্টের পাশপাশি সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যহত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহম্মেদ চিশতির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজামউদ্দিন রাস্তার উপর বালি রাখার ফলে দুর্ঘটনা ঘটা ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ই বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় অভিযোগ করে প্রতিকার পেতে পারেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)