আশাশুনির খাজরায় নাবালিকা স্কুল ছাত্রী অপহরণ, ১৯ দিনেও মামলা হয়নি

রঘুনাথ খাঁ:

এক নাবালিকা স্কুল ছাত্রী অপহরণের অভিযোগের ১৯ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়ন পরিষদে শালিসি বৈঠকে উভয়পক্ষকে ডেকে ওই স্কুল ছাত্রীকে বাবার জিম্মায় দেওয়ার এক দিন পর ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই মেয়েকে বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসে অপহরণকারির হাতে তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ। অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই স্কুল ছাত্রীর ঠাকুরদাদা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

আশাশুনি উপজেলার নয়াবাদ গ্রামের অসীম কুমার রায় জানান, তার ভাই ভদ্রকান্ত রায়ের মেয়ে শতাব্দী রায় পিএনএফ ধনীরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার জন্ম তারিখ ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। গত ১৭ এপ্রিল রবিবার রাত ৯টার দিকে তাকে বাড়ির সামনে থেকে অপহরণের অভিযোগে তার বাবা ভদ্রকান্ত রায় দেয়াবর্ষিয়া গ্রামের রসিক মন্ডলের ছেলে মিলন মন্ডলের নামে থানায় এজাহার দায়ের করেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগের তদন্তভার উপপরিদর্শক নুরুন্নবীর উপর ন্যস্ত করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মামলা এড়াতে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম ২৩ এপ্রিল উভয়পক্ষকে পরিষদে ডেকে দুপুর ১২টার দিকে শতাব্দীকে শাখা ও সিন্দুর পরিহিত অবস্থায় তার বাবার হাতে তুলে দেন।

অসীম কুমার রায় আরো জানান, ২৫ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে শাহানেওয়াজ ডালিমের কাছের লোক তারামনী ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ কয়েকটি মামলার আসামী চেউটিয়া গ্রামের কবীর হোসেন, একই গ্রামের আনিসুর রহমান, দীনেশ মন্ডল, পিএনএফ ধনীরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পশুপতি রায়, কাপষন্ড গ্রামের রোকনুজ্জামান, তার স্ত্রী ফতেমা, দেয়াবর্ষিয়া গ্রামের বিশ্বনাথ মন্ডল, ভোম্বল মন্ডল, তারক মÐল, মিলন মÐলসহ কয়েকজন সাতটি মোটর সাইকেলে তাদের বাড়ির সামনে আসেন। পরে বাড়িতে ঢুকে মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন দাদা ভদ্রকান্ত রায়কে। নিরুপায় হয়ে দাদা বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপপরিদর্শক নুরুন্নবীকে জানান।

নুরুন্নবী মোবাইল ফোনে দীনেশ মন্ডলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলেন। পুলিশে ফোন করায় দীনেশ মন্ডল , রোকনুজ্জামান ও ফতেমা ক্ষুব্ধ হন ভদ্রকান্ত রায় এর উপর। একপর্যায়ে তারা মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের সঙ্গে কথা বলেন। চেয়ার ম্যান ঝামেলা না করে তাকে মেয়ে ওইসব লোকজনদের হাতে তুলে দিতে বলেন। একপর্যায়ে দীনেশ মন্ডলসহ তার সঙ্গে থাকা লোকজন শতাব্দীকে ঘর থেকে বের করে এনে বাবার সামনে দাঁড় করান। মেয়েকে অপহরণকারি মিলনের সাথে বিয়ে দিতে তার কোন আপত্তি নেই মর্মে বলতে বাধ্য করিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। এ নিয়ে থানায় কোন অভিযোগ করবেন না বলতে বাধ্য করা হয়।

এরপরপরই ওইসব লোকজন শতাব্দিকে নিয়ে চলে যান। অপমান সহ্য করতে না পেরে বাবা (অসীম) মনোরঞ্জন রায় বড়দল ইউনিয়নের জেলপেটুয়া গ্রামে মেয়ের বাড়িতেম চলে যান। শোকে ও দূঃখে ২৯ এপ্রিল রাত পৌনে ১২টার দিকে জামাতার বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৩০ এপ্রিল সকালে মনোরঞ্জন রায় এর লাশ বাড়িতে আনা হয়। মৃত্যুর খবরে মনোরঞ্জন রায় এরন স্বজনরা তাদের বাড়িতে ছুঁটে আসেন। প্রায় একই সময়ে শতাব্দীকে নিয়ে মিলন , রোকনুজ্জামান, স্ত্রী ফতেমা, বিশ্বনাথ মন্ডল , ভোম্বল মন্ডল ও তারক মন্ডল তাদের (অসীম) বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। আপত্তি করায় রোকনুজ্জামান ও তার স্ত্রী ফতেমা তাকেসহ বাড়ির লোকজনদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

৪ এপ্রিল ঈদের দিনে রোকনুজ্জামান ও ফতেমা দাওয়াত করে মিলন ও শতাব্দীকে তাদের বাড়িতে খাওয়ান। বর্তমানে রোকনুজ্জামান, ফতেমা ও দীনেশ মন্ডলসহ কয়েকজনের ইচ্ছায় নাবালিকা হওয়ায় শতাব্দী বৈধ বিবাহ ছাড়া নামমাত্র শাখা ও সিঁন্দুর পরে মিলন মন্ডলের বাড়িতে অবস্থান করছে। বিষয়টি জানার পরও পুলিশ ১৯ দিনেও অপহরণকারি ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আবার ওই মহলটির ভয়ে স্কুল ছাত্রীর বাবা ও স্বজনরা আদালতে মামলা করতে পারছেন না।

বিশিষ্ঠ মানবাাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, ১৬ বছর আট মাস বয়সের নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়া বাল্য বিবাহ আইন পরিপন্থি। এরসঙ্গে জনপ্রতিনিধিসহ যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা নাহলে সমাজে এ ধরণের ঘটনার প্রবণতা বাড়বে। বিয়ে বর্হিভুত মিলন ও শতাব্দীর এক জায়গায় অবস্থান করাটা ধর্ষণের শামিল।

এ ব্যাপারে মিলন মন্ডলের সঙ্গে শনিবার একটা ৪ মিনিটে তার ০১৭৬৩৭০৭৭৮০ নং মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে আত্মীয় পরিচয়ে একজন রিসিভ করে বলেন, বিয়ে হয়ে গেছে মিলন ও শতাব্দীর। তবে ফোনটি তাদের বাড়িতে চার্জ দিতে দিয়ে গেছে মিলন। পরবর্তীতে মিলনের সঙ্গে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম শনিবার বিকেল সোয়া চারটায় মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, প্রেমের টানে একজনের হাত ধরে চলে যাওয়া নাবালিকা শতাব্দীকে তিনি উদ্ধার করে তার বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। অনেকেই তার কাছের লোক হতে পারে। আবারো ওই মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ কোন আইনগত ব্যবস্থা নিলে তিনি সব ধরণের সহায়তা করবেন। তার নাম ভাঙিয়ে বেআইনি কোন কাজ করলে সেটা মেনে নেওয়া হবে না।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোমিনুর রহমান শনিবার দুপুর আড়াইটায় এ প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি তার স্মরণে নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)