প্রবাসীদের কাঁদিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পলাশ

বিনোদন ডেস্ক:

নির্মাতা ও অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশের মোবাইল ফোন হঠাৎ বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলেন, হোয়াটসঅ্যাপে কল এসেছে। নম্বর দেখে বুঝলেন বিদেশের কেউ। তিনি রিসিভ করে হ্যালো বললেন। কিন্তু কোনো জবাব পেলেন না। ক্ষণিক পর শুনতে পেলেন, ফোনের ওপাশের মানুষটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। এরপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে মানুষটা বললেন, ‘ভাই, খেপসা-ই খাচ্ছি এখন। কী করলেন পলাশ ভাই! আজ আপনাকে নতুনভাবে চিনলাম।’

এই একটা নয়, এমন অসংখ্য ফোন আসছে পলাশের নম্বরে। আর অগণিত মেসেজে ভরে গেছে ফেসবুকের ইনবক্স। এসবের প্রায় সবগুলোই প্রবাসীদের। নতুন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে পলাশ এতোটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন যে, দর্শক আপ্লুত হয়ে এভাবেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করছে।

গত ১ মে প্রচারে আসে স্টার লাইন ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের বিশেষ এই বিজ্ঞাপনচিত্র। নির্মাণ করেছেন শাফায়েত হোসেন শাওন। নাইন্টিজ কিডস প্রডাকশন থেকে নির্মিত এই বিজ্ঞাপনচিত্রে জিয়াউল হক পলাশ অভিনয় করেছেন একজন প্রবাসীর চরিত্রে। তার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে, প্রবাসীদের কষ্ট, সংগ্রাম আর ত্যাগের গল্প। একজন প্রবাসী কতটা পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করেন, বাবা-মাকে ছেড়ে ভিনদেশে থাকতে তাদের কতখানি কষ্ট হয়, সবকিছু যেন কয়েকটি মুহূর্তে ফুটে উঠেছে এখানে।

Polash
বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে পলাশ

ফলে প্রবাসীদের মনে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে এই বিজ্ঞাপনচিত্র। পলাশের মধ্যে তারা যেন নিজেকেই দেখতে পেলেন পর্দায়। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে বিজ্ঞাপনটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মুগ্ধতা নিয়ে সবাই পলাশের ভূয়সী প্রশংসাও করছেন।

এ নিয়ে আলাপ হলো পলাশের সঙ্গে। মনের আগল খুলে জানিয়েছেন বিজ্ঞাপনটির গল্প। পলাশ বলেন, “এই বিজ্ঞাপন প্রচারের পর থেকে এত প্রবাসীর কাছ থেকে ফোন পেয়েছি, বলে শেষ করতে পারব না। আমার আত্মীয়-স্বজন অনেকেই বাইরে থাকেন, তারা ফোন করেছেন। আবার বহু মানুষ কোনো না কোনোভাবে আমার নম্বর জোগাড় করে ফোন দিয়েছেন। সবার একটাই কথা, ‘ভাই ঈদের সময়ে আপনি আমাদের কাঁদিয়েছেন।”

পলাশ কেবল হাসি-ঠাট্টার কাজ করেন; এমন একটা ধারণা অনেকের মনে জন্মেছে। সেটা ভাঙার জন্যই এই বিজ্ঞাপনটি করেছেন অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘আমি যে পারিশ্রমিক নিই, সেটার ছয় ভাগের এক ভাগ নিয়েছি বিজ্ঞাপনটির জন্য। কারণ শুধু টাকার জন্য কাজটি করিনি। এটার গল্প আমাকে অনেক বেশি স্পর্শ করেছে। তাই কাজটি করা।’

Polash
জিয়াউল হক পলাশ

বিজ্ঞাপনটিতে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে পলাশ বলেন, ‘আমি সবসময় শুটিংয়ে সবার সঙ্গে মজা করি, হাসাহাসি করি। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার, এই বিজ্ঞাপনটির শুটিংয়ে আমি একেবারে চুপচাপ ছিলাম। কারো সঙ্গে হাসি-হইহুল্লোড় করিনি। সারাদিন আমি কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। প্রতিটা মুহূর্তে প্রবাসীদের কষ্ট-বাস্তবতার চিত্র আমার চোখে ভাসছিল।’

পলাশ জানান, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ টিমের বাইরে তিনি ইউটিউবের জন্য তেমন কাজ করেন না। যখন ব্যতিক্রম ধাঁচের কোনো গল্প পান, তখনই কেবল কাজ করেন। তরুণ এ অভিনেতার ভাষ্য, “আমাদের প্রোডাকশনের বাইরে আমি নিজের কাজের ক্ষেত্রে খুব স্বার্থপর। যে কাজটাতে আমি নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারব না, যেখানে দর্শক আমাকে ভিন্নভাবে পাবে না, সেরকম কাজ করতে চাই না। যেমন দেখুন ওয়েবে আমি যতগুলো কাজ করছি, প্রত্যেকটাতে কিন্তু চেষ্টা রাখছি ভিন্ন কিছু দেওয়ার। সেটা ‘বলি’ বলুন কিংবা ‘তীরন্দাজ’। নিজেকে ভাঙার চেষ্টা কিন্তু করেছি।”

এবারের ঈদে ‘সাদা প্রাইভেট’ নামে একটি ফিকশনে কাজ করেছেন পলাশ। নিজেদের প্রোডাকশনের বাইরে এটাই তার একমাত্র ঈদ প্রজেক্ট। পলাশ জানান, প্রচুর কাজের প্রস্তাব তার কাছে আসে। কিন্তু ভিন্নতা না থাকায় ফিরিয়ে দেন। গল্প ও চরিত্র বাছাই করে কাজে যুক্ত হওয়ার এই অভ্যাসটা তিনি সবসময় ধরে রাখতে চান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)