শিক্ষামন্ত্রীর ভাইসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক :

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৪৮ একর সরকারি সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে রেজিস্ট্রি দলিল সৃষ্টি করে মালিকানা হস্তান্তর করার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর বড় ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গ্রহীতা হিসেবে জমি দখলে নেয়ার কারণে মামলায় প্রথমপক্ষের বিবাদীরা হলেন- সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আহমেদ, হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, মো. মুনছুর আহম্মদ, শিক্ষামন্ত্রীর চাঁদপুরস্থ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

সাফ কবল ও দানপত্রমূলে জমি দাতা হিসেবে দ্বিতীয়পক্ষের বিবাদী করা হয়েছে হাইমচরের মৃধারকান্দি এলাকার আ. ফারুক সরদার, আবুল সরদার, ঢাকা মিরপুরের নুর মোহাম্মদ, মাসুম হোসেন, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের পিয়ারা বেগম, আকলিমা বেগম, তছলিমা বেগম, মো. সুমন মিয়া রিদয়, ফাহিমা আক্তার, মো. শরীফ মিয়া, হাইমচরের নূর মোহাম্মদ, লক্ষ্মীপুরের জয়নাল আবেদীন মোল্লা, মিরপুরের মাজেদা বেগম, মো. নাছির মৃধা, মো. রাসেল, হাসিনা আক্তার, শাহীনা বেগম, মোহাম্মদপুরের মো. সালাউদ্দিন, মো. ফিরোজ ইকবাল।

তৃতীয়পক্ষের বিবাদী করা হয়েছে হাইমচর উপজেলার সাবেক সাব-রেজিস্টারকে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই তৎকালীন সাব রেজিস্টার অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুসহ প্রথম ৫ জন হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরের নদী সিকস্তি ৪৮ দশমিক ৫২৫০ একর ভূমি ৬টি দলিলে মার্চ, এপ্রিল ও জুলাই মাসে সাফকবল ও দানপত্রের মাধ্যমে দ্বিতীয়পক্ষের বিবাদীদের কাছ থেকে নিজেদের নামে নিয়ে নেন। উক্ত ভূমি সিএস জরিপকালে নদী সিকস্তি অবস্থায় ছিল।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে সরকারি স্বত্বস্বার্থ বজায় রাখার জন্য ও রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ৪/৭৭-৭৮ রিসেটেলমেন্ট মামলার মাধ্যমে হাত নকশা তৈরি করে এবং হাতে লেখা এ, বি, সি, ব্লক নামকরণে একটি জমাবন্দি তৈরি করা হয়। সেই সাথে চাষাবাদ করার জন্য স্থানীয় কৃষকদের বন্দোবস্ত দেয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রকার কবুলিয়তনামা দলিল সম্পাদিত হয়নি। সরকারি স্বার্থে দাখিলার মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব আদায় করা হতো। এ অবস্থায় উক্ত জমিতে ভোগ দখলরত চাষি কোনো স্বত্ব স্বার্থ উপজাত হয়নি।

সিএস, আরএস, বিএস জরিপকালেও ওই জমি জলমগ্ন থাকায় কোনো জরিপ করা সম্ভব না হওয়ায় ভূমির দাগ খতিয়ান ও মৌজার নম্বর হয়নি। এ অবস্থায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক গত বছরের ৩১ আগস্ট এ মৌজার জরিপ কাজ সম্পন্ন করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে চিঠি দেন।

নালিশী ভূমিতে ২য় পক্ষের বিবাদীগণের কোনো প্রকার স্বত্বস্বার্থ ছিল না এখনো নেই। রিসেটেলমেন্ট মোকদ্দমামূলে সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে তাদেরকে শুধুমাত্র ভোগ-দখল করার জন্য দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ২য় পক্ষের বিবাদীরা উক্ত ভূমির প্রতি অন্যায় ও বেআইনিভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য প্রথমপক্ষের বিবাদীগণকে একে আর বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে হস্তান্তর করে বলে বাদীপক্ষ সম্প্রতি জানতে পারে। হস্তান্তরের এমন কোন অধিকার তাদের নেই।

নালিশে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ৪৮ একর সম্পত্তি গ্রহীতা বিবাদীগণ এবং অপর বিবাদীরা দাতা হিসেবে হাইমচর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলগুলো সৃজন করায় সরকারপক্ষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাই এ দলিলগুলো যোগসাজস, তঞ্চকতামূলক হওয়ায় তা অকার্যকর ও বাতিল করার আবেদন জানানো হয়। সেই সাথে মোকদ্দমার খরচ ও ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা সরকারপক্ষে মামলা দায়ের করেছি- সরকারি সম্পত্তি সরকারের কাছে নিয়ে আসার জন্য। এ মামলায় ৫ জন জমি গ্রহীতা এবং ১৯ জন জমিদাতা এবং একজন সাব রেজিস্টারকে বিবাদী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ৪৮ একর জমি জমির দলিল পেয়েছি শুধুমাত্র এ জমি উদ্ধারেই মামলা হয়েছে। ওনারা আরও জমি নিয়েছে কি না বা আরও বেশি দখল করেছে কি না তা এখানে আসেনি।

সাব রেজিস্টারকে বিবাদী করা সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি জানেন এখানে জরিপ হয়নি। এগুলো সরকারি জমি। তারপরও তিনি কিভাবে রেজিস্ট্রি করলেন। যদি আমরা রায় পাই তখনতো এ দলিলগুলো বাতিলের জন্য তাকে অর্ডার দিবে।

সাবেক সাব রেজিস্টার অসীম কল্লোল সম্পর্কে তিনি বলেন, আগের যে সাব রেজিস্টার ছিলেন তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ হওয়ায় আমরা ইতোমধ্যেই তার অপকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)