রপ্তানি বাড়াতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে জোর প্রধানমন্ত্রীর
অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি শিল্প কারখানা ও অন্যান্য সব স্থাপনা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন অন্যান্য সব স্থাপনা, সবকিছু পরিবেশ-বান্ধব করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও অন্যান্য চার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং নরসিংদীর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কৃষি পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষি ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন ফলমূল, তরিতরকারি সবজি উৎপাদন, মাছ-মুরগির ডিম, মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি।এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে অর্থাৎ ভ্যালু অ্যাড করতে পারলে আমরা যেমন বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হব, পাশাপাশি নিজের দেশের মানুষেরও যেহেতু ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, সেখানে আমাদের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
শিল্পায়নের সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি- এটা কৃষি ভিত্তিক ঠিক, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন আমাদের প্রয়োজন। শিল্পায়ন যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রপ্তানি করার সুযোগও সৃষ্টি করে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা- যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিই।’
তিনি বলেন, ‘১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী আমরা পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছি। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করাটা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা প্রতিটি শিল্প কলকারখানা থেকে শুরু করে যত প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করছি, সেখানেই পরিবেশবান্ধব যাতে হয়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি গার্মেন্ট শিল্পের গ্রিন ইন্ড্রাস্ট্রিজ সারা পৃথিবীতে ১০টার মধ্যে এখন সাতটাই কিন্তু এখন বাংলাদেশে। পরিবেশ-প্রতিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারে ৫৭টি শিল্প নগরী, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি আমরা স্থাপন করি এবং ১৩টি শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ আমরা শুরু করি।’
‘আর বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমাদের কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা সম্প্রসারণ করা- এ ধরনের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা হাতে নিই। যার ফলে বাংলাদেশ অনেকটা অগ্রগতি লাভ করে। দ্বিতীয়বার আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন আমরা আরও অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তারা আমাদেরকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে বাংলাদেশে উন্নয়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’
দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমাদের মোট রপ্তানি আয় ছিল ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে আমরা উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে আমরা প্রায় ২০২টি দেশ ও অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি।আমাদের সরকারের নীতি এবং কর্মসূচির ফলে বর্তমানে জিডিপিতে আমাদের শিল্পখাতের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘোড়াশাল এবং পলাশে দুইটি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা (ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মে. টন (বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মে. টন) দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ১০% ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।’
শেখ হাসিনা এই প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা প্রদান করায় জাপান ও চীন সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে ঘোড়াশাল থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বিআইসিসি থেকে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বক্তব্য দেন।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে এই প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।