নির্দেশ উপেক্ষা করে বাংলা শিখছে রোহিঙ্গারা

নিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে কৌশলে বাংলা শেখা অব্যাহত রেখেছে প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র। ক্যাম্পে ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষা ছাড়া বাংলা পাঠদান সরকারিভাবে অবৈধ। সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বাংলা।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশি নাগরিক দাবি করে কক্সবাজারে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। ভবিষ্যতে কোথাও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে এদেশের নাগরিক প্রমাণ করতে তারা বাংলা ভাষায় পড়ালেখা করছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পুরোনো রোহিঙ্গা সন্তানের অনুসরণ করে বাংলা শিক্ষার দিকে ঝুঁকছেন আশ্রয় ক্যাম্পে থাকা সাধারণ রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে রোহিঙ্গাদের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছেন। ঐ সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিজেদের বাংলাদেশি দাবি করছেন তারা। প্রমাণস্বরূপ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের ভোটার তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত, এনআইডি ও তাদের বাবা-মায়ে নামে বাংলাদেশে ক্রয়কৃত জমির খতিয়ান প্রদর্শন করে চলেছেনে। এনআইডি, জমির দলিল-খতিয়ান, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার সনদ দেখে কেউ রোহিঙ্গাদের বিদেশি নাগরিক বলতে পারছেন না। এ কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রকাশ্যে পড়ানো হচ্ছে বাংলা পাঠ্যবই। অথচ আশ্রয়ক্যাম্পে বার্মিজ ও ইংরেজি ব্যতীত রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলা পাঠদান করা চলবে না মর্মে সরকারের নির্দেশ রয়েছে। এই নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণিরর রোহিঙ্গা দরদি এনজিও রোহিঙ্গা শিশুদের আশ্রয় ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারগুলোতে বাংলায়  শিক্ষাদান করছে।

একাধিক বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে  , ১৯৭৮, ১৯৯১-৯২ সালে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সন্তান অনেকে বাংলা শিক্ষায় শিক্ষিত। কেউ কেউ কওমি মাদরাসায় পড়ালেখা করেছেন। কেউ কেউ পৌঁছে গেছেন কলেজ ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে তারা সার্টিফিকেটও পেয়েছেন। পুরোনো রোহিঙ্গাদের অনুসরণ করে বর্তমানে আশ্রিত রোহিঙ্গা অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের বাংলাদেশি নাগরিক বানাতে বাংলা পাঠ্যবই শিক্ষা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার, উখিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া,পেকুয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়া,রামু,  টেকনাফ ও চট্টগ্রামের  বিভিন্ন আরবি,বাংলা, ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে শত শত রোহিঙ্গা সন্তান। ক্যাম্পে আশ্রিত অভিভাবকরা কৌশলে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছে তাদের সন্তানদের। নূরানী মাদরাসা ও লার্নিং সেন্টার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ভর্তি হতে চলেছেন দাখিল মাদরাসা ও স্কুল-কলেজে। পরিচয় গোপন রেখে ক্রমান্বয়ে দেশের বিভিন্ন  বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ছে বহু রোহিঙ্গা সন্তান। পুরোনো রোহিঙ্গা নেতা ইদ্রিছ জিহাদী, শাইখ ছালামত উল্লাহ, মৌলভী রহিম উল্লাহসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার ইন্ধনে বাংলা শিক্ষার দিকে আগ্রহ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের।

বিশ্লেষকরা বলেন, আগে (বিএনপি শাসনামলে) পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি বিশাল অংশ বাংলাদেশি নাগরিক বনে গেছে। অবৈধ কারবার করে এবং রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে বিদেশি অর্থ এনে বর্তমানে তারা কোটিপতি। কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে তারা গড়ে তুলেছে সুরম্য অট্টালিকা।

সূত্র আরো জানায়, সশস্ত্র আরসা ক্যাডারদের ইন্ধনে মিয়ানমারের সামরিক শাসকের ওপর বিশ্বাস ও ভরসা করতে পারছে না উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। ফলে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার মতো চিন্তা-ভাবনা করে তাদের পরিচয় গোপন রেখে কৌশলে ছেলেমেয়েদের বাংলা শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার কলাকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে রোহিঙ্গা সন্তানদের।

শবনম বেবী একজন রোহিঙ্গা নারী। কক্সবাজারের টেকনাফ শামলাপুর ২৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস ছিল রোহিঙ্গা শবনম বেবীর পরিবারের। মিয়ানমার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন এমনটা দাবি তার। রোহিঙ্গা ব্লক মাঝি ইউনুছের মেয়ে শবনম জীববিজ্ঞানে চট্টগ্রাম এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করতে পড়ালেখা করছেন।

সূত্র মতে, ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে বাংলাদেশে পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছে শবনম। জীববিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন বেবী। অন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও রোহিঙ্গাদের বহু সন্তান লেখাপড়া করছেন।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রী পেয়ে ও ইয়াবা-সোনার বারের ব্যবসা করে আয়েশী জীবন পার করছেন। নিজ দেশ মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে গেলে পরিশ্রম করে বা সংগ্রাম করেই বাঁচতে হবে। তাই বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন রোহিঙ্গারা। উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা বসতির বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা চতুর ও কৌশলী। তারা নিজেদের প্রয়োজনে শত শত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। যে কোনো অপরাধ করতে পারে রোহিঙ্গারা। এ দেশে ঠাঁই পেয়ে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাচ্ছে না শরণার্থীরা। এ ছাড়া কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক স্কুল,কলেজ ও মাদরাসা পরিচালনার মূল দায়িত্বে রয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা, শাইখ ছালামত উল্লাহ, জাবের আহমদ,আবদুল করিম,হাফেজ ছালাউল ইসলাম, শামসুল আলম, রিদোয়ান,ইদ্রিস, শামশুল আলম জিহাদী, নবীহোসেন ও এমদাদুল হক সহ শত শত রোহিঙ্গা নেতা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)