জেনে নিন জবার স্বাস্থ্য উপকারিতা

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক:

আমাদের দেশে সর্বত্রই লাল জবা ফুল দেখা যায়। দেখতেও সুদৃশ্য। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে যেন লাল ফুলটি হেঁসে থাকে। আমরা সাধারণত শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে বাড়ির আঙিনা কিংবা বাড়ির ছাদে জবা ফুলের গাছ লাগিয়ে থাকি। গন্ধহীন জবা ফুলে রয়েছে অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।

জবার ইংরেজি নাম Hibiscus rosa-sinensis. বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus rosa-Sinensis Linn. জবা মালভেসি গোত্রের অন্তর্গত একটি চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্ম, যার উৎপত্তি পূর্ব এশিয়াতে। এটি চীনা গোলাপ নামেও পরিচিত। এই ফুলের বাংলা নাম রক্তজবা, জবা, জবা কুসুম। শাখা কলম দ্বারা এর বংশ বিস্তার হয়। প্রায় সারাবছরই ফুল ফোটে। বর্তমানে অনেক ধরনের হাইব্রীড জবার অস্তিত্ব পাওয়া যায় এবং সেগুলোর মধ্যে বর্ণবৈচিত্র প্রচুর।

জবা একটি চিরসবুজ গুল্ম। যার উচ্চতা ৮-১৬ ফুট ও প্রস্থ ৫-১০ ফুট। এর পাতাগুলো চকচকে সবুজ ও ফুলগুলো উজ্জ্বল লাল বর্ণের ও পাাঁচটি পাঁপড়ি যুক্ত। ফুলগুলোর ব্যাস চার ইঞ্চি। গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালে এ ফুল বেশি ফোটে।

জবার ইংরেজি নাম Hibiscus rosa-sinensis

জবার ইংরেজি নাম Hibiscus rosa-sinensis

বাগানের গাছ হিসেবে জবাকে গ্রীষ্মমণ্ডল এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়। জবা যেহেতু ১০° সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জবা গাছকে গ্রীনহাউসে রাখা হয়। জবা গাছের বিভিন্ন রকমের সংকর প্রজাতি আছে। যাদের ফুলের রঙ সাদা, হলুদ, কমলা ইত্যাদি।

ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ জবা ফুল বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করা যায়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল দেহের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং প্রাকৃতিকভাবে শারীরিক সুস্থতা প্রদান করে।

ঘন ঘন প্রস্রাব বন্ধ 
বেশি পরিমাণে পানি পান করে, আবার ঘন ঘন প্রস্রাব করে অথচ ডায়াবেটিস রোগী নয়, এই ক্ষেত্রে জবা গাছের ছালের রস এক কাপ পানির সঙ্গে পরিমাণমত চিনিসহ মিশিয়ে ৭ থেকে ৮ দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ব্রণ থেকে মুক্তি
আমাদের দেশে ব্রণ একটি সাধারণ সমস্যা। এজন্য প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন জবা ফুল অনেক উপকারী। কেননা প্রাকৃতিক অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি উপাদান এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই জবা ফুল ব্রণের সমস্যা প্রাকৃতিকভাবেই নির্মূল করে থাকে।

জবা। ছবি : সংগৃহীত

জবা। ছবি : সংগৃহীত

হজমে সহায়তা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে এই জবা ফুল খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং হজমক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে। জবা ফুল হজমেও সহায়তা করে।

চুল পড়া বন্ধ করে 
প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন এই জবা ফুল চুলে বিভিন্ন পুষ্টি প্রদান করে চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে উজ্জ্বল আর ঝলমলে করে তোলে। নারিকেল তেলের সঙ্গে জবা ফুল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল কালো হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা পায়। প্রাকৃতিকভাবেই এই ফুলটি রোদের তাপে চুল ধূসর হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।

অনিয়মিত মাসিকের স্রাব 
অনিয়মিত মাসিক অর্থাৎ দুই এক দিন একটু একটু হয়, আবার সময় হয়ে গিয়েছে আদৌ হয় না আবার এক মাস বন্ধ হয়ে থাকলো, এ ক্ষেত্রে দু তিনটি পঞ্চমুখী জবা ফুলের কুঁড়ি ও আধা গ্রাম দারুচিনি এক সঙ্গে বেটে সরবত করে ঋতুকালীন সময়ে দিনে একবার করে ৩ থেকে ৪ দিন খেলে মাসিক স্বাভাবিক হবে।

ধীর গতিতে বয়স বৃদ্ধি করে 
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল শুধু ক্যান্সার প্রতিরোধই করে না নিয়মিত এই জবা ফুল আহারে বয়স বাড়ার প্রবণতাকে ধীর গতি সম্পন্ন করে তুলতে সহয়তা করে। ফলে এই জবা ফুল একজনকে চিরযৌবন এনে দিতে পারে।

বমি করতে চাইলে 
যদি বমি করার প্রয়োজন হয় এক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচটি জবা ফুল নিয়ে বোঁটার সঙ্গে যে সবুজ ক্যালিকাস অংশ থাকে, এই অংশটাকে বাদ দিয়ে ফুল অংশটাকে পানি ও চিনি পরিমাণমত দিয়ে চটকে সরবত করে খেলে বমি হয়ে যাবে।

টাক পোকা রোগ  
চুল স্বাভাবিক আছে অথচ ফাঙ্গাসে কিছু জায়গা চুল উঠে টাক হয়ে গেছে এ অবস্থায় জবা ফুল বেটে ওখানে লাগালে কিছুদিনের মধ্যে চুল উঠে যাবে। দুইটি ফুল বেটে এক সপ্তাহ দিন যেকোনো সময় লাগাতে হবে এবং দুই-এক ঘণ্টা রাখতে হবে।

চোখ ওঠা 
চোখ ওঠা রোগে জবা ফুল বেটে চোখের ভেতরটা বাদ দিয়ে চোখের উপর ও নিচের পাতায় গোল করে লাগিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনের যে কোনো সময় এক-দুইটা ফুল বেটে ৭-৮ দিন লাগাতে হবে এবং এক ঘন্টা রাখতে হবে।

হাতের তালুর চামড়া ওঠা বন্ধে
শীতকালে হাতের তালুতে চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়। দিনে দুই থেকে তিনবার এক-দুইটা ফুল হাতের মধ্যেই ডলে ডলে লাগাতে হবে। লাগিয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করা যাবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)