সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মোজাহার হোসেন কান্টুসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

রঘুনাথ খাঁঃ

এক নারীকে চাকুরি দেওয়ার নাম করে ৫
লাখ ৮৮ হাজার টাকা প্রতারণার মামলায় আদালতের নির্দেশে টাকা
পরিশোধের শর্ত ভঙ্গ করায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাতক্ষীরা জজ
কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মোজাহার হোসেন কান্টু, তার
ভাই ও ভাইপোসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
করেছে আদালত। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার আমলী আদালত-২ এর বিচারক
ইয়াসমিন নাহার এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অন্য আসামীরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার
বাজারগ্রামের শেখ মোকাব্বার হোসেন, তার ভাইপো শেখ ময়নুল
হোসেন ওরফে রিন্টু শেখ, শ্যামনগরের দেবীপুরের এম রহমান বকুল,
একই উপজেলার বাদঘাটার মোছাঃ মারুফা খাতুন।
মামলার বিবরনে জানা যায়, সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে
নিয়ম বহির্ভুতভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আজিজ কো-অপরেটিভ
কমার্স এণ্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিড সোসাইটি লিমিটেড নামে
ব্যাংক খোলা হয়। ওই ব্যাংকে কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা
গ্রামের জিএম আব্দুল আজিজের মেয়ে শারমিন সুলতানাকে
কোষাধ্যক্ষ পদে চাকুরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার
বাজারগ্রামের শেখ ময়নুল হোসেন ওরফে রিন্টু জামানতের নামে
পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে । ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল ৫০০ টাকা
দিয়ে ওই ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে দেন রিণ্টু। ওই বছরের ৬ মে
শারমিনের বাড়িতে যেয়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে জমা দেওয়া
রসিদে ব্যবস্থাপক রিন্টুর চাচা শেখ মোকাব্বার হোসেন,
সেকেণ্ড অফিসার শ্যামনগরের দেবীপুরের এম রহমান বকুল, কোষাধ্যক্ষ
শ্যামনগরের বাদঘাটার মোছাঃ মারুফার সিল সহি মেরে টাকা জমা
দেখিয়ে রসিদ শারমিনের কাছে দেয়। ওই বছরের ২১ জুলাই ধার হিসেবে শারমিনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে ইসলামী ফাষ্ট
সিকিউরিটি ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার একটি চেক দেয়
রিন্টু।শারমিন পরে জানতে পারে তার পাঁচ লাখ টাকা ওই ব্যাংকে
জমা হয়নি। এমনকি ইসলামী ফাষ্ট সিকিউরিটি ব্যাংক
কালিগঞ্জ শাখায় রিন্টুর হিসাব নম্বরে কোন টাকা ছিল না।
বিষয়টি রিন্টু, তার চাচা শেখ মোকাব্বার, এম রহমান বকুল ও
মোছাঃ মারুফাকে বলার পর তারা টাকা দেওয়ার কথা বলে টালবাহানা
করায় বিষয়টি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন
শারমিন। পুলিশ সুপার বিষয়টি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য
গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। বিষয়টি
জানতে পেরে রিন্টু তার চাচা মোকাব্বার, বকুল ও মারুফাকে নিয়ে
রিন্টুর চাচা বিশিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা ও জজ কোর্টের পিপি
অ্যাড. মোজাহার হোসেন কান্টু ( কালিগঞ্জের যমুনার চরের
বাসিন্দা) কৌশলে শারমিনকে ডেকে মামলা করে কোন লাভ হবে না
এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে মাসিক ১২ হাজার টাকা কিস্তিতে সাড়ে
তিন লাখ টাকা পরিশোধ করে সমস্যা সমাধান করে দেবেন মর্মে
ভাইপো ও ভাইসহ চারজনের প্রতারণার ভার নিজের কাঁধে নিয়ে
২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর নিজের নামে তোলা তিনটি একশত টাকার
নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর শারমিনের
বাড়িতে বসে পরিশোধকারি হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন অ্যাড.
মোজাহার হোসেন কাণ্টু। পাওনাদার হিসেবে সাক্ষর করেন শারমিন
সুলতানা। অ্যাড. মোজাহার হোসেন কাণ্টু চুক্তি অনুযায়ি
প্রথম মাসে এক কিস্তির ১২ হাজার টাকা দেন। টালবাহানার
একপর্যায়ে ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর টাকা চাইলে টাকা দিতে
পারবেন না বলে বাড়ি থেকে শারমিন সুলতানাকে তাড়িয়ে দেন
কান্টু ওঅপর চার প্রতারক। নিরুপায় হয়ে শারমিন সুলতানা অ্যাড.
মোজাহার হোসেন কাণ্টুসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আমলী
আদালত-২ এ পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার টাকা প্রতারণার মামলা(সিআর – ৪৩০/২১ কালিঃ) করেন গত বছরের ১৭ নভেম্বর। বিচারক তদন্ত করে
প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে নির্দেশ
দেন। তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই এর উপপরিদর্শক সৈয়দ
রবিউল আলম পলাশ গত ২২ জানুয়ারি প্রতারণার সত্যতা আছে
মর্মে পাঁচ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আদালত ওই পাঁচ আসামীর বিরুদ্ধে শমন জারির নির্দেশ দেন। শমন
পেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি পরিচালনায় সদ্য গঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. মোজাহার হোসেন কাণ্টুসহ
পাঁচজন আসামী ২৯ মার্চ প্রথম কিস্তি ও পরে সাত
কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে গত ২৩ মার্চ
আদালত থেকে অন্তবর্তীকালিন জামিন পান আসামীর্।া
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. রফিকুল এলাহী
জানান, আদালতে প্রথম কিস্তীর টাকা পরিশোধ করার শর্ত ভঙ্গ
করেও গতকাল মঙ্গলবার আদালতে স্থায়ী জামিন আবেদন করেন
আসামীরা। শুনানীকালে আসামী ও তাদের আইনজীবী হাজির
ছিলেন না। আদালতের শর্ত ভঙ্গ করায় জেলে যেতে হবে এমন আশঙ্কায়
আসামীরা কাঠগড়ায় ওঠেননি। ফলে সঙ্গত কারণেরই আমলী আদালত-
২ এর বিচারক ইয়াসমিন নাহার আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি
পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। বৃহষ্পতিবার আসামীদের
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে কালিগঞ্জ
থানায় পাঠানো হয়েছে।
প্রায় ছয় লাখ টাকা প্রতারনার অভিযোগে শারমিন সুলতানার
দায়েরকৃত মামলায় কিস্তিতে টাকা পরিশোধের শর্তে অ্যাড.
মোজাহার হোসেন কাণ্টুসহ পাঁচ আসামীর জামিন পাওয়ার
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. রফিকুল
ইসলাম।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)