শ্যামনগরে চোখ জুড়ানো ফসলের মাঠ, তবুও পানির অভাবে কৃষকের কান্না

অনাথ মন্ডলঃ
শ্যামনগর উপজেলা মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে চোখ জুড়ানো ফসলের মাঠে কৃষকের কান্না। প্রায় ৬০/৭০ একর  বোরো ফসলি জমিতে  পানি দিতে না পারায় ফসল মারা যাচ্ছে হতাশ কৃষক। গত ১০ মার্চ  সিংহড়তলী গ্রাম থেকে পারিবারিক ব্যবহৃত পল্লী বিদ্যুতের ৩টি মিটার খুলে নিয়ে আসায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। যেখানে ৩৫ বছর ধরে লবণ পানি দিয়ে চিংড়ি চাষ করে আসছে। এবং চিংড়ি চাষ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী এবছর সেখানেই  ধান চাষ শুরু করেছে। চুনকুড়ি, সিংহড়তলী গ্রামের কৃষকগণ উদ্বুদ্ধ হয়ে বোরো ধান চাষ শুরু করেছে উল্লেখ্য এখানে ভূগর্ভস্থ মিষ্টি পানি থাকায় একই জমিতে  পানি তুলে ধান চাষ করছে ।
প্রায় ৬০/৭০ একর কৃষিজমিতে এলাকার কৃষকরা বোরো ধানের চাষ শুরু করে। সেখানে পারিবারিক মিটার ব্যবহার করে ধানে পানি দিতো।এখানে ৭০ জনের বেশি কৃষক ধান চাষ শুরু করেছে ঠিক সে সময় পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা এলাকা থেকে দেওয়ার অভিযোগে তিনটি মিটার খুলে নিয়ে চলে আসে । স্থানীয় নতুন কৃষকগণ বলেন আমাদের গ্রামে  আকবর মিস্ত্রী নামে একজন চিংড়ি চাষ করতো। তিনি ১২ লক্ষ টাকা ঋণ  হয়ে ঘের ছেড়ে দেওয়ায়  এখন আমরা ধান চাষের  শুরু করছি। বর্তমানে আমাদের পারিবারিক মিটার খুলে নিয়ে  যাওয়ায় ধানে পানি দিতে পারছি না।
কৃষক সুরত আলী বলেন আমি সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি আমাদের এখানে পানি মিষ্টি, সেই মিষ্টি পানি দিয়ে ধান চাষ করে এগিয়ে যাচ্ছি, ধানের অবস্থা ভালো  বি ২৮, ৬৭ ধান চাষ করেছি  এখন ধান বোলার মুখে কিন্তু আমাদের মিটার খুলে নিয়ে যাওয়ায় আমরা পানি দিতে পারছি না। ক্ষতিগ্রস্ত বর্তমানে কৃষক এমনি কথা বলেন আহমেদ সরদার। ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন এই এলাকাটি চিংড়ি চাষ করে ধ্বনি আরো ধনী হয়েছে গরীব আরো গরীব হয়েছে। সুন্দরবন নির্ভরশীল হয়েছে এবং মানুষ বিকল্প পেশার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে রিকশা চালাতে যেতে হচ্ছে আমরা চাই এলাকায় মাটির নিচেই মিষ্টি পানির উৎস আছে সেহেতু ধান চাষে মানুষ পূর্বের মত ফিরে আসুক। এলাকায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হোক। এলাকার মানুষ এলাকায় টিকে থাক।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান  অসীম কুমার মৃধা বলেন অভিযোগটি আমি শুনেছি এলাকার কৃষক গন আমাদের জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহড়তলী, যতীন্দ্র নগর যে মিষ্টি পানির উৎস গুলো আছে আগামীতে এখানে ধান চাষ করা হবে কৃষকদের সহযোগিতা থাকলে আমি সেচ মিটারের ব্যবস্থা করব ইতিমধ্যেই আমি পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি  এবছর এলাকার কৃষক গণ  ফসল ঘরে তোলার জন্য  যতটুকু সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে আমি অনুরোধ জানিয়েছি।
পল্লী বিদ্যুৎতের ডিজিএম  জোনাল অফিস শ্যামনগর মো: শহীদ লেহাজ আলী বলেন সিংহড়তলী গ্রামে আমরা যে পারিবারিক মিটার গুলো দিয়েছে শুধুমাত্র পরিবারে ব্যবহারের জন্য ।এখানে আলাদা প্রক্রিয়ায় সেচ মিটার নিতে হবে সেজন্য উপজেলা সেচ কমিটি উপজেলা নির্বাহি অফিসার মহোদয় এর সাথে কথা বলার বিষয় তিনি পরামর্শ দেন এবং আরো জানান কৃষকরা অঙ্গীকারপত্র দিয়ে মিটার লাগিয়ে নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে পানি তোলার বিকল্প ব্যবস্থা করে নিতে হবে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের মিটার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো: এনামুল ইসলাম বলেন এবছর সিংহড়তলীতে যে ধানের চাষ করা হয়েছে ,আমি আমার উপসহকারী কর্মকর্তা মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে যেভাবে কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারে  সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তিনি সাথে সাথে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আলাপ করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে এই এলাকার প্রভাবশালী চিংড়ি চাষী যারা গরিবের সামান্য কৃষি জমি দখল করে চিংড়ি চাষ করত তারা আজ বিভিন্ন কারণে ধান চাষে বিরোধিতা করছে। এই এলাকার কৃষকগণ কাজের সন্ধানে সুন্দরবনের বাঘের মুখে অথবা শহরে ইটভাটা শ্রম দিতে গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বছরের অধিকাংশ সময়ে কর্মসংস্থান হারিয়ে যাওয়া এই মানুষগুলোর বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে কৃষি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা। এলাকার মানুষ এলাকায় টিকে থাকতে হলে  কৃষিকাজর সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে ।কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)