ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামরিক অভিযান ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ বন্ধে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তৃতীয় দফা নিষ্ফল আলোচনার পর ইউক্রেনে শুক্রবার হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। রুশ সেনাদের বিশাল বহর ভাগ হয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ঘিরে অবস্থান নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। প্রথমবারের মতো নতুন তিনটি শহরেও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া এমন দেশ নয় যে কিছু অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করবে। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করেই রাশিয়া ঘুরে দাঁড়াবে। এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটে পশ্চিমারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রুশ হামলা জোরদার হওয়ার বিষয়টি ইউক্রেন কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক গতকাল এক টুইটে বলেছেন, বড় শহরগুলো আবারও ধ্বংসাত্মক হামলার মুখে পড়েছে।

মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানের স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমের আন্তোনভ বিমানবন্দরের কাছে অবস্থানরত রুশ সেনাবহর কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে আশপাশের ছোট শহরগুলো ঘিরে অবস্থান নিয়েছে। ৬৪ কিলোমিটার সড়কজুড়ে থাকা এই বহরে সাঁজোয়া যান, ট্যাংক ও কামান রয়েছে। কিয়েভের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে তাদের অবস্থান দেখা গেছে। বহরের আরেক অংশ কিয়েভের উত্তর দিকে রুবিয়াঙ্কা শহরের কাছে অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া উত্তর–পূর্ব দিক দিয়ে রুশ সেনাদের আরেকটি বহরও কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, কিয়েভকে চার দিক থেকে ঘিরে ফেলতে চাইছেন রুশ সেনারা।

রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধে ইউক্রেনের সেনারাও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো বলেছেন, রাজধানীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ চলে গেছে। রুশ সেনাদের প্রতিরোধে এখন প্রতিটি বাড়ি একেকটি দুর্গে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পাশাপাশি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মারিউপোলসহ কয়েকটি শহর সপ্তাহখানেক ধরে ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী। গতকাল নতুন করে উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের লুৎস্ক, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক এবং মধ্য-পূর্বাঞ্চলের নিপরো শহরে প্রথমবারের মতো হামলা হয়েছে।

লুৎস্কে একটি বিমানঘাঁটি ও বিমানের ইঞ্জিন তৈরির কারখানায় হামলা হয়। সেখানে দুই ইউক্রেনীয় সেনা নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন বলে আঞ্চলিক প্রশাসন জানিয়েছে। ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্কে সামরিক স্থাপনায় হামলার কথা জানিয়েছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে বিমান থেকে বিরতিহীনভাবে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। অবরুদ্ধ শহরটিতে এক সপ্তাহ কাটিয়েছেন বিবিসির সাংবাদিক কুয়েনটিন সমারভিলে ও ক্যামেরাম্যান ড্যারেন কনওয়ে। তারা জানান, প্রতি রাতে শহরে রুশ বিমান থেকে বোমা ফেলার পাশাপাশি গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এতে অনেকের প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর শহরের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে থাকা ইউক্রেনের সেনারা প্রায়ই রুশ ট্যাংকবহরের হামলার শিকার হচ্ছেন।

ইউক্রেনের পার্লামেন্ট সদস্য ইন্না সোভসুন গতকাল টুইটে লিখেছেন, ইউক্রেনে আর কোনো নিরাপদ শহর নেই। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে আমরা শুধু দিনের বেলায় বড়জোর তিন ঘণ্টা ঘুমাই। সন্তানদের জীবন নিয়ে আমরা আতঙ্কিত, কিন্তু তেমন কিছু করতে পারছি না। আমরা আত্মসমর্পণ করতে পারি না। আমরা তাদের হাতে দেশ তুলে দিতে পারি না। আমাদের আসলে লড়াই করা ছাড়া উপায় নেই।’

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা হামলা বন্ধের জন্য যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন ইউক্রেনের পার্লামেন্টের এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বের কাছে করজোড়ে বলছি, দয়া করে হস্তক্ষেপ করুন। দয়া করে তাদের ঠেকান। সবাইকে হত্যা এবং পুরো দেশকে ধ্বংস করতে দেবেন না।’
মানবিক সংকট

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২৫ লাখে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)