গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি রাশিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার কারণে পশ্চিমা দেশগুলো যদি রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তবে জার্মানিতে গ্যাস পাইপ লাইনের প্রধান সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে মস্কো। সোমবার রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা আর পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত একের পর এক নিষেধাজ্ঞা যেন একসঙ্গেই চলছে। কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত মস্কোর পিছু হটার কোনো লক্ষণ নেই। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা করার খবর সামনে আসে। আর এরপরই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। অপরিশোধিত তেলের দাম সোমবার এশিয়ার বাজারে ব্যারেল প্রতি ১৩৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তেলের দাম এই পর্যায়ে উঠেছিল।

পরে সোমবার রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, রাশিয়ার তেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বিশ্ববাজারে বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে। এমনকি বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৩০০ মার্কিন ডলারেরও দ্বিগুণ হতে পারে।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র মিত্র দেশগুলোর সাথে আলোচনা করলেও প্রথমেই এই ধরনের যেকোনো পরিকল্পনার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। সোমবারই তাদের এই মনোভাব জানিয়ে দেশ দু’টি।

বিবিসি বলছে, ইউরোপেীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং মোট তেলের ৩০ শতাংশ রাশিয়া থেকে পেয়ে থাকে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোনো কারণে এই তেল-গ্যাসের সরবরাহ ব্যাহত হলে ইউরোপীয় দেশগুলোর সামনে এর কোনো সহজ বিকল্প নেই।

সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী নোভাক বলেন, সরবরাহ ব্যাহত হলে ইউরোপীয় বাজারে দ্রুত রাশিয়ার তেলের বিকল্প খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।

আলেক্সান্ডার নোভাকের ভাষায়, এটি (রাশিয়ার তেলের বিকল্প) খুঁজে পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এবং সেটি ইউরোপীয় ক্রেতাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুলও হবে। আর নিষেধাজ্ঞার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর নর্ড স্ট্রিম ২ নামে রাশিয়া-জার্মানির মধ্যে সংযোগকারী একটি নতুন গ্যাস পাইপলাইনের অনুমোদন স্থগিত করেছিল বার্লিন। জার্মানির সেই সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে এর প্রতিশোধ হিসেবে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে মস্কো।

আলেক্সান্ডার নোভাকের দাবি, (চলমান) নর্ড স্ট্রিম ১ গ্যাস পাইপলাইনের মধ্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহের ওপর একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধিকার আমাদের রয়েছে।

উল্লেখ্য, সারা বিশ্বের মধ্যে রাশিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষে এবং অপরিশোধিত তেল উৎপন্নে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। আর তাই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার কারণে রাশিয়ার তেলের ওপর পশ্চিমা বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সেটি রুশ অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)