গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক
অনলাইন ডেস্ক :
লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে নিট ও গার্মেন্ট শিল্প।
তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে (২০০৯-১৯) চার দফায় গ্যাসের দাম ৩৬১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের আশ্বাসে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়, প্রায় ৬৬ শতাংশ। কিছু দিন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও গত ৩ মাস যাবৎ কারখানায় গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। ইভিসি মিটার না থাকায় অনেক কারখানা শুধু বাতাসের দাম পরিশোধ করছে। এক হাজার ২০০ ইভিসি মিটার আমদানি করা হলেও অজ্ঞাত কারণে সেগুলো কারখানায় স্থাপন করা হচ্ছে না।
গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে পুরো রপ্তানি খাত প্রতিযোগী সক্ষমতা হারাবে উল্লেখ করে বলেন, এখন এক কেজি সুতা উৎপাদনে খরচ হয় এক ডলার ৫ সেন্ট। এর মধ্যে ২৫ সেন্ট গ্যাসের খরচ। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে উৎপাদন খরচ আরও ২৫ সেন্ট বাড়বে। সে অনুযায়ী সুতার দামও বাড়বে। এতে নিট শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিট শিল্পের পুরো কাপড়ই দেশের বস্ত্র খাত জোগান দিয়ে থাকে। একই সমস্যা পড়বে গার্মেন্ট খাত। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারও আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সমালোচনা করে খোকন বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির স্ক্রিপ্ট রেডি থাকে। শুনানিতে কে কী বলল সেটা গুরুত্ব পায় না। সর্বশেষ ২০১৯ সালের শুনানিতে ব্যবসায়ীদের যুক্তিতর্ক আমলে নেওয়ার পরও অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ানো হয়েছে।
আক্ষেপ প্রকাশ করে খোকন বলেন, করোনায় কারখানা বন্ধ থাকলেও তিতাসকে শিল্প মালিকদের সারচার্জ দিতে হয়েছে। যেখানে অন্য সব খাত ব্যবসায়ীদের সহায়তায় চেষ্টা করেছে। গত দুই বছরে তিনবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে যিনি আছেন, তিনি ফোন ধরছেন না। তাহলে ব্যবসায়ীরা সমস্যার কথা জানাবে কিভাবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম কমতে শুরু করেছে। তা ছাড়া তিতাস লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে কেন? প্রতি বছরই তিতাস শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ট দিচ্ছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে এত মুনাফা করতে হবে কেন? মুনাফার অর্থ দিয়ে আপদকালীন সময়ে ভর্তুকি হিসাবে এলএনজি আমদানি করা যেতে পারে। এ ছাড়াও গ্যাস সংকট সমাধানের আরও অনেক পথ খোলা আছে। বিদ্যমান কূপগুলোতে গ্যাসের স্তর নিচে নেমে গেছে। সেগুলোতে কম্প্রেসার স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার বন্ধ এবং সার কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাস টেক্সটাইল মিলে দেওয়া যেতে পারে।
জ্বালানি নীতি প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে খোকন বলেন, শিল্পের স্বার্থে ১০ বছর মেয়াদি জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করা উচিত। এতে কত বছর পরপর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কত শতাংশ বাড়ানো হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এর ভিত্তিতে শিল্প মালিকরা বিনিয়োগ পরিকল্পনা করবেন। এখন গ্যাস-বিদ্যুতের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির ভয়ে শিল্প মালিকরা নতুন পরিকল্পনা করতে ভয় পাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইউটিলিটি সেবা চালু হয়নি। আবার সাধারণ জমিতেও শিল্প স্থাপনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে ব্যবসায়ীরা কিভাবে নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নেবে।
বিটিএমএ’র ৫ দাবি : গ্যাসের সমস্যা সমাধানে পাঁচটি দাবি জানিয়েছে বিটিএমএ। এগুলো হচ্ছে-১. ক্যাপটিভ পাওয়ারে চলা মিলগুলোতে ইভিসি মিটার স্থাপন ও তার ভিত্তিতে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা। ২. সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাস টেক্সটাইল মিলগুলোতে সরবরাহের ব্যবস্থা করা। ৩. তিতাসের মুনাফার একটি অংশ এলএনজি আমদানিতে ব্যয়ের মাধ্যমে এলএনজির মূল্যকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা। ৪. গ্যাসসংশ্লিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এ ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তার গাফিলতিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে কোনো মিলের বিরুদ্ধে গ্যাসের অপব্যবহার প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫. যেসব মিলের গ্যাস সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে সেগুলোতে দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।