ঠিক মত পড়াশুনা করতে পারছি না ! শ্যামনগরে নির্বাচনী মাইকের জ্বালায় অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা

আশিকুজ্জামান লিমন:
শ্যামনগরে আগামী ইউপি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা মাইকের জ্বালায় অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা৷  সামনে পরিক্ষা থাকলেও  ঠিক মত পড়তে পারছি না ৷ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে উচ্চ শব্দে মাইকিং করে প্রার্থীদের প্রচার জনগণের কান ঝালাপালা করে তোলেছে। মাইকিংয়ের দুঃসহ এ যন্ত্রণায় মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে ৷ মানুষের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সাধারণ মানুষ শতভাগ মাইকিংয়ের বিপক্ষে।
মাইকে নির্বাচনী প্রচারে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচনী আচরণবিধি, ১৯৯৬-এ বলা আছে, নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার দেশী কাগজে সাদাকালো রঙের হতে হবে। আয়তন কোনো অবস্থায় দৈর্ঘ্যে ২২ ও প্রস্থে ১৮ ইঞ্চির বেশি হতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচার হিসেবে সব ধরনের দেয়াল লিখন থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।’
নির্বাচনী প্রচারে মাইকিংয়ের বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় প্রার্থীরা অহর্নিশি উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ের মাধ্যমে নিজের প্রচারে কর্মীদের ব্যবহার করছেন। নির্বাচনের সময় মাইক ব্যবহারের আধিক্য, শব্দদূষণে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে । তাই নির্বাচনী প্রচারে মাইকিং নিষিদ্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে সকলের অভিমত৷
নির্বাচনের সময় নির্বাচনী এলাকায় সর্বত্র শব্দদূষণ যেন শব্দ সন্ত্রাসের রূপ নিয়েছে ৷  অথচ একটি নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত মাইকের উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণে কোনো বোধদয় নেই। উপরন্তু নির্বাচনী প্রচারকালে মাইকের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । এক অসম প্রতিযোগিতায় চলে মাইকিং। এটি বন্ধে জনমত গঠন যেমন জরুরি, তেমনি আইন করারও প্রয়োজন রয়েছে। কোনো সুস্থ ধারার নেতাকর্মী কখনো জনগণের অসুবিধা হয়, পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজে লিপ্ত থেকে মানুষের সেবক হতে পারেন বলে মনে করছেন এলকাবাসীরা । কথায় আছে, ‘ভালো পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে হয় না’। এ বোধ থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, যারা পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে জনগণের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন, তাদের গোড়ায় গণ্ডগোল রয়েছে।
একটি সময় নির্বাচনী প্রচারে মাইকে শুধু ভোট প্রার্থনা করা হতো। মিটিং-মিছিলে ব্যবহৃত হতো। দল বেঁধে রাত-বিরাতে সবাই মিছিল করতেন। এখন এর বিকল্প হিসেবে গানের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চলমান রয়েছে। আর মূলত এখানেই প্রার্থীরা স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল । উচ্চ শব্দ, উৎকট বাজনা ও বিকট শব্দের গান ভোটারদের যত না আকৃষ্ট করছে, তার চেয়ে বেশি প্রার্থীর প্রতি বিরক্তির ভাব ফুটে ওঠে। কিন্তু মাইকে এই উদ্ভট প্রচারণা থামাতে বলবে কে?
বর্তমানে মাইকে নির্বাচনী প্রচারের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় গানের সুরে প্যারোডি। এসব প্যারোডি গানের আওয়াজ অপরীক্ষিত, বাদ্যযন্ত্রের অপরীক্ষিত ব্যবহার, উচ্চ শব্দে বাজানোয় মানুষজনের কান ঝালাপাল করে তুলেছে ৷   বিশেষ করে, শিশু ও বয়স্কদের জন্য বেশি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল। বিপরীতে মাইকে দ্বিগুণ শব্দ সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে মাইকের উচ্চমাত্রার শব্দের ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পরিবেশ অধিদফতরের সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে, শব্দদূষণে ইতোমধ্যে ১২ শতাংশ মানুষের প্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে।
শব্দদূষণ রোধে ২০০৬ সালে শব্দদূষণ বিধিমালা প্রণয়ন করে সরকার। কিন্তু এর প্রয়োগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিধি অনুযায়ী, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ের সামনে এবং আবাসিক এলাকায় হর্ন বাজানো, মাইকিং করা, সেই সাথে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে জোরে শব্দ করা আইনত দণ্ডনীয়। তবে এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। আইনের প্রয়োগ থাকলে উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে নির্বাচনী প্রচার করতে পারতেন না কেউ। তবে ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভার্চুয়াল জগতে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে শব্দদূষণ কমিয়ে আনতে পারেন প্রার্থীরা। এটি হতে পারে নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রচার ৷
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা করার কথা থাকলেও তারা ব্যক্তিগত ভাবে মানছেন না ৷ সবাইকে অবগত সহ লিখিত ভাবে জানানো আছে ৷
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)