কালিগঞ্জে নারী নির্যাতন নির্মূল-করণে মানববন্ধন ও সন্মাননা প্রদান কর্মসূচি পালন
এস.কে ফিরোজ আহম্মেদ :
“নারী নির্যাতন বন্ধ করি, কমলা রঙের বিশ্ব গড়ি।” স্লোগানকে সামনে রেখে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার আয়োজনে এক র্যালী, মানব-বন্ধন, আলোচনা সভা ও শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সন্মাননা প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আজ ০৯-১২-২০২১ তারিখ বৃহস্পতিবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার রবিউল ইসলাম মহোদয়ের সভাপতিত্বে সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২১ এবং নারী নির্যাতন নির্মূল করনে ১৬ দিন ব্যাপি(২৫শে নভেম্বরে -১০ ডিসেম্বর) প্রচারাভিযান ২০২১ উপলক্ষে মানববন্ধন, র্যালী, আলোচনা সভা ও শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সন্মাননা প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়। উক্ত কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন কালিগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অর্ণা চক্রবর্তী, উপজেলা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস বাচ্চু, ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির হাবিবুর রহমান এ্যাসোসিয়েট অফিসার (সেলপ) প্রমুখ।
কর্মসূচিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার পাঁচ জন শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সন্মাননা প্রদান করা হয়।এসময় অতিথিবৃন্দ শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের হাতে সন্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন দমনে কঠোর। তারই ধারাবাহিকতায় কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও সর্বদা সচেষ্ট ও সজাগ। উপজেলার নির্যাতিত নারীদের সামাজিক সকল সুবিধা নিশ্চিত করা সহ সকল প্রকার আইনি সহায়তা করা হবে। এসময় বক্তারা জাতিসংঘের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন , প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নারী তাদের জীবনে নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারি, মানবিক সংকট, সংঘাত ও জলবায়ু বিপর্যয়সহ সংকটের সময় এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত ২০১১ সালের জরিপ মতে, শতকরা ৮৭ ভাগ নারী স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।
এসকল সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দিবসটি পালনের ইতিহাস সম্পর্কে বক্তারা বলেন, এই দিবস পালনের পেছনে রয়েছে এক হৃদয়-স্পর্শী ঘটনা। ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর লাতিন আমেরিকার দেশ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন করতে গেলে প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাবেল নামের তিন বোনকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের স্মরণে ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। তাছাড়া এই কর্মসূচির প্রতিপাদ্য বাস্তবায়ন করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদযাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে এই দিবস ও পক্ষ পালন করছে।
এই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপনে নানা কর্মসূচি নেয়। এ বছরও এ উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নারী নির্যাতন বন্ধ ও সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।