আবরার হত্যা মামলার রায় ২৮ নভেম্বর

নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় রায়ের জন্য আগামী ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ এ দিন ধার্য করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূইয়া বিষয়টি জানিয়েছেন।

এদিন কারাগারে আটক ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের উপস্থিতিতে আসামি মো. মুজাহিদুর রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার মোট ২৫ আসামির মধ্যে ২৫  জনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলো। এরপর আদালত রায়ের জন্য আগামী ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

এদিকে গত ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে পলাতক তিন আসামিসহ ২৫ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে দাবি করেন। এরপর গত ২৫ অক্টোবর থেকে এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ পড়ে শোনান।

এ সময় বিচারক তাদের প্রশ্ন করেন, আপনারা দোষী না নির্দোষ? উত্তরে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। এরপর আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের বুধবার দিন ধার্য করেন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ পুনরায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আবেদন করেন। এরপর আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আসামিদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করেন।

গত ৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরারের বাবা বরকতুল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর গত ২৪ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান মামলার শেষ সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।

গত ৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরার মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ সময় আদালত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৪ মার্চ দিন ধার্য করেন। এ মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে ২৫ আসামিকে অভিযুক্ত করেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ হত্যা মামলা করেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল,  সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ। আসামিদের মধ্যে তিনজন পলাতক। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

এছাড়া তাদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

মামলার অভিযোগপত্রে থেকে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে ৮ জন আদালতে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৩ জন ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এছাড়া সাক্ষীদের মধ্য থেকে দুই জন ১৬৪ ধারায় এবং ৩০ জন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষীদের মধ্যে বুয়েটের শিক্ষক, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট, চিকিৎসক এবং নিরাপত্তাকর্মীও আছেন।

এদিকে আবরারের রক্তমাখা জামাকাপড়, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, ফরেনসিক প্রতিবেদন, ১৬৪ ও ১৬১ ধারায় দেয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপের কথোপথন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, আসামিদের কল রেকর্ড ও মশারি টানানোর রড-স্টাম্প আলমত হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)