দেবহাটার খলিশাখালিতে দখলকৃত জমির মালিকানা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিনিধি:
সম্প্রতি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালিতে ভূমিহীনদের ব্যানারে দখলকৃত সহস্রাধিক বিঘা বিলান জমি ও মৎস্য ঘেরের মালিকানা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় দেবহাটা প্রেসক্লাব হলরুমে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আইডিয়াল’র পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, খলিশাখালিতে আমাদের রেকর্ডীয় ও লীজকৃত ৩০টি খন্ডে বিভক্ত বিস্তৃর্ণ জমি স্থানীয় কিছু ভূমিহীন নামধারী এবং জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৭ শতাধিক সন্ত্রাসী অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শনিবার ভোররাতে আমাদের লীজগ্রহীতা ও মৎস্য ঘেরের কর্মচারীদের মারধর করে জোরপূর্বক দখল করে নেয়। এসময় তারা উক্ত বিস্তৃর্ণ মৎস্য ঘের থেকে কয়েক কোটি টাকার মাছ লুটপাট এবং ঘের গুলোব বাসাবাড়ি ভাংচুর করে আরো প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে। দখলকালীন সময়ে আমারা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার বরাত দিয়ে আদালতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহনের পরামর্শ দেয়া হয়। পরে নিরুপায় হয়ে পরদিন আমরা সাতক্ষীরার আদালতে মামলা দায়ের করি এবং মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
তিনি আরো বলেন, ১৮১২ নং সিএস খতিয়ানে ১১১৭৫ নং দাগসহ ২৭টি দাগে উল্লেখিত ৪৩৯.২০ একর (১৩’শ ২০ বিঘা) জমির মালিক চন্ডীচরণ ঘোষ। সেখান থেকে বিভিন্ন কোবলা দলিল, পাট্টা দলিল ও কোর্টের রায় মোতাবেক এসএ ২৯৬২ থেকে ২৯৮০ খতিয়ানে রেকর্ড প্রকাশের পূর্বে কলিকাতা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ০৮/০৩/৫৩ তারিখে ৬৯৪ নং বিনিময় দলিল মূলে দেবহাটা থানার তেজেন্দ্রনাথ চৌধুরীর পুত্র সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরীরর সাথে বিনিময় করেন। এসএ রেকর্ড পরবর্তী উক্ত বিনিময় দলিলের গ্রহীতা শিমুলিয়া গ্রামের কাজী আব্দুল মালেক এর ওয়ারেশগণ সহ ক্রমিক হস্তান্তর সূত্রে অপরাপর মালিকগণ বর্তমানে বিএস রেকর্ড প্রাপ্ত হন এবং তৎপরবর্তী প্রিন্ট পর্চাসহ প্রায় ৩০০ মালিক এর নামে প্রায় ২০০টি পর্চায় উক্ত সমুদয় সম্পত্তি গেজেট প্রকাশিত হয় এবং তন্মধ্যে অনেক মালিকগন হালসন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করেছেন। উল্লেখ্য যে, উক্ত সম্পত্তি ভোগদখল করার অসৎ উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে জনৈক জোনাব আলী ১৮/২০১০ নং মামলাটি দায়ের করেন। উক্ত মামলার স্বত্বের কোন বিচারিক কার্যক্রম শুরু না করে বাদীপক্ষ আদালতে প্রভাব বিস্তার করে নিজস্ব ব্যাক্তিবর্গের নামে রিসিভার গ্রহন করে। তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আমাদের বিবাদী পক্ষের দায়ের রিভিশন মামলা নং ২১৬/১২ এবং ২৫৬৮/১৬ এর আদেশে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্ট রিসিভার বিষয়ক বিচার কার্য সম্পন্ন করেন। সেখানে আদেশ হয় যে, মূল মামলা ১৮/২০১০ খারিজ করা হল এবং নিন্ম আদালত কর্তৃক রিসিভার বাতিল করা হল। তদপ্রেক্ষিতে আমরা অর্থাৎ বিবাদী পক্ষ হাইকোর্টের আদেশ জেলা যুগ্ম আদালতে দাখিল করলে শুনানী অন্তে আদালত মুল মামলা খারিজ এবং রিসিভার বাতিল করে দেন। পরবর্তীতে বাদীপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপীল করলে আদেশ হয় যে, জেলা প্রশাসক উক্ত সম্পত্তির স্বত্ব প্রচারের জন্য নিন্ম আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মামলা চলাকালীন সময়ে উক্ত সম্পত্তি জেলা প্রশাসক আইনানুযায়ী নিয়ন্ত্রনে রাখবেন। যেহেতু উক্ত জমির সিএস রেকর্ড থেকে এসএ ও বিএস রেকর্ডের প্রিন্ট পর্চা মালিকদের নামে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, সেহেতু সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ  সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ মামলা দায়ের করেন। যার নং ১৬৮/২১। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
ডা. নজরুল ইসলাম আরো বলেন, যে সম্পত্তি ১৯৫৩ সাল থেকে সিএস, এসএ এবং প্রিন্ট পর্চা সহ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে এবং ৭০ বছর যাবত বিবাদী পক্ষ ভোগদখলে আছে, সেই সম্পত্তিতে অন্যপক্ষের যাওয়ার কোন সুযোগই নেই। অথচ উক্ত সম্পত্তি রাতের আঁধারে জোরপূর্বক দখল প্রতিরাতে সেখান থেকে মাছ লুট করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত ও প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দিতে জেলা প্রশাসক সহ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনকালে জমির মালিক ও লীজ গ্রহীতাদের পক্ষে আলহাজ্ব আনছার আলীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)