জেলা জুড়ে আতঙ্ক: দুর্বৃত্তদের টার্গেট মন্দির ও হিন্দু পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার:
সাতক্ষীরায় তিনটি মন্দিরের মূর্তিসহ সংখ্যালঘুর পরিবারে সর্বস্ব
লুট হওয়ার ঘটনায় এক মাস অতিবাহিত হলেও কোন মোটিভ উদ্ধার
করতে পারেনি পুলিশ। এসব ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলা হলেও চুরি হওয়া
মুর্তি ও মালামাল উদ্ধার না হওয়ায় চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর আতঙ্কের
মধ্যে রয়েছেন এ জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। আইন
প্রয়োগকারী সংস্থার কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নাথাকায় প্রতিনিয়ত
লাঞ্চিত ও প্রাণ নাশের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে সংখ্যালঘু অনেক
পরিবার। আর এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ জেলার আইন শৃঙ্খলা
পরিস্থিতির চরম অবনতি দেখা দেবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ৬জুলাই রাতে সদর উপজেলার
গোদাঘাটা মহাশ্মশান মন্দিরে তালা ভেঙ্গে মূর্তি,গহনা ও নগদ
অর্থ চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ৮জুলাই সন্ধ্যায় আশাশুনির
কাপসন্ডা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী মন্দিরে সুকৌশলে তালা খুলে কৃষ্ণ ও
নারায়ণ ঠাকুরের মূর্তি চুরি করে দুর্বৃত্তরা । একই দিন রাতে
কলারোয়া উপজেলার মদন মোহন মন্দিরে তালা ভেঙ্গে রাধাকৃষ্ণের
মূর্তি,লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণ ও রৌপ্য, নগদ টাকাসহ পূজার
সামগ্রী চুরি করে দুর্বৃত্তরা । এছাড়া গত ২৮ জুলাই রাতে
আশাশুনি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক অসীম বরণ চক্রবর্তী
সাতক্ষীরার বারুইপাড়া বাড়িতে চেতনা নাশক ঔষধ স্প্রে করে নগদ
টাকা,আট ভরি সোন,দুটি মোবাইল সেটসহ মুল্যবান জিনিষ পত্র
নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা । সবশেষ গত ২আগষ্ট শ্যামনগর উপজেলা
করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ নেতার পুত্র
ফাহিম হোসেন কর্তৃক স্বেচ্ছাসেবক গোপাল সরকারকে মোবাইল
ফোনে প্রাণ নাশের হুকীর দেয়। যেটি শ্যামনগর থানায় অভিযোগ
করাসহ সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলেও পুলিশ
কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। ফলে আতংকের মধ্যে রয়েছে পরিবারটি।
কাপসন্ডা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মেধস
ব্যানার্জী জানান, আমাদের মন্দির থেকে কৃষ্ণ ও রানায়ন ঠাকুরের
মূর্তি চুরির ঘটনা এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কোন ক্লু বা মোটিভ উদ্ধার হয়নি আজও। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক
হলে জেলা শহর সহ দেশে বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি উদ্ধার ও দোষিদের
গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হবে। জেলা
প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বরাবর আবেদন করা হবে।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিছুর রহিম জানান,এই পর্যন্ত
জেলায় বিভিন্ন মন্দিরে মূর্তি, মালামাল চুরি ও লুটপাট হয়েছে।
এমনকি সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় কোনটির দৃশ্যমান বিচার
না হওয়ায় ক্রমান্বয় দুর্বত্তরা অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। তিনি
অবিলম্বে মন্দিরে চুরি হওয়া বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি, মালামাল
উদ্ধার এবং দোষীদের দ্রæত চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি
জানান।
জেলা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঘুনাথ গুহ বলেন, সাতক্ষীরা
জেলার তিনটি মন্দিরে ঠাকুরের মূর্তিসহ মালামাল চুরি হওয়ার
ঘটনার পর আমরা প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি।
প্রশাসন বিষয়টি নজর দারিতে রেখেছেন।
বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব বিজয় কৃষ্ণ
ভট্টাচার্য বলেন, সাতক্ষীরা কাপসন্ডা জগদ্ধাত্রী মন্দিরসহ বিভিন্ন
থেকে মূর্তি চুরি হওয়া খুব দূ:খজনক ঘটনা। আমি ইতি মধ্যে
পুলিশ সদর দপ্তরে কয়েক জন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। এবং
স্থানীয় প্রশাসনকে দোষীদের দ্রæত চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও শাস্তির
দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয় সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
খবরটি শুনার সাথে সাথে স্ব স্ব থানার ওসির সাথে কথা বলেছি। সকল
মন্দিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলেছি। দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত
করে শাস্তির দেওয়া হবে তিনি জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)