রাতের অন্ধকারে পেঁচা ভালো দেখতে পায় যে কারণে
ফিচার ডেস্ক:
নিশাচর প্রাণী বা রাতের পাখির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেঁচা। নিঝুম রাতে পেঁচার ডাক যে কার মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। তবে দিনের আলোতে না বেরিয়ে কেন রাতের অন্ধকারে পেঁচার ঘুম ভাঙে জানেন কি? অনেকে তো পেঁচাকে ভূতুড়ে পাখিও বলে থাকেন। গম্ভীর মুখে অদ্ভুত ডাকে নিশি রাতকে একেবারে ভুতুরে করে তোলে।
রাতের আঁধারে সব পশুপাখি যখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন থাকে। তখন জেগে থাকে পেঁচার জ্বলজ্বলে চোখ। রাতের বেলায় পেঁচার রক্ত হিম করা ডাক শুনে ভয় পেয়ে যায় সাহসী মানুষেরাও। আর তাই বুঝি সে ভুতুড়ে পাখি।
পেঁচার বিষয়ে মানুষের মনে রয়েছে নানা কৌতূহল। এই যেমন পেঁচা অন্ধকারে দেখে কী করে! দিনের আলোতেও পেঁচা দেখতে পায় কি-না। নিশ্চয়ই তোমাদের মনেও রয়েছে এই একই প্রশ্ন। পেঁচা তো নিশ্চয় দেখেছেন। ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, পেঁচার চোখ দু’টো অন্যান্য প্রাণীর চোখের চেয়ে অনেক বড়। ফলে পেঁচার চোখে মানুষের চোখের তুলনায় অনেক বেশি আলো প্রবেশ করে। আমাদের চোখের ভেতরে আলো প্রবেশের পর তা চোখের পেছনদিকে রেটিনায় পৌঁছে সামনের বস্তুর ছবি তৈরি করে। আর সেজন্যই আমরা দেখতে পাই।
পেঁচার চোখের ভেতরে যেহেতু আমাদের চোখের চেয়ে বেশি আলো প্রবেশ করে, তাই পেঁচার জন্য দেখাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। এছাড়া পেঁচার চোখে রড সেল নামে এক ধরনের বিশেষ কোষ থাকে। আর এই কোষ পেঁচাকে রাতের অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় পেঁচার চোখে রড সেলের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই এদের জন্য অন্ধকারে দেখা খুব সহজ।
পেঁচার চোখের পেছনদিকে ট্যাপেটাম লুকিডাম নামে এক ধরনের কাঠামো থাকে। চোখে আলো পড়ার পর তা রড সেলে লেগে ট্যাপেটাম লুকিডামে পড়ে এবং সবশেষে আবার রড সেলে আঘাত করে। ফলে পেঁচা একবার নয় বরং দুইবার আলো দেখতে পায়। সেজন্য রাতটাও ওদের কাছে দিনের মতোই আলোকিত হয়ে যায়।
আমাদের অনেকেরই ধারণা পেঁচা দিনে চোখে দেখতে পায় না। আর তাই সারাদিন ঘুমায় আর রাতে জেগে থাকে। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। পেঁচা দিনের আলোতেও দেখতে পায়। তবে তীব্র আলোয় ওদের চোখের পিউপিল আমাদের চেয়ে কম সঙ্কুচিত হয়। তাই তীব্র আলো ওরা সহ্য করতে পারে না। এজন্য দিনের আলোয় ওরা চোখের পাতা অর্ধেক বন্ধ রাখে।
পেঁচা সাধারণত গাছের কোঠর এবং পাহাড়ের গুহায় বাস করে। সারাদিন বিশ্রাম নিয়ে রাতে শিকার ধরতে বের হয়। এরা ইঁদুর, ব্যাং, পোকামাকড় ইত্যাদি প্রাণী শিকার করে খায়। কাছের জিনিস খুব ভালোভাবে দেখতে না পেলেও এদের ঠোঁট ও নখের কাছে যে বিশেষ ধরনের পালক আছে তা দিয়ে কী শিকার করল তা বুঝতে পারে। পেঁচার শ্রবণশক্তি খুব প্রখর। ইঁদুরের শস্যদানা চিবানোর শব্দও সে শুনতে পায় এবং তা অনুসরণ করে।