সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে সংখ্যালঘুর জমি জবরদখলের চেষ্টা, আহত-৪

রঘুনাথ খাঁঃ

অতিরিক্ত জেলা ম্যােিজষ্ট্রট আদালতের রায়
বিপক্ষে যাওয়ায় জামায়াত শিবিরের সক্রিয় কর্মীরা সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ছয় বিঘা জমি জবরদখলের চেষ্টা করেছে। বাধা দেওয়ায় দু’ নারীসহ চারজনকে মারপিট করা হয়েছে।

আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ঘটনা
ঘটে।বিষ্ণুপুর গ্রামের সুনীল সরদারের ছেলে সঞ্জয় সরদার বলেন,সাবেক রেকডীয় মালিক পো ঠাকুর দাদা অযোধা সরদারের কাছ থেকে বিষ্ণুপুর মৌজার ১০৭৭ দাগের এক একর ৯২ শতক, সাবেক ৭৮৭ ও ১০৭৩ দাগে যথাক্রমে ২৩ ও ১৬ শতক জমি মোট দু’ একর ৩১ শতক জমি তারা বংশপরম্পরায় ভোগদখলীকার রয়েছেন। ওই জমি এসএ
খতিয়ানে খাস দেখানো হয়। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের আছিরদ্দিন সরদার ওই জমি ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে ২৯৬৭ নং সালে বন্দোবস্ত দলিল করে নেন বলে স¤প্রতি তারা জানতে পারেন।
১৯৯৫ সালে ওই জমি শ্যামনগরের ভেটখালির প্রয়াত শেখ আজিয়ার রহমানের ছেলে বর্তমানে বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা আকরাম হোসেন
মৌখিকভাবে ওই জমি তাকে দান করেছে মর্মে চলতি মাপ জরিপে রেকর্ড করিয়ে নেন। যদিও দখল স্বত্ব হিসেবে তার নামে রেকর্ড রয়েছে। ওই জমি আকরাম হোসেনের পক্ষে তার ভাই জামায়াতের সক্রিয় কর্মী আবু আসলাম লাল্টু দখল করার চেষ্টা করলে তিনি বাদি হয়ে বাংলাদেশ সরকার, আকরাম হোসেনসহ ৩২জনকে বিবাদী করে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে দেঃ ৫১/১৭ নং মামলা করেন।

এরপরও আবু আসলাম ও আকরাম ওই জমি জবরদখল করার চেষ্টা করলে তিনি
বাদি হয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আকরাম হোসেন ও আবু আসলাম লাল্টুর বিরুদ্ধে মামলা(পিটিশান ১৩২৪/১৮ কালি) করলে জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন তদন্ত করে শত
বছর বাদির দখল উলে-খ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আদালতে হাজির হয়ে আবু আসলাম লাল্টু ও আকরাম হোসেন দোলন বলেন যে ওই জমি মামাত দুলাভাই আছিরউদ্দিন তাদেরকে মৌখিকভাবে জমি দিয়েছেন। সে অনুযায়ি তারা রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। চলতি বছরের ৩ নভেম্বর আদালতের রায় তার (সঞ্জয়) পক্ষে যায়। এদিকে এডিএম কোর্টের রায় বিপক্ষে যাওয়ায় আবু আসলাম লাল্টু গত ১০ নভেম্বর একই আদালতে তাকে বিবাদী করে
পিটিশন ৮৪২/২০ নং মামলা করেন। পুলিশ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষকে নোটিশ জারি করে। কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক রাসেল মাহমুদ ওই জমি তার দখলে বলে প্রতিবেদন দেন।
সঞ্জয় সরদার অভিযোগ করে বলেন, আকরাম হোসেন দোলন বিষ্ণুপুর মৌজার তাদের (সঞ্জয়) সিএস ১০৭৩ ও ৭৮৭ দাগের জমি দাবি করে
২৫০৪/২০০৪ ও ৪৮৫১/৯৫ নং দলিল মূলে যে ৪৯ শতক জমি দাবি করেন ওই জমি মূলত চান্দুলিয়া মৌজায় ও ব্রজপাটুলি মৌজায়।

বাস্তবে জমি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় আবু আসলাম লাল্টু গত ১০ আগষ্ট তাকেসহ নেপাল সরদারের নামে মারপিট , মোবাইল ছিনতাই ও একলাখ টাকা চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা করে।
মামলায় পূর্ব পরিকল্পনা হিসেবে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন, গ্রাম পুলিশ জামায়াত কর্মী আব্দুল-াহসহ আটজনকে সাক্ষী করা হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ
থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান লাল্টুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জমিস দখলে বাধা ও মারপিটের ঘটনা সঠিক বলে গত ২৫ নভেম্বর
আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সঞ্জয় সরদার বলেন, প্রভাব খাটিয়ে কাল্পনিক ঘটনার প্রতিবেদন নিতে সমর্থ হওয়ায় লাল্টু ওই জমি ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের সহায়তায় জবরদখলের উদ্যোগ নেয়। একপর্যায়ে
শনিবার সকাল ৮টার দিকে আবু আসলাম লাল্টু, আকরাম হোসেন দোলনের নেতৃত্বে জামায়াত কর্মী আতা গাজী, তার ভাই আশারুল গাজী, ওহাব কাগুজী, বাদল সরদার, ছোবহান সরদার, শহীদুল মলি-ক ও তার ছেলে রোকন মলি-কসহ শতাধিক জামায়াত শিবিরের হাতে দা’
লাঠি, শাবল ও কুড়াল নিয়ে তার জমিতে চাষ করে বেড়ার উপর নেট নিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় তাকে, তার স্ত্রী সুচিত্রা সরদার, শ্যালকের স্ত্রী কবিতা বসাক ও নেপাল সরদারকে
মারপিট করে মাটিতে ফেলে দেয়। খবর পেয়ে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ও সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার পর তারা আবারো এসে জমিতে বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ এলে তারা আত্মগোপন করে।

বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ
রিয়াজউদ্দিনের কাছে গেলে তিনিসহ সেখানে উপস্থিত থাকা পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান বসাবসির মাধ্যমে বিষয়টি তাকে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলেন। মিজানুর রহমান চলে যাওয়ার
পরপরই লাল্টুসহ কয়েকজন আবারো জমিতে বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়।

শনিবার বিকেলে আবু আসলাম লাল্টু’র সঙ্গে তার ০১৭৩৮-৮৬৮৮২৭ নং মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তার স্ত্রী পরিচয়ে দুইবার মোবাইল ফোন রিসিভ করে বাথরুমে আছে বলে কেটে দেন।
পরবর্তীতে মুঠোফোনের ¯-ুইজ বন্ধ পাওয়ায় ক্ষুদে ম্যাসেজ দিলেও জবাব মেলেনি।

বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন বলেন, তিনি উভয়পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছেন।

কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি ঘটনান্থলে এসে সঞ্জয় সরদার ছাড়া কাউকে পাননি। শনিবার সকালে জমি দখল করে চাষ করতে গেলে আদালতের নির্দেশ ছাড়া
আবু আসলাম লাল্টুকে বিরোধপূর্ণ জমিতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সঞ্জয় সরদার বাদি হয়ে শনিবার দুপুরে থানায় একটি অভিযোগ দায়েরকরেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষকে সন্ধ্যায় থানায় ডেকেছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)