মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসবে ‘আম্ফান’

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হচ্ছে বছরের প্রথম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। চলতি মাসের শুরুতেই এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহওয়াবিদরা।

বাংলাদেশ সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে আন্দামান সাগরের কাছে একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও কিন্তু তা হয়নি। আজ শুক্রবার যে হবে, সে নিশ্চয়তা নেই। তবে দুই–তিন দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’-এ পরিণত হবে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আবহাওয়ার ধরনই এমন। শতভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলা যায়। শুধু সম্ভাব্যতার কথা বলা যায়। তবে সাগরে থিতু হলেই ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য অভিমুখ ও গতিপথ সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জানা যাবে। ওই সময়েই কোন উপকূলে সেটি আঘাত হানবে তাও পরিষ্কারভাবে বলা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বিষয়ক বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, এটি ৩ থেকে ৫ মে তারিখের মধ্যে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার–চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে আঘাত হানতে পারে।

এর প্রভাবে ৫ থেকে ৭ মে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিকের চেযে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানি থাকতে পারে। দেশের অন্যান্য স্থানেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, শুক্রবার বৃষ্টি বাড়তে পারে। আর শুক্র বা শনিবারের মধ্যে আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সব লক্ষণ আছে।

শুধু তাই-ই নয়,ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ঘনীভূত হওয়ার খবর জানিয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরও। একইসঙ্গে সংস্থাটি এই  ঘূর্ণিঝড়টি যথেষ্ট শক্তিশালী হবে বলেও আভাস দিয়েছে।

চলতি মৌসুমে সৃষ্টি হতে যাওয়া আম্ফান নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। আম্ফান ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় তালিকার শেষ নাম। ‘নর্দান ইন্ডিয়ান ওশেন সাইক্লোন’-এর আওতাভুক্ত আটটি দেশের প্রস্তাবিত নাম থেকেই তা পর্যায়ক্রমে রাখা হয়। আওতাভুক্ত দেশগুলো হল- বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। ওই পর্যায়ক্রমের আট নম্বর তালিকায় শেষ নামটি হল আম্ফান।

আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থার নথিপত্র এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে জানা গেছে, দেশের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যারি এ্যান’ ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় দুইশ’ ৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ছয় মিটার অর্থাৎ ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয় এবং এতে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের মহেশখালী এবং নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। এর মধ্যে শুধু সন্দ্বীপে প্রাণহানি ঘটে ২৩ হাজার মানুষের।

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কর্ণফুলী নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের একশ’ টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট-বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও ছিল। ঘুর্ণিঝড় ‘ম্যারি এন’ ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে ধ্বংসলীলা চালানোর পর এটি ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে পরদিন বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই ঘুর্ণিঝড়ের দুঃসহ স্মৃতি উপকূলের মানুষ আজও ভুলেনি। প্রতিবছর কালবৈশাখীর মৌসুম এলেই উপকূলের মানুষের মনে অজানা শঙ্কা ভর করে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)