করোনার মধ্যেই চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে দুই অসাধু ব্যবসায়ী

মোমিনুর রহমান:

দেশব্যাপী মানুষ যখন করোনা আতঙ্কে গৃহবন্দি, কর্মহীন ও তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে, ঠিক সংকটকালীন সেই মুহুর্তে মহামারী করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে সাতক্ষীরার দেবহাটাতে চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে সখিপুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, বাবুর আলী, শফিকুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলীসহ গুটি কয়েক মুনাফালোভী অসাধূ চাল ব্যবসায়ীরা।মুলত চিহ্নিত এসকল অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা যোগসাজোসে প্রতিনিয়ত লাগামহীনভাবে চালের মুল্যবৃদ্ধি এবং দেবহাটা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের যাবতীয় চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিংবা ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে গোডাউনে পর্যাপ্ত পরিমান চাল মজুদ রেখে প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে ইচ্ছেখুশি মতো চালের দাম বৃদ্ধি করে চলেছেন এসব চাল ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন আগে চালের মুল্যবৃদ্ধির ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হলে দুই অসাধূ চাল ব্যাবসায়ী নজরুল ইসলাম ও বাবুর আলীকে বিশ হাজার টাকা করে মোট চল্লিশ হাজার টাকা জরিমানা করেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরীন। পাশাপাশি মুনাফার লোভে অতিমাত্রায় মুল্যবৃদ্ধি না করে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্যও নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন অসাধূ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে চালের উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহ থাকা স্বত্ত্বেও এসকল অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারো মেতে উঠেছেন চালের মুল্যবৃদ্ধিতে।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে উল্লেখিত অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দেবহাটার সখিপুর সহ পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেক বাজারে মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি ১৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০৫০ টাকা থেকে ২১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর কেজিপ্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৪২ টাকায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে মোটা চালের ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। তাই সুযোগ বুঝে চাহিদা বেশি থাকায় মোটা চালের দাম প্রতিদিনই ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করছে ব্যবসায়ীরা। শুধু মোটা চাল নয়, আঠাশ চাল, হাইব্রিড আঠাশ চাল, আতপ চাল, দেশি আঠাশ চাল, উনপঞ্চাশ জাতের চাল, মিনিকেট, বাসমতি চালেরও প্রকারভেদে মুল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে প্রতি কেজিতে।

এতে করে প্রতিনিয়ত করোনা আতঙ্কে গৃহবন্দি, কর্মহীন ও খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হওয়া উপজেলার সকল শ্রেনী পেশার মানুষ ওই অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে চালের লাগামহীন মুল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল ও তীব্র বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
এসব অসাধূ চাল ব্যাবসায়ীদের সখিপুর চালের বাজারে একাধিক আড়ৎ ও গোডাউন ছাড়াও খেজুরবাড়িয়া, চাঁদপুর, টাউনশ্রীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা গোডাউন রয়েছে। দেশে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ থাকা স্বত্তেও এসকল ব্যবসায়ীরা তাদের গোডাউনে শত শত বস্তা চাল মজুদ করে রেখে করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে গোটা উপজেলার চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। করোনা ভাইরাসের কারনে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে চাল দেবহাটাতে আসছেনা প্রচার করে প্রতিনিয়ত বস্তাপ্রতি চালে ইচ্ছেখুশি মতো মুল্যবৃদ্ধি করে মুনাফা লুটছেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।নিত্যপ্রয়োজনীয় চালের এমন অস্থিতিশীল দামে নাকাল উপজেলার সর্বসাধারণ। ফলে চালের মুল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল করতে অবিলম্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ এসব অসাধূ ব্যবসায়ীদের জেল জরিমানার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ক্রেতা ও সর্বসাধারণ।

এ ব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমানে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ রয়েছে। যেসকল অসাধু ব্যবসায়ীরা করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ কঠোর শাস্তিমুলোক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)