গর্ভাবস্থায় ছয় ভুলেই হতে পারে মা ও শিশুর মৃত্যু

একজন নারীর জন্য সব থেকে কঠিন সময় থাকে যখন সে গর্ভাবস্থায় থাকে। সেসময় অবশ্যই মায়েদের সবচেয়ে বেশি যত্নে ও সতর্কে থাকতে হয়। অনেক কষ্টের বিনিময়েই পৃথিবীতে একজন মা তার নিজের ও পরিবারের সবার জন্য খুশি নিয়ে আসে।

গর্ভাবস্থায় সবাইকেই মায়ের প্রতি অধিক সতর্ক হতে হয়। নইলে এসময়ের সামান্য ভুলে হতে পারে অনেক বড় বিপদ। ম্লান হয়ে যেতে পারে সব খুশি। একটু অসাবধানতা ক্ষতি করতে পারে মা ও শিশুর।

চিকিৎসকরা বলেন, এসময় নিজেদের ভাবনা-চিন্তার পরও থেকে যায় নানারকম ভুল। আমাদের অনেকেরই ধারণা, গর্ভাবস্থায় নিজের ও সন্তানের জন্য খেতে হয় দুজনের মাপে। বেশিরভাগ সময়ই শুয়ে–বসে থাকতে হয়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এসব ধারণার কোনোটাই ঠিক নয়।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরার মতে– গর্ভাবস্থায় বাড়িতে হবু মায়েরা নানারকম ভুল ধারণার শিকার হন। কারণ এ সময় নানাবিধ শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। এমনিই কিছুটা ভয় দানা বাঁধে। তার ওপর এসব ভুল ধারণা আরো বেশি করে উদ্বেগের জন্ম দেয়।

তাই সতর্কতা বাড়াতে আসুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় যেসব ভুলে মা ও শিশুর জীবনে ঝুঁকি বাড়ে-

খেতে হবে দুজনের মাপে

গর্ভাবস্থায় দুজনের মাপে খেতে হয় বলে অনেকেরই ধারণা।তবে এ ধারণাটি ভুল। কারণ ছোট্ট ভ্রূণের এত খাবার লাগে না। অতিরিক্ত খাবারে হবু মায়ের ওজন বাড়ায়। ফলে বাড়ে ডায়াবেটিস, প্রেশারসহ আরো অনেক জটিল রোগ। ফলে মা ও শিশুর জীবনঝুঁকি বাড়ে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস পুষ্টিকর খাবার খান, আগের মাপেই। তিন মাস পর থেকে মাত্র ২৫০–৩০০ ক্যালোরি বেশি খেতে হবে। একটা কলা, ছোট এক বাটি সিরিয়াল আর দুধ খেতে পারেন।

ছোটখাটো রোগে ওষুধ নিজেই খাওয়া

গর্ভাবস্থায় ছোট খাটো সমস্যায় অনেকেই নিজেই ওষুধ খেয়ে থাকেন। মনে রাখবেন, এসময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভুলেও কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে শিশুর জন্মগত ত্রুটিসহ আরো অনেক রোগ হতে পারে। তাই বদহজম–কোষ্ঠকাঠিন্য, যাই হোক না কেন, ওষুধ খান চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

কম ঘুমানো

গর্ভাবস্থায় শরীর ক্লান্ত থাকে। এসময় কম ঘুমিয়ে কাজ করলে শরীর আরো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যা শিশু ও মা কারো জন্যই ঠিক নয়। কম ঘুমের কারণে মায়ের স্বাস্থ্য ভাঙতে বাধ্য হয়। যা দুজনের জন্যই মারাত্মক ক্ষতি। কাজেই অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমান।

শুয়ে-বসে থাকা

অনেকেই মনে করেন গর্ভাবস্থায় শুয়ে-বসে থাকলে শিশু ও মা সুস্থ থাকবেন। ধারণাটি ভুল। এসময় দিনে আধাঘণ্টা অন্তত হালকা ব্যায়াম করুন। জোর–কদমে হাঁটা, যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি না করলে ওজন বেড়ে ডায়াবেটিস বা হাইপ্রেশার হতে পারে। প্রসবে সমস্যা, মানসিক চাপ কমাতে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে ও প্রসবের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতেও ব্যায়ামের জুড়ি নেই। আর যত নড়াচড়া করবেন, গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধিও ভালো হবে এতে। তাই বলে খুব ভারী কাজ, পরিশ্রমের কাজ করবেন না। কিন্তু শরীরকে নানাভাবে সচল রাখতে হবে।

পছন্দসই খাবার নয়, চাই স্বাস্থ্যকর খাবার

এসময় মায়েদের ইচ্ছা পূরণের জন্য তারা যা খেতে চায় তাই খাওয়ানোর চেষ্টা করেন পরিবারের সদস্যরা। তবে এটি ঠিক নয়। গর্ভাবস্থায় মিষ্টি, ভাজাভুজি, মসলাদার খাবার কম খেতে হবে। কারণ এতে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যেতে পারে ও হতে পারে অপুষ্টিও। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে কিসমিস, খেজুর, ফল আর নোনতা খাওয়ার ইচ্ছে হলে বাদাম, কাজু, পেস্তা খান।

অ্যান্টিনেটাল ক্লাসে যাওয়ার দরকার নেই

প্রসবের পর কীভাবে চলবেন, ব্রেস্ট ফিডিং, কী খাবেন, কী ব্যায়াম করবেন– এসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত অ্যান্টিনেটাল ক্লাসে যাওয়া সব থেকে বেশি ভালো। নইলে অজ্ঞতাবশত মারাত্মক ভুল হয়ে যেতে পারে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)