মৌ চাষ ও সি সিট ব্যবসা করে করুণা রানী এখন স্বাবলম্বী

গরিব ও দারিদ্র অসহায় করুণা রানী এক সময় না খেয়ে দিন কাটালেও। বর্তমানে নিজের পরিশ্রম আগ্রহকে পুঁজি করে দিনের পর দিন এগিয়ে চলছে। সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন ইউনিয়ন মুন্সিগঞ্জ চুনকুড়িগ্রামে বাংলাদেশের একমাত্র নারী মৌচাষী করুণা রাণী সরদার।

২০০১ সাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ জন্য মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করে চলেছে সাথে সাথে সামান্য পুঁজি দিয়ে শুরু করা সি সিট ব্যবসা করে সফলতা পেয়েছেন করুণা রানী। সে ভূপেন্দ্রনাথ সরদার এর স্ত্রী। এলাকায় জনপ্রিয়তার কারণে বিগত ২০০৩ ইউপি নির্বাচনে তিনি মহিলা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এছাড়া বিভিন্ন মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের সাথে গরীব ও সামাজিক মানুষের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে চলেছেন। করুণা রানী বর্তমানে চুনকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এছাড়া দেশের একমাত্র নারী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।

বিভিন্ন সামাজিক ও এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে মৌ চাষের ওপর একাধিক সনদপ্রাপ্ত। মৌবাক্সর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন করে মৌমাছির স্বাভাবিক জীবনযাপনের সাথে মিল রেখে মৌচাষ ও সি সিট ব্যবসা করে স্বাবলম্বী।

মৌ চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মোম দিয়ে তৈরি সি সিটি। সি সিটতে বসে মৌমাছি মধু তৈরি করে। মৌচাষ ও সি সিটের ব্যবসার মাধ্যমে করুণা রানী স্বল্প আয়তনের একটি চিংড়ি ঘের মালিক। করুণা রানী তিন কন্যা সন্তানের জননী বড় মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার পর মেজ মেয়েকে বয়রা মহিলা কলেজ পড়াকালীন সময়ে রোড এক্সিডেন্ট মারা যায়। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছে ছোট মেয়েটি। এছাড়া দৈনিন্দন পরিবারের ব্যয় নির্বাহ চালিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে অধিক মুনাফা অর্জন অন্যদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের স্বাদ গ্রহণে করুণা রানী মৌ চাষে পাশাপাশি সি সিট ব্যবসায় এগিয়ে আসেন বলে জানান।

২০০১ সাল থেকে মৌচাষের উপর মনোনিবেশ করলেও ২০০৬ সাল থেকে পুরোপুরি মৌ চাষে ব্যবসায় নেমে পড়েন করুণা রানী। স্বামী ভূপেন্দ্র নাথ সব সময় তার পাশাপাশি থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালে বারসিক এর সহযোগিতায় তিনি ভারতের তামিলনাড়ুতে মৌ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণ করে সেখান থেকে মোম ও মধু দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। যেমন মোম দিয়ে লিপজেল সাবান ও বাম এবং বিভিন্ন আচার তৈরীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তৈরি মালামাল বাজারজাত করণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে সফলতা লাভ করেছে। সেখান থেকে এসে ২০১০ সালে সোনালী ব্যাংক থেকে ৫৫ হাজার টাকা লোন নিয়ে করুণা রানী মৌ চাষের পাশাপাশি সি সিট ব্যবসায় শুরু করেন। মৌ চাষের পাশাপাশি সি সিট ব্যবসা করে সফলতা অর্জন করেছে করুণা রানী। করুণা রানী তার মৌ চাষ ও সি সিট প্রকল্পের কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মধু সংগ্রহ করতে যে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। উৎপাদিত মধুর বাজারজাত করণের ব্যবস্থা না থাকায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করতে সরকারি সহযোগিতা না থাকায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পুঁজি সংকট থাকায় বেশি বেশি কলোনি স্থাপন করতে পারে না।

তিনি জানান বেসিক ও প্রশিকার সহযোগিতায় চার প্রকারের মৌ মাছি, ডরসেটা, সেরেনা, ফরিয়া ও মেলিফোরা জাত নিয়ে মৌচাষ চালিয়ে আসছে। বর্তমানে তার ১৭৫ টি কলোনি আছে। কলোনি গুলো দেখাশোনার জন্য দুইজন কর্মচারী রাখা হয়েছে তাদের বেতন প্রতিমাসে ১৪০০০ টাকা করে দিতে হয়। মধু উৎপাদনের সময় ও ফুল সম্পর্কে বলেন, মৌমাছি ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করে যেহেতু সে কারণে বিভিন্ন ফুলের সময় বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়।নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ এসময় সিরাজগঞ্জ টাঙ্গাইল ঢাকা মানিকগঞ্জ যেতে হয়।জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে রাই-সরিষা ধনিয়া কালোজিরা ফুলের মধু সংগ্রহ শরীয়তপুর মাদারীপুর গোপালগঞ্জ পাবনা নড়াইলে মার্চ মাসে লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ ঢাকা গাজীপুর কাপাসিয়া নাটোর পাবনা সহ অন্যান্য স্থানে যেতে হয় এবং এপ্রিল-মে মাসে সুন্দরবন সহ অন্যান্য ফুলের মধু সংগ্রহ।

মৌ চাষ ও সি সিট ব্যবসা করে তার আয় ব্যয় সম্পর্কে বলেন, বর্তমানের ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি করেন এছাড়া ৬ লক্ষ টাকা তার বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে তিন বিঘার মত জমি ক্রয় করেছে। দেড় লক্ষ টাকার একটি সি সিট তৈরীর মেশিন রয়েছে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে আগের তুলনায় অনেক সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারছি। তবে আমার আশা এলাকার অসহায় নারীদের নিয়ে মধু চাষ ও সি সিট তৈরীর প্রশিক্ষণ দিয়ে আমার মত স্বাবলম্বী করে তোলার ইচ্ছা আছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)