কিডনি প্রতিস্থাপন বিষয়ে রায় ৫ ডিসেম্বর

কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত বিষয়সহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের কয়েকটি ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের ওপর চুড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। বৃহষ্পতিবার শুনানিশেষে আদালত আগামী ৫ ডিসেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

এ রায়ের মধ্য দিয়ে নিকটাত্মীয় ছাড়াও অন্য কারো কাছ থেকে কিডনি নিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে কিনা সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এদিকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন করার ২০ বছর পর এই আইন কার্যকর করতে সরকার বিধিমালা জারি করেছে। গতবছর সেপ্টেম্বরে করা এই বিধিমালা বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর কিডনি প্রতিস্থাপন বিষয়ে সাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কমিটি আদালতে মতামত দাখিল করেন।

তারা বলেছেন, আত্মীয় নন, এমন কারো কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন নেই। আইনের বাইরে অন্য কারো কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হলে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ধনীরা বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার করবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারের মাত্রা বাড়বে বলে অভিমত দেয় এ বিশেষজ্ঞ কমিটি।

তবে সাত সদস্যের এই বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিষয়ে দেশের বর্মান আইন সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। এই আইনে নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কারো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার সুযোগ নেই। তাই একজন সুস্থ মানুষ চাইলে অন্য কাউকে তার অঙ্গ দান করতে পারেন, এমন আইন থাকা দরকার।

গত ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত জানতে চান। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক‌্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো-ভিসি ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অপর ছয় সদস্য হলেন- কিডনি ফাউন্ডেশনের চিফ কনসালট‌্যান্ট অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ, বিএসএমএমইউর নেপ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসিয়া খানম, বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম খুরশীদুল আলম, বারডেম হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মির্জা এম এইচ ফয়সাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম এবং জাতীয় কিডনি ডিজিসেস ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা।

মানবদেহে কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট এক আদেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯ এর তিনটি ধারা (২গ, ৩ ও ৬) কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ফাতেমা জোহরা নামের একজন ২০১৫ সালে তার মেয়ে ফাহমিদাকে একটি কিডনি দান করেন। এরপরও মেয়ের কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা পেলেও আইনগত বাধার কারণে মেয়েকে আর কিডনি দিতে না পেরে রিট আবেদন করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)