শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ভাড়াশিমলা এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়

সমাজের অবহেলিত অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলায় এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। সেই স্কুলের মানুষ গড়ার কারিগররা দীর্ঘ নয় বছর ধরে ওই সব শিশুদের মাঝে শিক্ষার আঁলো ছড়িয়ে গেলেও আজও ওই সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে যাচ্ছে।

২০১০ সালে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতার চৌমূহনী এলাকায় একটি ভবন ভাড়া নিয়ে হাটি হাটি পা পা করে চলতে শুরু করে এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি। পরবর্তীতে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকার শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবকেরা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে। প্রতিবন্ধী স্কুলের নিজস্ব ভবন তৈরি করার জন্য জমিসহ আর্থিক সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন তারা। এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২৮ শতক জমি ক্রয় করে ভাড়াশিমলায় প্রতিষ্ঠিত হয় এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। প্রথমে ওই বিদ্যালয়ে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৩৮ জন শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে অধ্যয়নরত।

সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্লাস চলে এই বিদ্যালয়ে। এর মাঝে বিরতির জন্য রাখা হয়েছে ১ ঘণ্টা। বিরতির সময় আগে প্রতিদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ সকল প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ায় আগ্রহী করে তুলতে নিজস্ব অর্থায়নে টিফিনের ব্যবস্থা চালু রাখলেও আর্থিক সংকটের কারণে বর্তমানে সেটা আর নিয়মিতভাবে সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালু রয়েছে ওই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে।

ওই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, আমরা এই স্কুলে এসে বঙ্গবন্ধু এবং দেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। স্কুলে আমরা প্রতিদিনই পড়তে আসি। স্যারেরা আমাদেরকে অনেক আদর করে পড়ায়। তবে আগে প্রতিদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ টিফিনের সময় নাস্তা করালেও এখন আর নিয়মিতভাবে সেই নাস্তা করান না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। কিন্তু জাতীয় দিবসগুলো পালনসহ দিবস উপলক্ষে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ওই বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অতি আনন্দের সাথে মনোযোগ দিয়ে বিদ্যালয়ে ক্লাস করছেন। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে অপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আবার ক্লাস শেষে তাদের বিদ্যালয়ের নিজস্ব অটোভ্যান যোগে আনা-নেওয়া করা হয় এই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। এই অটোভ্যানের সম্পূর্ণ ব্যায় বহন করে এই বিদ্যালয়ে পাঠ দান করা শিক্ষক ও এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী সমাজ সেবকেরা। এরপরেও পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগীতা না পাওয়ার কারণে আর্থিকসহ বিভিন্ন সংকটের ভুগছেন বিদ্যালয়টি। এদিকে এত কিছু পরেও এখনো পর্যন্ত এমপিও’র মুখ দেখতে পায়নি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখলেও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন পাঠদানের শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে নলতা আহ্ছানিয়া রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এই এলাকায় প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। সে কারণে এলাকার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন শিক্ষার সুযোগ থেকে বি ত ছিল। এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এখন আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধীরা আমাদের বোঝা নয়। তাই আমাদের সমাজের সকলের উচিৎ সর্বপ্রকার সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি যেভাবে সুনামের সাথে আমাদের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে যাচ্ছে তাতে এগিয়ে আসা। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সমাজের অবহেলিত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের ভাগ্যের উন্নয়নে ও তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যা গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সেই সাথে সমাজের অবহেলিত শিশুরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জালালুর রহমান জানান, আমরা প্রতিদিন এসেম্বলি ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করি। শিক্ষার্থীদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর বিশেষ পাঠদান করানো হয় যাতে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠতে পারে। এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৯ জন কর্মচারী ২০১০ সাল থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পিতৃ ও মাতৃ সুলভ আচরণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি আজও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আমরা মানবেতর জীবন যাপন করে যাচ্ছি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)