চাঁদাবাজি-অর্থ আত্মসাত সহ ইয়াদ বাহিনীর অপকর্মে অতিষ্ঠ দেবহাটার ভূমিহীন জনপদ

দীর্ঘদিনের অর্থ আত্মসাত ও চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মের হোতা কথিত ভূমিহীন নেতা ইয়াদ আলী মোড়লের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অত্যাচারের অবসান ঘটিয়ে গফফার-নজরুলের নেতৃত্বে নতুন ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটি অনুমোদন হওয়ায় ইতোমধ্যেই স্বস্তি ফিরেছে দেবহাটার অবহেলিত ভূমিহীন অধ্যুষিত জনপদ নোড়ার চক-চারকুনিতে।

আর নতুন কমিটি অনুমোদন ও বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসায় নিজেদের বাঁচাতে থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধি আর রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে সকাল-বিকাল দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে নানা অপকর্মের হোতা কথিত ভূমিহীন নেতা ইয়াদ আলী মোড়লের নেতৃত্বাধীন বাহিনীটি। বিগত কয়েক বছর ধরে কথিত ভূমিহীন নেতা ইয়াদ আলীর চাঁদাবাজ বাহিনীর কাছে প্রায় পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছিলো অসহায় ভূমিহীনরা। ইয়াদ আলী নোড়ারচক গ্রামের মৃত মোহর আলী মোড়লের ছেলে। বাহিনীটিতে ইয়াদ আলীর দুই ছেলে সাইফুল ও শরিফুল ছাড়াও রয়েছে চারকুনির সিরাজুল ইসলাম, ময়নুদ্দীন ময়নার ছেলে আমজাদ হোসেন ও তালেব মোড়লের ছেলে অপর আরেক ইয়াদ আলী। এদের মধ্যে মুলহোতা ইয়াদ আলী মোড়লের বিরুদ্ধে রয়েছে অবহেলিত এ জনপদের ৫ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বন্দোবস্ত করিয়ে দেয়ার নামে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আত্মসাত সহ ইতোপূর্বে একাধিকবার লক্ষ লক্ষ টাকা ভুমিহীনদের থেকে চাঁদাবাজি করে আত্মসাতের অভিযোগ। পাশাপাশি ইয়াদ আলীর নিজের ও দুই ছেলে সহ তারই পরিবারের অন্যান্যদের নাম দেখিয়ে প্রায় ১৫ বিঘা সরকারী খাস জমি দখলে রাখার অভিযোগ।

ইয়াদের পর তার বাহিনীর অন্যতম সদস্য আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ভূমিহীনদের সরকারি খাস জমি প্রতারণার মাধ্যমে ৩-৪ বার হাত বদল বা বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। এছাড়া ইয়াদ আলীর দুই ছেলে সাইফুল ও শরিফুল সহ সিরাজুল ইসলাম আর অপর ইয়াদ আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে দীর্ঘদিনের এসব চলমান অপকর্মে সহযোগিতা, অসহায় ভূমিহীন পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য ভূমিহীন নেতাদের হুমকি এবং ভূমিহীন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ। অসহায় ৫ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারকে জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন অপকর্ম চালিয়ে আসার পাশাপাশি গোটা ভূমিহীন জনপদ দাপিয়ে বেড়াতো ইয়াদ বাহিনী। যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে, তখন সেই দলে ভিড়ে অপকর্ম চালিয়ে যায় তারা। নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে কখনো ছাত্রদল তো কখনো ছাত্রলীগ, আবার কখনো যুবদল তো কখনো যুবলীগে ঢুকে গাঁ বাচায় তারা।

এক কথায় তাদের নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল নেই। ক্ষমতা আর সময় বুঝে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে থেকে ভূমিহীন জনপদে অপকর্ম চালিয়ে যায় ইয়াদ বাহিনী। ইয়াদ আলী সহ তার বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা এসব সীমাহীন অপকর্মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের চাঁদাবাজি আর অত্যাচারের রামরাজত্বের অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার (১ নভেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি কওছার আলী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছামাদ স্বাক্ষর পরবর্তী নোড়ারচকের ভূমিহীন নেতা আব্দুল গফফারকে সভাপতি ও নজরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ৩ বছর মেয়াদী নোড়ারচক-চারকুনি ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটি অনুমোদন দেন।

সরকারি তথ্য মতে বিস্তৃর্ন এ ভূমিহীন জনপদে সর্বমোট এক হাজার তিন শতাধিক বিঘা খাস জমি রয়েছে। সম্প্রতি এসব জমি বন্দোবস্ত করিয়ে দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াদ আলী সহ তার বাহিনীর অন্যান্যরা ভূমিহীন জনপদের পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের থেকে বিঘাপ্রতি সাত শত টাকা থেকে এক হাজার টাকা হারে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আদায় পরবর্তী আত্মসাত করে। এসব অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসলে চাঁদাবাজ-অর্থ আত্মসাতকারী ইয়াদ আলীর বাহিনীকে হটাতে ক্রমশ ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে ভূমিহীনরা। সম্প্রতি ভূমিহীনদের দাবী বিবেচনায় নিয়ে নতুন কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা ভূমিহীন নেতৃবৃন্দরা। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের অপকর্ম ও লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত ইয়াদ আলী ও তার বাহিনীর অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দাবী করেছে অসহায় ভুক্তভোগী ভূমিহীনরা।

এদিকে চাঁদাবাজি ও অর্থআত্মসাতের বিষয়ে অভিযুক্ত কথিত ভূমিহীন নেতা ইয়াদ আলী মোড়লের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমিহীন সনদ নিতে ইউনিয়ন পরিষদে টাকা দিতে হয়, প্রতিবেদন নিতে সার্ভেয়ারকে টাকা দিতে হয়, তাছাড়া টাকা তুললে জানাজানি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানা, ডিএসবি, ডিবি, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক সবাইকে টাকা দিতে গিয়ে সব টাকা খরচ হয়ে যায়। এদিকে ইয়াদ আলী মোড়লের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অর্থ আত্মসাত, চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মের ঘটনার তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)