যে ওয়েবসাইটগুলোতে ভাষা শেখা যায়

ইন্টারনেট আর কম্পিউটারের এই যুগে সব ধরনের কাজের জন্যই মানুষ ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে প্রযুক্তির উপর। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজের জন্যই ইন্টারনেট যেন অফুরন্ত সম্পদ নিয়ে অপেক্ষা করছে সকলের জন্য। যারা মাতৃভাষার বাইরেও অন্য কোনো ভাষা শিখতে চান, তাদের জন্যও ইন্টারনেটে কনটেন্টের অভাব নেই। অনেকেই হয়তো উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান জার্মানি, ইতালি, ফ্র্যান্স বা ইউরোপ-আমেরিকার অন্য কোনো দেশে। তাদের জন্য ইংরেজির বাইরেও সেই দেশের স্থানীয় ভাষাটি জানা জরুরি।

পুরোপুরি দক্ষ না হলেও অত্যন্ত চলনসই জ্ঞানটা থাকলে সেটা কাজে লাগবেই। আবার কেউ কেউ শখের বশেই শিখতে চান অন কোনো ভাষা। সেক্ষেত্রে ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট না গিয়েও কেবল ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সেই ভাষার প্রাথমিক জ্ঞানটুকু অর্জন করা সম্ভব। ভাষা শিক্ষার জন্য এমন শত শত ওয়েব সাইট রয়েছে। এর মধ্য থেকে বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়, এমন কয়েকটি ওয়েবসাইটের কথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়।

বুসু

ইংরেজি, স্প্যানিশ, ডাচ, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, রাশান, পোলিশ, তুর্কি, আরবি, চীনা ও জাপানি ভাষা শেখার জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি ওয়েবসাইট বুসু ডটকম। বিভিন্ন ভাষার জন্য এখানে রয়েছে ইন্টার্যাকটিভ কোর্স এবং লেসন। বিখ্যাত সব প্রকাশনীর গ্রামার গাইডও ব্যবহার করা যায় এখান থেকে। আর এখানকার নিজস্ব কমিউনিটিতে যুক্ত রয়েছে হাজার হাজার মানুষ, যাদের সাথে কোনো ভাষা নিয়ে চর্চা করা যাবে; আর ভাষা শিখতে নানা ধরনের পরামর্শও পাওয়া যাবে এখান থেকে। এখানকার ভাষা বিষয়ক পাঠ্যসূচীতে রয়েছে ভোকাবুলারি এবং শব্দগুচ্ছ শেখার সুযোগ। সংলাপ, লেখার অভ্যাস, অডিও রেকর্ডিংসহ নানা ইন্টার্যাকটিভ সুবিধা রয়েছে এই সাইটে।

ভাষা শিক্ষার চারটি ধাপ—পড়া, লেখা, বলা ও শোনা—এতে সম্পন্ন করা যায়। এখানে রিয়েল-টাইম প্র্যাকটিসের সুবিধাও রয়েছে। আর এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময়ে মোবাইলের মাধ্যমেও পাঠ চালু রাখা যায়। অ্যাডভান্সড লেভেলের ম্যাটেরিয়ালগুলো অবশ্য বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। তবে বিনামূল্যে যতটা রিসোর্স পাওযা যায়, তাতে ভাষার উপর প্রাথমিক দখল হয়ে যায়। আর এই সাইটের কমিউনিটি সবার জন্যই অত্যন্ত সহায়ক। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা www.busuu.com।

ডুয়োলিংগো

ইংরেজিং, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, পর্তুগিজ এবং ইতালিয়ান—এই ৬টি ভাষা বিনামূল্যে শেখার সুযোগ রয়েছে ডুয়োলিংগো ডটকম ওয়েবসাইটে। এই ৬টি ভাষা একটিমাত্র ওয়েবসাইট থেকে শিখতে চাইলে ডুয়োলিংগোকেই বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সহায়ক বলে মনে করেন। ডুয়োলিংগো কর্তৃপক্ষও দাবি করে থাকে, তাদের ওয়েবসাইটে এই ৬টি ভাষা শেখানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচী বিদ্যমান রয়েছে। ভোকাবুলারি অধ্যয়নের মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ শেখা এবং তার মাধ্যমে ছোট ছোট বাক্য গঠনের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে শুরু হয় এখানকার পাঠ। পড়া, লেখা, শোনা এবং বলা—এই চারটি কাজই করা যায় এখানে। আর প্রতিটি ধাপেই সংশ্লিষ্ট ব্যকরণগত সহায়তাও থাকে।

এখানকার বাড়তি একটি সুবিধা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ভাষার মানসম্মত টেক্সট এবং এগুলোর মানসম্মত অনুবাদও মিলবে এই ওয়েবসাইটে। এই ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস থেকে শুরু করে সব কনটেন্ট অত্যন্ত গোছানো এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা রয়েছে। লেসনগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ছবি ও ফ্লোচার্ট ব্যবহার করা হয়েছে। রয়েছে নানা ধরনের ভাষা শিক্ষা গেম। আইফোন আর অ্যান্ড্রয়েডের জন্য অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে এই সাইটের। ই-মেইল বা ফেসবুক আইডি’র মাধ্যমে যুক্ত হওয়া যায় এই কার্যকর ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা www.duolingo.com।

ফরেন সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট

যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের এই ওয়েবসাইটটি ভাষা শেখার অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিদেশি ভাষা শেখার ব্যবস্থা বিনামূল্যে করতেই এই ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। এই সাইটটিতে বিভিন্ন ভাষা শেখার মৌলিক পাঠ্যসূচী অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এখানকার শিক্ষা উপকরণগুলো অভিজ্ঞ ও প্রফেশনাল ভাষাবিদদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। ফলে মানের দিক থেকে এগুলো যেকোনো পাঠ্যসূচীর তুলনায় বেশ সমৃদ্ধ। আরবি, চীনা, জাপানি, হিন্দি, হিব্রু, কোরিয়ান, ফ্রেঞ্চ, ফিনিশ, ইতালিয়ান, জার্মান, রাশিয়ান, স্প্যানিশসহ ৪৫টি ভাষা শেখা যাবে এই ওয়েবসাইট থেকে।

এই সাইটের বড় একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আফ্রিকা বা এশিয়ার অনেক কম প্রচলিত ভাষাও এখানে অন্তর্ভুক্ত আছে। এখানকার অডিও রেকর্ডিংগুলো অত্যন্ত উচ্চমানের এবং সাজানো-গোছানো। অন্যান্য সাইটের মতো এতটা ঝাঁ চকচকে নয়। বরং পাঠ্যপুস্তকের মতো এখানকার কনটেন্টে টেক্সটের আধিক্যই বেশি। আর এখানকার লেসনগুলোতে গ্র্যামারের দিকে একটু বেশিই নজর দেওয়া হয়েছে। যারা গ্র্যামারের মাধ্যমে শিখতে উত্সাহী, তাদের জন্য তাই এই সাইট একটু বেশিই উপযোগী। আর এখানকার পিডিএফ ফাইলগুলো পরবর্তী ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করাও বেশ সুবিধাজনক। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা http://fsi-languages.yojik.eu।

লাইভমোচা

পড়া, লেখা, শোনা এবং বলা—প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা আলাদা লেসন নিয়ে তৈরি হয়েছে লাইভমোচা ডটকম। আরবি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, হিব্রু, হিন্দি, ইতালিয়ান, জাপানি, কোরিয়ান, চীনা, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, রাশিয়ানসহ ৩৫টিরও বেশি ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে লাইভমোচায়। এখানে যে পদ্ধতিতে ভাষা শেখানো হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হোল-পার্ট-হোল’। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি লেসন দেওয়া হয়, এরপর এই লেসনকে ভেঙে ছোট ছোট করে উপস্থাপন করা হয় বুঝার সুবিধার জন্য। প্রতিটি অংশ শেখা শেষ হলে শেষে গোটা লেসনকে আবার একসাথে উপস্থাপন করা হয়। এই সাইটে বিনামূল্যে নিবন্ধন করা গেলেও উচ্চতর ভাষা শিক্ষার জন্য প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন।

তবে এখানে অন্যদের কাছে শেখার যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি নিজের ভাষাটি অন্যকে শেখানোর সুযোগও রয়েছে। এর মাধ্যমে ক্রেডিট অর্জন করে অনেক প্রিমিয়াম ম্যাটেরিয়াল লাভ করা যায়। কারও লেখা সম্পাদনা করা বা অডিও রেকর্ডিংয়ে মন্তব্য করেও এই ক্রেডিট অর্জন করা যায় এখানে। যারা নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে পড়তে ও পড়াতে চান, তাদের জন্য উপযোগী এই সাইট। এখানে প্রাইভেট টিউটোরিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার সুযোগও আছে। রয়েছে চ্যাটিং অপশন ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের সুবিধা। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা http://livemocha.com।

মেমরিস

ফ্ল্যাশকার্ডের ব্যবহার শিক্ষার্থীরা কম-বেশি সকলেই জানে। এই ফ্ল্যাশকাডের ভার্চুয়াল সংস্করণ ব্যবহার করেই ভাষা শেখানোর কাজটা করা হয় মেমরিস ডটকমে। মেমরিসে ভাষা শেখার ও শেখানোর জন্য রয়েছে বিশাল কমিউনিটি এবং এখানে প্রায় সব ভাষা শেখার সুযোগই রয়েছে। কেবল মুখের ভাষাই নয়, ইশারা বা বাক প্রতিবন্ধীদের ভাষাও এখানে শেখা যাবে। এই সাইটে ঢুকলেই পাওয়া যাবে শীর্ষ কয়েকটি ভাষা সম্পর্কে জানার অপশন। ব্রাউজ অপশনে গিয়ে পাওয়া যাবে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার উপর বিভিন্ন কোর্সের তালিকা।

আগেই বলা হয়েছে, এখানে ফ্ল্যাশকার্ডের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝানোর জন্য প্রয়োজনীয় ছবি, অ্যানিমেশন বা ইন্টার্যাকটিভ কনটেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানকার সদস্যদের সাথে ভাষা শিখতে শিখতে খেলা যায়। বলতে গেলে অনেকটা মজায় মজায় ভাষা শেখা যায় এই ওয়েবসাইট থেকে। অ্যাপল’র অ্যাপস্টোর এবং গুগল প্লেস্টোরেও রয়েছে এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। ফলে মোবাইল ডিভাইস থেকেও ব্যবহার করা যাবে মেমরিস। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা www.memrise.com।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)