সৌদিতে নারী কর্মী খুন: এজেন্সি বলছে সড়ক দুর্ঘটনা

সচ্ছলতার আশায় সৌদি আরব যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন খুলনার আবিরুন বেগম (৪৮)। কিন্তু দুই বছরের মাথায় লাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাকে। রিক্রুটিং এজেন্সির দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। তবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জানিয়েছে, সেখানে খুন হয়েছেন আবিরুন।

আবিরুনের বিদেশ যাওয়ার নথিপত্র থেকে জানা যায়, তিনি রিক্রুটিং এজেন্সি ফাতেমা এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেসের (আরএল-১৩২১) মাধ্যমে সৌদি যান। ওই এজেন্সির কর্ণধার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে থাকলেও আমরা মারা যেতে পারি। বিমানে বসেও মারা যায়। আল্লাহ যানেন, কীভাবে মারা যায়। আল্লাহই জানে কে কীভাবে মারা যাবে।

একপর্যায়ে তিনি বলেন, এক কাঠি কখনো বাজে না। একটা ঢোল আর একটা কাঠি দুই জায়গায় রাখলে বাজে না। একজন মরলে তাকে ধরে রাখা যায় না।

আবিরুনের পরিবার জানায়, যাওয়ার কিছুদিন আগে হঠাৎ কি যেন ভেবে সৌদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত আবার বাতিলও করেন। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি এবং দালাল রবিউল ও নিপুনের চাপ এবং হুমকির মুখে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সৌদি যেতে বাধ্য হন আবিরুন।

তবে যে স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় বিদেশ যান তিনি, সেটা জীবনে আর আসেনি। যাওয়ার পর প্রায় দুই বছর টাকা পাঠানো তো দূরে থাক, বাড়িতে যোগাযোগই করতে পারতেন না আবিরুন। দুই বছর পরে হঠাৎ একদিন তার দিশেহারা পরিবারের কাছে আবিরুনের মৃত্যুর খবর আসে। এখন তার লাশের অপেক্ষায় পরিবার।

আবিরুনের পরিবার জানায়, দুই বছরের মধ্যে কোনো টাকা পাঠাননি আবিরুন। যে দালালের মাধ্যমে তিনি সৌদি যান, সেই রবিউল স্থানীয় ব্যক্তি। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, অ্যাকাউন্ট নম্বরে ভুল আছে। আবিরুন ভালো আছেন।

আবিরুনের বোন রেশমা আক্তার বলেন, আমার বোনই আমাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। অথচ সৌদি যাওয়ার পরে আপার কোনো যোগাযোগ নেই। দালালের কাছে অনেক অনুরোধের পরে কয়েক মাস পর পর দু-এক মিনিট কথা বলতে পারতাম। ওখানে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু কি করার ছিল। মামলা-মোকদ্দমা করলে আপার আরও ক্ষতি হবে বলে হুমকি দিত দালাল। টাকা-পয়সা না পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে দালাল বলত, তোমাদের দেয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে ভুল আছে। তাই টাকা আসে না।

তিনি আরও বলেন, কয়েক মাস আগে রবিউল জানান, আপা ঢাকায় টাকা পাঠিয়েছে, সেই টাকা আনতে তার সঙ্গে ঢাকা যেতে হবে। কিন্তু তাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে না হওয়ায় আমরা কেউ যাইনি। ফিরে এসে তিনি ১৬ হাজার টাকা দিতে চান। কিন্তু দুই বছর পরে আপা মাত্র ১৬ টাকা পাঠাবে না, বিশ্বাস ছিল। তাই ওই টাকা আমরা নিইনি।

তার কিছুদিন পরে জানলাম আমার বোন আর বেঁচে নেই। দালাল ও এজেন্সি বলেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে, তিনি খুন হয়েছেন।

রেশমা বলেন, দালাল রবিউল আমাদের হুমকি দিচ্ছে যে, এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে লাশ আনতে পারব না।

রেশমার স্বামী আইয়ুব আলী বলেন, আবিরুনের মৃত্যুর ৫১ দিন পরে সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারি, তিনি মারা গেছেন।

আবিরুনের মরদেহ সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে রাখা আছে। পরিবারের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন তার মরদেহ দেশে আনা হয় এবং এই মৃত্যুর ন্যায়বিচার তারা পান।

দুই বছর কোনো টাকা না পাওয়ার বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুই বছর তার পরিবার কেন চুপ করেছিল। তারা কেন অভিযোগ করেনি। এর মানে তারা মিথ্যা বলছে।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ১২০ জন নারী কর্মী পাঠিয়েছি। বাকিদের অন্যরা এনেছে আমি প্রসেস করেছি। আবিরুনের পাসপোর্ট নম্বর জানার পরে বলতে পারব, তিনি কীভাবে সৌদি যান।

তিনি বলেন, আমরাও মানবতার বাইরে না। আমরাই কর্মীদের অধিকার নিয়ে লড়াই করি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)