বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তিত দুই মন্ত্রণালয়

বন্যা কবলিত এলাকায় শিক্ষার্থীরা কিভাবে শিক্ষা বছর শেষ করবে সে বিষয়ে চিন্তায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যেসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেখানে শিক্ষার্থীরা কিভাবে সিলেবাস শেষ করবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি এই দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা চিন্তিত। এদেরকে নিয়ে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। শিগগিরই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সে বিষয়ে জানানো হবে।

একই কথা শোনা গেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও। তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক ডেইলি বাংলাদেশকে কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার পর ছুটির দিনগুলোতে ক্লাস নেয়া হবে। সঙ্গে প্রতিদিন একটি কিংবা দুটি ক্লাস বেশি নিয়ে নিয়ে সিলেবাস শেষ করা হবে। এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে আন-অফিসিয়াল আলোচনাও করেছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হলে আমরা এই পরিকল্পনার বিষয়ে তাদেরকে জানাবো।

এবারের বন্যায় সারাদেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এক হাজার ৫৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্ষতির তালিকায় রয়েছে ৭৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীকে বন্যার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রাকৃতিক নিয়ম যেটা আছে সেখানে মানুষের কিছু করার নেই। তাই বন্যার জল না নামা পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে না। বন্যার পর তাদেরকে যত্নের সঙ্গে পড়ানো হবে যেনো চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই তাদের সিলেবাস শেষ হয়।

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) জানাচ্ছে, এবার ছয়টি বিভাগের প্রায় বিশটি জেলায় বন্যার পানিতে স্কুল-কলেজগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলা। এই জেলার সাতটি উপজেলায় এখনো পর্যন্ত ৪০৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বানের জলে বন্ধ রয়েছে। জেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরেই পানি ঢুকেছে। এছাড়াও কিছু ভবন পানির তোড়ে ভেসে গেছে বলেও জানিয়েছেন মাউশির কর্মকর্তারা।

মাউশির উপ-পরিচালক (প্রশাসন) রুহুল মমিন জানান, এখন পর্যন্ত বন্যার কারণে অঞ্চলভিত্তিক ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে তালিকা আমরা পেয়েছি তাতে ৩২ কোটি ৬ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করা হয়েছে। তবে ঠিক কতজন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেটি জানা সম্ভব হয়নি। গণনা করা হলে, এই সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হওয়া এসব প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফলে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষা কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ছে।

উল্লেখ্য, বিভাগ অনুসারে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৫৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রংপুরে ৫২৯টি, সিলেটে ২৫২, রাজশাহীতে ১৩৫, চট্টগ্রামে ৩৬ এবং ঢাকা অঞ্চলে ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)