কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিল

প্যারাগুয়েকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল। টাইব্রেকারে তিতের শিষ্যদের জয়টা এসেছে ৪-৩ গোলে।

শুক্রবার (২৮ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোরে গ্রেমিও এরেনায় ম্যাচের প্রথমার্ধে প্যারাগুয়ের রক্ষণের ওপর বেশ চাপ প্রয়োগ করেই খেলতে থাকে ব্রাজিল। মাত্র তৃতীয় মিনিটেই রবার্তো ফিরমিনো পেয়ে যান গোলের সুযোগ। কিন্তু পেনাল্টি এরিয়া থেকে সেটিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ফিরমিনো।

শুরুর এ ধার পুরো ৪৫ মিনিটই ধরে রাখে ব্রাজিল। কিন্তু কাজের কাজ গোলটি তারা করতে পারেনি। তবে কম যায়নি প্যারাগুয়েও। ম্যাচের ২৯তম মিনিটে পেরেজের কাছ থেকে বল পেয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে শট নেন গঞ্জালেজ। এলিসন বেকারের দুর্দান্ত সেভে সে যাত্রায় বেঁচে যায় ব্রাজিল।

প্রথম ৪৫ মিনিটের শেষদিকে রেফারি যেনো কার্ড-কার্ড খেলায় মেতে ওঠেন। দশ মিনিটের ব্যবধানে তিনি হলুদ কার্ড দেখান ৪ খেলোয়াড়কে। প্যারাগুয়ের সান্তিয়াগো আরজামেন্দিয়া দুয়ার্তে, ইভান পিরিস ও জুনিয়র আলোনসো এবং ব্রাজিলের ফিলিপ্পে লুইস দেখেন হলুদ কার্ড।

গোলশূন্য ব্যবধানেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।বিরতির পর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সেলেসাওরা। প্যারাগুয়েও সেসময় সমান তালে লড়তে থাকে।

ম্যাচের ৫৮তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় প্যারাগুয়ে। পেনাল্টি বক্স বরাবর ব্রাজিলিয়ান তারকা ফিরমিনোকে ফাউল করেন বালভুয়েনা। ভিএআর দেখে রেফারি প্যারাগুয়ে তারকাকে লাল কার্ড দেখালেও ব্রাজিলের পক্ষে পেনাল্টি দেননি। কেননা, ফাউলের ঘটনা বক্সের কিছুটা বাইরে ঘটে।

একজন কম নিয়েও পরে ব্রাজিলের সঙ্গে সমান তালে লড়াই করে গেছে প্যারাগুয়ে। ৬০তম মিনিটে দানি আলভেজের ফ্রি-কিক দারুণ দক্ষতায় রুখে দিয়ে স্বাগতিকদের হতাশ করেন প্যারাগুয়ে গোলরক্ষক।

ম্যাচের ৬৯তম মিনিটে বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যায় ব্রাজিল। তবে আর্থারের নেয়া দুর্বল শট প্রতিহত করতে খুব একটা কষ্ট হয়নি প্যারাগুয়ে গোলরক্ষকের। পাঁচ মিনিট পর ফের আক্রমণ শানায় ব্রাজিল। গ্যাব্রিয়েল জেসাস গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি এবার। তার শট লক্ষ্যে না থাকলে আরেকদফা হতাশ হতে হয় ব্রাজিলকে।

পরে ৭৬তম মিনিটে প্যারাগুয়ের রক্ষণের পরীক্ষা নেয় ব্রাজিল। তবে এভারটনের নেয়া শট গোলপোস্টের বাইরে চলে গেলে আবারও হতাশই মেলে। নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট আগে আবারও ব্রাজিলকে হতাশ করেন প্যারাগুয়ে গোলরক্ষক। কৌতিনহোর ফ্রি-কিক থেকে ভেসে আসা বলে অ্যালেক্স সান্দ্রোর নেয়া দারুণ হেড দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন গোলরক্ষক ফার্নান্দেজ।

দুই মিনিট পর আরেকটি আক্রমণ শানায় ব্রাজিল। এবার বামপ্রান্ত দিয়ে সতীর্থের পাস ধরে উইলিয়ানের নেয়া জোরাল শট গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও লক্ষ্যে থাকেনি। যোগ করা সাত মিনিটের খেলায়ও বেশ কয়েকটি আক্রমণ শানায় ব্রাজিল। প্রতিবারই ফিনিশিংয়ের অভাবে হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

অতীত ইতিহাসের চোখ রাঙানি ছিল। ছিল ব্রাজিলের নকআউট পর্বের হতাশাজনক পারফরম্যান্স। ২০১১ ও ২০১৫ কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিল সেলেসাওরা। তাই শঙ্কা ছিল। ম্যাচজুড়েও যেন সেই কালোমেঘ ছেয়ে বসেছিল ব্রাজিলের আকাশে। জয়েই সব শঙ্কা-জুজু কাটিয়েছে স্বাগতিকরা।

সেইসঙ্গে প্রতিশোধ নেয়া হল ২০১১ ও ২০১৫ আসরেরও। সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে টিটের দলকে অবশ্য কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছে। টাইব্রেকারে ব্রাজিলের হয়ে উইলিয়ান, মার্কুইনোস, ফিলিপে কৌতিনহো ও গ্যাব্রিয়েল জেসাস লক্ষ্যভেদ করেন। রবের্তো ফিরমিনো গোল করতে ব্যর্থ হন।

অন্যদিকে আলমিরন, ব্রুনো ভালদেজ ও রিকার্ডো রোজাস পেনাল্টি থেকে গোল করলেও গোমেজ ও গঞ্জালেস পেনাল্টিতে জাল খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন। ফলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় প্যারাগুয়েকে।

সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাতে অপর কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলার মুখোমুখি হবে মেসি-আগুয়েরোরা। সেই ম্যাচে মেসিরা জিততে পারলে ফুটবলবিশ্ব আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল মহারণ দেখতে পাবে সেমিতেই।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)