বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল ইংলিশরা

বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর বেশ রোমাঞ্চ ছড়ানো শুরু করেছে। মিশনের তৃতীয় ম্যাচে আহত ব্রিটিশ সিংহের মুখোমুখি হয় উদ্দীপ্ত টাইগার। কিন্তু ইংলিশ তোপে টিকটে পারেনি টাইগাররা। সাকিবের শতক ও বাঁচাতে পারেনি দলকে। বাংলাদেশকে ১০৬ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

শনিবার কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনসে টস হেরে আগে ব্যাট করে বড় সংগ্রহ দাড় করায় ইংলিশরা। ৫০ ওভার  ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড সংগ্রহ করে ৩৮৬ রান। এবারের বিশ্বকাপে এটাই ইংলিশদের বড় স্কোর। ইংলিশদের বিপক্ষে জিততে টাইগারদের সামনে লক্ষ্য থাকে ৩৮৭ রানের। তবে ইংলিশ বোলারদের সামনে টিকতে পারেনি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ৪৮.৫ ওভার ২৮০ রানে ১০ উইকেট হারিয়ে থেমে যায় টাইগারদের ইনিংস। আর এতেই ১০৬ রানের জয় পায় ইংলিশরা। গত ম্যাচ পাকিস্তানের কাছে হারলেও এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াল ইংল্যান্ড।

শুরুতেই ব্যাটে আসেন ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও জনি ব্রেয়ারস্ট্রো। ওপেনিং জুটিতে বেশ ভালো ভাবেই গেড়ে বসেছে ইংলিশরা। ১৯ তম ওভারে রাউন্ড দ্য উইকেটে মাশরাফীর কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বল লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন বেয়ারস্টো। তবে বল তার ব্যাটের কোনায় লেগে উঠে যায় অফ সাইডে। কিছুটা সামনে দৌড়ে গিয়ে শর্ট কাভারে সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন মিরাজ। আর এতেই ভাঙে ইংলিশদের ওপেনিং জুটি। ফেরার আগে ১২৫ রানের পার্টানারশিপ গড়নে জেসন রয় ও জনি ব্রেয়ারস্ট্রো। ঘরে ফেরার আগে ৫১ রানের এক ইনিংস উপহার দেন জনি ব্রেয়ারস্ট্রো।

এরপর আবারো ছুটতে থাকে ইংলিশরা। তুলে নেয় দলীয় দুই শত। তবে এই যাত্রায় বাঁধ সাধে সাইফউদ্দিন। ২১ রানে বোল্ড করে রুট কে ঘরে ফিরয়ে কিছুটা বাঁধা দেয় এই অলরাউন্ডার। এরপর পর মেইন ধাক্কাটা খায় ইংলিশরা।

মিরাজের ওভারে তুলে মারতে গেলে বল উপরে উঠে যায়। যা মাশরাফী ছুটে গিয়ে লুফে নেয়। আর এতেই ফেরেন বিধ্বংসী জেসন রয়। তবে ফেরার আগে ইংলিশদের দাঁড় করিয়ে দিয়ে যান এ ব্যাটসম্যান।  ১২১ বলে ১৫৩ রানের অনবদ্য এই ইংনিস উপহার দিয়েছেন দলকে। ফের সাইফউদ্দিনের বলে ক্যাচ দিয়ে সৌম্য সরকারে হাতে বল তুলে দিলেন জস বাটলার(৬৪)। এরপর আবারো সেই সৌম্য সরকারের হাতেই ক্যাচ দিলেন মরগান(৩৪)।

এবার মুস্তাফিজের বলে ফেরেন বেন স্টোক(৬)। বল উড়িয়ে মারলে তা ধরতে যান টাইগার অধিনায়ক মাশরাফী। বল হাতে লেগে পড়ে যায়। ঠিক তখন আবারো ঝাঁপ দিয়ে বলটা তালুবদ্ধ করেন অধিনায়ক। আর কোন উইকেট খোয়াতে হয়না ইংলিশদের। ওভার শেষ হওয়াতে লিয়াম প্লাঙ্কেট(২৭) ও ক্রিস ওকস(১৮) এর ব্যাটে ৩৮৬ তে থামে ইংল্যান্ড ইনিংস। যা এবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সব থেকে ব্ড় সংগ্রহ। জিততে বাংলাদেশকে লক্ষ্য দিয়েছিল ৩৮৭ রানের।

বাংলাদেশের হয়ে সাইফউদ্দিন-মেহেদি হাসান ২ টি করে ও মাশরাফী- মুস্তফিজ ১টি করে উইকেট নেন।

বড় রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে আসেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। শুরুতেই জোফরা আর্চারের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন দলীয় রান তখন ৮। মাত্র ২ রান নিয়ে ফিরতে হয় এই ব্যাটসম্যানকে। সাকিবের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। মার্ক উডের করা ১২তম ওভারের শেষ বলে ইয়ন মরগানের তালুবন্দি হওয়ার আগে তামিম করেন ২৯ বলে ১৯ রান। দলীয় ৬৩ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর চলতি বিশ্বকাপে আরেকটি শতরানের জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। এই জুটিতে আসে ১০৬ রান। ইনিংসের ২৯তম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন ৪৪ রান করা মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিক। লিয়াম প্লাংকেটের বলে জেসন রয়ের তালুবন্দি হন মুশফিক। পরের ওভারে মোহাম্মদ মিঠুন বিদায় নেন। আদিল রশিদের এই উইকেটটি যতটা না নিজের, তার চেয়ে বেশি মিঠুনের বিলিয়ে দেওয়া উইকেট। নিজের দ্বিতীয় বলেই তুলে মারতে গিয়েছিলেন মিঠুন, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। দলীয় ১৭০ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়।

উইকেটের এক প্রান্তে সাকিব ছিলেন দুর্দান্ত। ৫৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করা সাকিব ৯৫ বলে সেঞ্চুরির দেখা পান। বিশ্বকাপে এটাই সাকিবের প্রথম সেঞ্চুরি। তবে, চলতি বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচের তিনটিতেই ফিফটি বা তার বেশি রানের ইনিংস খেললেন সাকিব। শুধু কি তাই, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পেলেন অষ্টম সেঞ্চুরির দেখা। এখানেই শেষ নয়, টানা চার বিশ্বকাপ খেলতে আসা সাকিব টানা তৃতীয় বিশ্বকাপে বিশ্বসেরা অললাউন্ডার হিসেবে খেলতে নামেন। সাকিব তার খেলা সবশেষ সাত ইনিংসের পাঁচটিতে ফিফটি আর একটিতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ৪০তম ওভারে বেন স্টোকসের ইয়র্কার সামলাতে না পারলে বোল্ড হন সাকিব। তার আগে ১১৯ বলে ১২টি চার আর একটি ছক্কায় সাকিব করেন ১২১ রান।

সাকিবের বিদায়ে মাঠে নামেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। শুরুতে একটু সতর্ক থাকলেও পরে ব্যাট চালিয়ে রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ৪৪তম ওভারে স্টোকসের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড অঞ্চলে জোফরা আর্চারের হাতে ধরা পড়েন সৈকত। তার আগে ১৬ বলে চারটি বাউন্ডারিতে করেন ২৬ রান। দলীয় ২৬১ রানের মাথায় মার্ক উডের বলে টপএজ হয়ে বিদায় নেন ২৮ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।  ৪৬তম ওভারে বেন স্টোকসের বল ব্যাটে লেগে স্টাম্পে লাগলেও বেইল পড়েনি, বেঁচে যান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পরের বলে সরাসরি বোল্ড হন সাইফউদ্দিন। দলীয় ২৬৪ রানে বাংলাদেশ হারায় অষ্টম উইকেট।

শেষপর্যন্ত ৪৮.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮০ রান, ফলে ইংলিশরা জেতে ১০৬ রানের ব্যবধানে।

ইংল্যান্ডের পক্ষে জফরা আর্চার ও বেন স্টোকস ৩টি করে উইকেট নেন। মার্ক উড ২টি উইকেট নেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)