নুসরাতের চিঠি ‘তোরা জানিস না ওইদিন রুমে কী হইছে’

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়। সে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার নেপথ্যের কাহিনী ও হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফির হাতে লেখা একটি চিটি পেয়েছে পুলিশ।

চিঠিতে নুশরাত যৌন হয়রানির ওই ঘটনা নিয়ে তার দুই বান্ধবীর সমালোচনার জবাব দিয়েছে। একই সঙ্গে ওই ঘটনার বিচারের দাবিতেও লড়াই করার ঘোষণাও দেয় সে।

চিঠিটিতে নুসরাত লেখে, ‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কী কী বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ??? তোরা সিরাজ উদ দৌলা (অভিযুক্ত শিক্ষক) সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস।’

‘তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কী হইছে? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরো কোন জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে- নুসরাত ডং করিস না। তুই প্রেম করিস না? ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে? ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেবো। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে…। আমি লড়বো শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চিঠিটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে যাদের নাম আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

গত শনিবার ফেনীর পৌর শহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রের ভিতর তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান।

পরিবারের অভিযোগ, মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তার মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে।

এরপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় সিরাজউদ্দৌলার লোকজন। কিন্তু নুসরাত অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় আলিম পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে ভাই নোমান নুসরাতকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিয়ে আসতেন। কিন্তু ওইদিন কেন্দ্রে গেলে বোরকা পড়া কয়েকজন তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর ওই মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার দেওয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে বলে। সে রাজি না হলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গ্রেফতার কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)