জলবায়ু পরিবর্তন : বাংলাদেশের ১ কোটি ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ বন্যা, ঘুর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের ১ কোটি ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে রয়েছে। শুক্রবার সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

‘গ্যাদারিং স্টর্ম : ক্লাইমেট চেঞ্জ ক্লাউডস দ্য ফিউচার অব চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ’ শিরোণামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ‘সমতল ভূমি, ঘন বসতি ও দুর্বল অবকাঠামো একে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শক্তিশালী ও অনিশ্চিত শক্তির কাছে ব্যাপকভাবে অরক্ষিত করে ফেলেছে।’ দেশের উত্তরের বন্যা ও খরা প্রবণ এলাকা থেকে ঝড় কবলিত বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা পর্যন্ত এই ঝুঁকি বিরাজমান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারেণ বন্যা কিংবা নদী ভাঙ্গনের কারণে লাখ লাখ শিশু গ্রাম ছেড়ে বড় শহরগুলোতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ইউনিসেফের এই তালিকায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুরাও রয়েছে। ২০১৭ সালে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের সন্তানদের নিয়ে এখন বাঁশ ও প্লাস্টিকের তৈরি ঘরে থাকতে হচ্ছে।

বর্তমানে ১ কোটি ৯৪ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিশুর অধিকাংশই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বড় নদীগুলোর পানি প্রবাহ এবং তাদের নিয়মিত ভাঙ্গনের শিকার। এর বাইরে উপকূলীয় এলাকায় ৪৫ লাখ শিশু বাস করছে যেখানে নিয়মিত শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানছে।

প্রতিবেদনের লেখক সাইমন ইনগ্রাম বলেছেন, ‘বন্যার কারণে যে বিপদ দেখা যাচ্ছে তা ব্যাপক এবং এটা প্রায় বছর ভিত্তিক হয়ে গেছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বড় আকারের বন্যা বাংলাদেশে আঘাত করেছিল, যখন প্রায় ৮০ লাখ লোক একাধিক বন্যার শিকার হয়েছিল।

ওই সময় ব্রহ্মপুত্র নদের কারণে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ৪৮০টি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং অন্তত ৫০ হাজার টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ওই অঞ্চলের নিরাপদ পানির সংস্থানের জন্য এই টিউবওয়েলগুলো খুবই জরুরি ছিল।

তিনি বলেন, ‘কেবল পরিবারগুলোকে বাস্তুচ্যুত ও তাদেরকে গৃহহীন হতে বাধ্য করার ওপরই কেবল এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে তা নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যসেবা এবং পানি ও পয়ঃব্যবস্থার মতো মৌলিক সেবাগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে।

ঘরবাড়ি হারানোর কারণে অনেক পরিবারই তাদের আয়ের পথ হারিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘অনেক শিশুকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পরিবার ভরণপোষণের ব্যয় নির্বাহ করতে না পারায় অনেক মেয়েকে বাল্যবিবাহে বাধ্য করা হচ্ছে। ‘

ইনগ্রাম আরো বলেছেন, ‘অনেক মেয়ে আছে যারা সুস্পষ্টভাবে ভাসমান হয়ে গেছে এবং শহরগুলোর যৌন ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে। যেসব মেয়েদের কাছে থেকে অন্য কোনো প্রাপ্তির আশা নেই তাদেরকে পরিত্যাগ করা হচ্ছে।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)