বদরতলা জে.সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলছে কোচিং বাণিজ্য

আশাশুনি উপজেলার বদরতলা জেসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে শুরু করে ৯টা পর্যন্ত অতিরিক্ত ক্লাসের নামে চলছে এ কোচিং বাণিজ্য। জানা যায়, বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ১১ জন শিক্ষকই এ কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষক অরুন কুমার গাইনের নির্দেশে তারা অতিরিক্ত ক্লাস হিসেবে কোচিং চালান। নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত ক্লাসের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে, প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে। সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ক্লাসে এক সঙ্গে ৪০ জন করে পড়ানোর কথা থাকলেও এ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ৬০-৮০ জন করে শিক্ষার্থী এক সঙ্গে কোচিং করছেন। কোচিং না করলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঢুকতে দেয়না বলেও অভিযোগ রয়েছে। মনিটরিং কমিটির যথাযথ কার্যক্রমের অভাব, সরকারি, এমপিওভুক্ত ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাড়তি উপার্জনের মানসিকতার কারণে থামানো যাচ্ছে না এ কোচিং বাণিজ্য।

সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে কোচিং নিষিদ্ধ করলেও উপজেলা মনিটরিং কমিটির দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম না থাকায় কোচিং বাণিজ্য ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে এ উপজেলায়। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকেয়া খাতুন জানান, কোচিং ফি বাবদ আমরা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দিই। কোচিং না করলে আমাদের উপর নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। কোচিং এ ৬০-৮০ জন শিক্ষার্থী এক সঙ্গে পড়ে। ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন জানান, কোচিং ফি বাবদ আমরা সবাই ৪০০ টাকা করে দেই। কোচিং না করলে ক্লাসে স্যারেরা বকাবকি করে। এজন্য বাধ্য হয়ে আমাদের কোচিং করতে হচ্ছে। ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী সুখী (রোল-৬৮) জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে কোচিং চলে। প্রতিমাসে আমাদের কাছ থেকে ৪০০ করে নেয়া হয়। কোচিং করা বাধ্যতামূলক। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুন কুমার গাইনের নির্দেশে স্কুল ড্রেস পড়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সড়ক অবরোধ করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি, সরস্বতি পূজাকে কেন্দ্র করে বদরতলা সড়কে ফিতা টানিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে।

তারা জানান, প্রধান শিক্ষক অরুন স্যারের নির্দেশে আমরা এ টাকা তুলছি। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করানো হয়েছে। অভিভাবকরা বলেন, আমাদের সন্তানরা ওই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের অনেক বেশি নম্বর দেন শিক্ষকরা। আর যারা ওইসব স্যারের কাছে পড়ে না তাদের কম নম্বর দেয়া হয়। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই স্কুলের শিক্ষক তরুণ কুমার গাইন ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শিক্ষকরা বলেন, এটা কোচিং নয়, অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তবে ৫০০ টাকা হারে নিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নে বলেন, ৫০০ টাকা নয়, ২৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। পরে অবশ্য তারা কোচিং এর কথা স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে সহকারী প্রধান শিক্ষক লক্ষীপদ ঘোষ বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশেই আমরা সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে থাকি। অতিরিক্ত ক্লাসের টাকা প্রধান শিক্ষক বন্টন করেন বলে জানান তিনি।

প্রধান শিক্ষক অরুন কুমার গাইন বলেন, অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য আমরা ২০০ টাকা নিয়ে থাকি। আমরা অতিরিক্ত ক্লাসের টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিল ও কিছু আসবাবপত্র ক্রয় করি। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে স্থানীয় দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের চাঁদা তোলার কথা বলা হয়েছিল, তবে সড়কে চাঁদা তোলার বিষয়টি সম্পর্কে জানার পর তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীদের নিষেধ করেন বলে জানান তিনি। তবে অতিরিক্ত ক্লাসে টাকার ব্যাপারে এক একজন শিক্ষক এক এক রকম উত্তর দেন।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা ৫০০ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। এব্যাপারে অভিভাবকরা জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বলেন, বদরতলা জেসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে কোচিং পরিচালনা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)