ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব

বিএনপিকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। নির্বাচনের আগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাড় করানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের দূতাবাস। বিভিন্ন কূটনৈতিকসূত্রের প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মোর্চা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রস্তাব দিয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচীর মাধ্যমে ধাপে ধাপে এটাকে সংঘবদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। এর প্রথম কাজ হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের উর্ধতন কমিটির বৈঠকে এরকম একটি সুনির্দিষ্ট রুপরেখা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারতের প্রতিনিধিরাও ড. কামাল হোসেনকে একটি অর্থবহ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ঐক্যফ্রন্টকে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে। এ সমস্ত দেশের পরামর্শে যে মূল বিষয়টি এসেছে, তা হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে বাদ দিতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বাম দলগুলোসহ গণতান্ত্রিক এবং প্রগোতিশীল যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদেরকে ঐক্য করতে হবে। এই সংসদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যে ১৪ দলে আছে। সেই ১৪ দলের শরিকদেরকেও এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসার চেষ্টা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সেকুলার গণতান্ত্রিক শক্তি আত্মপ্রকাশ করবে বলেও বিদেশি দূতাবাসগুলো মনে করে।

গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শেষ প্রক্রিয়ায় অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দেওয়া হয়। এই ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল হলো বিএনপি। শুরুতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শর্ত ছিল, জামাতের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রাখবে না। কিন্তু বিএনপি জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ২২ জন জামাতের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে। ড. কামাল হোসেনকে তা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে। এরপর থেকেই ড. কামাল হোসেন জামাতকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেয় বিএনপিকে। এবার আন্তর্জাতিক মহল ড. কামাল হোসেনকে বিএনপিকেই বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিলো। এরপক্ষে তাদের যুক্তি হলো, বিএনপি যেহেতু সেকুলার রাজনীতি হারিয়েছে। বিএনপি-জামাতের সম্পর্ক যেহেতু অঙ্গঅঙ্গিভাবে জড়িত। কাজেই বিএনপিকে রেখে একটি সেকুলার রাজনীতিক দল হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিকশিত হতে পারে না। তাছাড়া গত দেড় দশক ধরেই বিদেশি দূতাবাসগুলো একটা নতুন রাজনৈতিক শক্তি উথানের জন্য চেষ্টা করছিল। সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টই একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছে। সে বিবেচনা থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মধ্যেও টানাপোড়ন চলছে। ১৪ দলের শরিকদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ১৪ দলের মধ্যে যে হতাশা এবং অসন্তোষ, সেই অসন্তোষকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। ১৪ দলের ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দলসহ যে শরিক দলগুলো আছে, তাদেরকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ড. কামাল হোসেনকে পরামর্শ দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উদার গণতান্ত্রিক প্রগোতিশীল শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে তারা মনে করেন।

বিভিন্ন দূতাবাসগুলো ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যে দুইজন নির্বাচিত হয়েছে তাদের সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দেন। যেহেতু ১৪ দলের বাইরে আওয়ামী লীগের বেশকিছু আসন আছে। তাদেরকে নিয়ে সংসদের ভিতর এবং বাইরে সুশাসন জবাবদিহীতা দুর্নীতিমুক্ত মানবাধিকার ইত্যাদি ইস্যুতে একটি জন প্লাটফর্ম গঠন করার জন্য ড. কামাল হোসেনকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে ড. কামাল হোসেন এই নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। এতদিন যেটা মনে করা হত, বিএনপিকে জামাত ছাড়তে হবে। এখন সর্বশেষ ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কূটনীতিকদের সিরিজ বৈঠকের পর এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, শুধু জামাত নয়, বিএনপিকেও বিদেশী রাষ্ট্রগুলো একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে দেখছে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে ওতপ্রোতভাবে বিএনপি জড়িয়ে আছে বলেও বিএনপি মনে করছে। এই প্রেক্ষাপটে এখন রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের জন্য কূটনীতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। চটজলদি করে সরকারের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন নয়, বরং আস্তে আস্তে একটি বিকল্প গণতান্ত্রিক মোর্চা হিসেবে ঐক্যফ্রন্টকে গড়ে তোলার জন্য শুধুমাত্র বিদেশি কূটনৈতিক নয়, অনেক সুশীল সমাজও এখন তৎপরতা চালাচ্ছেন। ড. কামাল হোসেন এ ব্যাপারে ইতিবাচক বলে অনেকের ধারণা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)