উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে লোনাপনি উত্তোলন

কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশঝাড়িয়ার তাড়দ্দাহ খালে লোনাপানি উত্তোলনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গী দেখিয়ে ভারত সীমান্তবর্তী ওয়াপদার ৫-নম্বর পোল্ডারের ৬-নম্বর স্লুইজগেট দিয়ে আবারও অবৈধ ভাবে পানি উঠানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গত মাসের ১০ তারিখে এলাকাবাসি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ষাটএর দশকে উপকুলীয় অঞ্চলের ফসলি জমির গুরুত্ব বিরেচনা করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ওয়াপদা কতৃপক্ষ বেড়িবাধ তৈরী শুরু করে। সেই থেকে ধান চাষ, মিষ্টি পানির মাছ চাষসহ সবুজ শর্য্য শ্যামলীতে ভরে উঠতো এলাকার ক্ষেত-খামার। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বাজুয়াগড় গ্রামের আনছার আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন, একই গ্রামের এন্তাজ আলীর ছেলে ফজর আলী, হযরত আলীর ছেলে মাছুম বিল্লাহ, গান্ধুলিয়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সবুর, জিএম গোলাম রহমানের ছেলে আব্দুল মান্নান, মৃত শওকত তরফদারের ছেলে মিজানুর রহমান, পিরোজপুর গ্রামের মৃত আনোয়ার গাজীর ছেলে আব্দুল মালেক, মতি গাজীর ছেলে নজরুল ইসলাম, গনেশপুর গ্রামের আব্বাস উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, মৃত আরশাদ আলীর ছেলে আব্বাস উদ্দিন, বাহাদুরপুর গ্রামের এন্তাজ আলীর ছেলে ইউনূস গাজী, হরিখালী গ্রামের ছবেদ আলীর ছেলে রেজাউল ইসলামসহ আরো অনেকে ওয়াপদার ভেড়িবাধ কেটে অধিক লাভের আশায় জমিতে লবন পানি তুলে বাগদা চিংড়ি মাছের চাষ শুরু করে। কয়েক বছর যেতে না যেতেই সবুজ শ্যামলীমাখা পরিবেশ মরু-ভূমিতে রুপনেয়। মিষ্টি খাবার পানির অভাব দেখা দিলে সমগ্র এলাকায় হাহাকার পড়ে যায়। দেখা দেয় মারাত্বক পানি বাহিত রোগের প্রকোপ। সরেজমিনে গেলে বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত নকিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হক গাজী, একই গ্রামের মৃত বরকত উল্লাহ গাজীর ছেলে পিয়ার আলী, মৃত দৌলত আলীর ছেলে মহব্বত আলী, তার ছেলে বেল্লাল হোসেন, বদরকাটি গ্রামের মৃত আমির আলী তরফদারের ছেলে আনোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তিরা এ প্রতিনিধিকে জানান, স্লুইজগেট দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ লোনা পানি উঠানোর ফলে ফসলি জমির ক্ষতি, সুপেয় বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব, বসতঘর ধ্বংসসহ হাঁস মুরগি, গবাদিপুশুর মারাত্বক রোগ দেখা দিলে নিরুপায় হয়ে এলাকাবাসির পক্ষে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি মহামান্য হাইকোটে একটি রিট পিটিশন মামলা ২৪১৩/২০১৮ নং দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে লোনাপানি উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আসলে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় একাধিক পত্র-পত্রিকায় নিউজ ছাপা হলে ঐ স্বার্থনেশী কুচক্রি মহল স্লুইজগেট দিয়ে কিছু দিনের জন্য নদীর লোনাপানি তোলা বন্ধ রাখে। বর্তমানে আবারও ঐ প্রভাবশালী মহলটি নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে কুট-কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাড়দ্দাহ খালে অবৈধ ভাবে লোনাপানি তুলে ফসলের ক্ষতিসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যহ্নত করেছে। ইতিপূর্বে স্লুইজগেট দিয়ে লোনাপনি উঠানোর ফলে ওয়াপদা বেড়ি বাঁধ সংলগ্ন তাড়দ্দাহ খালের উপর কয়েক লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত সেতুটি পানির চাপে ভেঙে যায়। সম্প্রতি আবারও লোনাপনি উত্তোলনের কারণে বাজুয়াগড় ও হরিখালী গ্রামে সদ্য নির্মিত পাঁকা পিচের রাস্তার অনেক জায়গায় বসে যেয়ে ও ঢস নামতে শুরু করেছে। এদিকে লোনাপানি তোলা বন্ধে গত বুধবার বিকেলে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের ব্যাক্তিদের নিয়ে তার সভাকক্ষে সমঝোতায় বসেন ইউএনও।

এসময় উভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, যেহেতু উচ্চ আদালতে পানি বন্ধের নির্দেশ রয়েছে এখানে আমার কিছু করার নেই। আমি সরেজমিনে যেয়ে সরকারি খালের জায়গা কেউ দখল করেছে কিনা দেখে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবো। লোনাপানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মহামান্য আদালত। কেউ যদি সে আইন অমান্য করে পানি তোলে তার ভোগ সেই ভুগবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)