অতি সংক্ষেপে মহাবিশ্বের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবকিছুর ইতিহাস
১৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে: বিগ ব্যাংয়ের সংঘটন। এর মাধ্যমে বস্তু ও শক্তি অস্তিত্ব লাভ করে। বস্তু ও শক্তি অস্তিত্বমান হওয়া মানে পদার্থবিজ্ঞানের জন্ম নেওয়া। মহাবিশ্ব সৃষ্টির একদম শুরুর দিকে অণু-পরমাণু বলতে কিছু ছিল না। অল্প সময় পর পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মে এদের উদ্ভব ঘটে। অণু-পরমাণু উদ্ভবের সাথে সাথে জন্ম নেয় রসায়ন। বিগ ব্যাংয়ের আগে ঠিক কী ছিল কিংবা আদৌ কোনোকিছু ছিল কিনা সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো সন্দিহান।
৯ বিলিয়ন বছর আগে: জন্ম লাভ করে আমাদের সৌরজগৎ। কয়েক আলোক বর্ষ ব্যাপী বিস্তৃত মহাজাগতিক মেঘ (Interstellar Cloud) মহাকর্ষের টানে পরস্পর একত্রিত হয়ে সৌরজগৎ গঠন করে। যে অংশটিতে সবচেয়ে বেশি পদার্থ জমা হয়েছিল সেটি বর্তমানে সূর্য। সূর্যে পদার্থ জমতে জমতে এত বেশি হয়ে গিয়েছিল যে সেখানে অকল্পনীয় চাপ তৈরি হয়েছিল। এই চাপে উত্তপ্ত হয়ে হাইড্রোজন পরমাণুগুলো ফিউশন বিক্রিয়া শুরু করে, এক হাইড্রোজেন ঢুকে যায় আরেক হাইড্রোজেনের ভেতর। এই ঘটনায় প্রবল তাপ ও আলোক শক্তি বিকিরিত হয়। ফলে জ্বলে উঠে সূর্য, আলো দিতে থাকে চারদিকে।
৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে: পৃথিবীর জন্ম। সূর্য যখন জন্ম হচ্ছিল তখন তার পাশাপাশি গ্রহ-উপগ্রহও বিকশিত হচ্ছিল। সূর্য থেকে দূরে আলাদা আলাদা করে প্রত্যেকের মধ্যে পদার্থ জমতে থাকে এবং প্রত্যেকের আলাদা আলাদা প্রভাব বলয় তৈরি হয়। এই প্রভাবে পার্শ্ববর্তী উপগ্রহগুলো গ্রহদেরকে কেন্দ্র আবর্তন করতে থাকে, সূর্যকে কেন্দ্র করে নয়।
৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে: প্রথম প্রাণের উৎপত্তি এবং জীববিজ্ঞানের জন্ম। শুরুতে পৃথিবী অনেক উত্তপ্ত ছিল। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে উপরিভাগটা শীতল হয়ে আসে (পৃথিবীর ভেতরভাগটা এখনো আগুনের মতো গরম)। পানি ও বরফবাহী প্রচুর ধূমকেতু এসে আছড়ে পড়ে এবং সাগর ও মহাসাগরের জন্ম হয়। পানির উপস্থিতিতে প্রাণের উৎপত্তির জন্য বেশ অনুকূল একটা পরিবেশ তৈরি হয়। ঠিক কীভাবে প্রাণের জন্ম হয়েছিল সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নয়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদ হচ্ছে পানি, জৈব রাসায়নিক উপাদান, বিদ্যুৎ (বিজলি) যদি উপযুক্ত তাপ ও উপযুক্ত চাপে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে তাহলে সেখানে প্রাথমিক স্তরের আদি প্রাণ তৈরি হতে পারে। এ নিয়ে স্ট্যানলি মিলারের বিখ্যাত একটি পরীক্ষা আছে।
৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে: পৃথিবীতে অক্সিজেনের যোগান। ঠিক কীভাবে এটা হয়েছিল সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। তবে এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে একধরনের সায়ানোব্যাকটেরিয়া সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ছাড়া শুরু করেছিল। প্রাণের জন্ম হয়েছিল সমুদ্রে, বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ছিল না। ঢেউয়ের মাধ্যমে কিছু ব্যাকটেরিয়া ডাঙ্গায় উঠে এবং সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ সম্পন্ন করে।
২.৫ মিলিয়ন বছর আগে: হোমো গণের উৎপত্তি। মানুষ এবং মানুষের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের প্রাণীগুলো এই গণের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের মতো দেখতে হোমো ইরেক্টাস এবং হোমো নিয়ান্ডার্থাল এই গোত্রেরই সদস্য। এই সময়েই প্রথম পাথর দিয়ে হাতিয়ার ব্যবহার শুরু হয়।
২ মিলিয়ন বছর আগে: মানুষের আদিম আত্মীয়রা আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে ইউরোপ ও এশিয়ায় বসবাস করতে শুরু করে। আলাদা আলাদা এলাকা, এক গোত্র থেকে আরেক গোত্র বিচ্ছিন্ন। কোনো প্রাণীর গঠন, বৈশিষ্ট্য, আচার, আচরণ কেমন হবে তা নির্ভর করে পরিবেশের উপর। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থাকার কারণে তাদের গঠন বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন হতে থাকে।
৫ লক্ষ বছর আগে: ইউরোপ ও মধ্য প্রাচ্যে নিয়ান্ডার্থালরা বিস্তৃত হতে থাকে।
৩ লক্ষ বছর আগে: দৈনন্দিন কাজে আগুনের ব্যবহার শুরু হয়।
২ লক্ষ বছর আগে: আধুনিক মানুষেরা পূর্ব আফ্রিকায় বিস্তৃতি লাভ করে।
৭০ হাজার বছর আগে: জ্ঞানের বিপ্লব। ভাষার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। তখন থেকে ইতিহাসের জন্ম। এই সময়কালের মধ্যে আধুনিক মানুষেরা আফ্রিকা ছাড়িয়ে বাইরের দিকে বিস্তৃত হতে থাকে।
৪৫ হাজার বছর আগে: মানুষেরা অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পৌঁছায়। মানুষের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় সেখানকার অনেক প্রাণী।
৩০ হাজার বছর আগে: বিলুপ্তি ঘটে নিয়ান্ডার্থালদের। মানুষেরাই ধরে ধরে তাদেরকে মেরে মেরে শেষ করে ফেলে।
১৬ হাজার বছর আগে: আমেরিকায় পৌঁছায় মানুষ। বিলুপ্ত হয়ে যায় সেখানকার অনেক প্রাণী প্রজাতি।
১৩ হাজার বছর আগে: মানুষ (Homo sapiens) বাদে হোমো গণের সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
১২ হাজার বছর আগে: কৃষির বিপ্লব ঘটে। এর আগে মানুষ যাযাবর ছিল। খাবারের সন্ধানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতো। যেখানে খাবার পেতো সেখানে যেতো। একসময় খেয়াল করলো খাবারের গাছ ও খাবারের প্রাণীগুলোকে চাষ-বাস কিংবা লালন-পালন করা সম্ভব। এতে অনিশ্চিত বিপদসঙ্কুল পথে ভ্রমণ করতে হয় না, জীবনের নিরাপত্তা থাকে। সেখান থেকে জন্ম নেয় কোথায় স্থায়ী হয়ে থাকার রীতি।
৫ হাজার বছর আগে: হস্তলিপি ব্যবহারের মাধ্যমে লেখালেখির শুরু। এই সময়কালে বহুশ্বরবাদ বিকাশ লাভ করতে থাকে।
৪ হাজার ২৫০ বছর আগে: আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের উত্থান।
২ হাজার ৫০০ বছর আগে: মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন।
২ হাজার বছর আগে: চীনে হান সাম্রাজ্যের বিস্তার। একই সময়ে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার। এই সময়কালে খ্রিস্টবাদের প্রচলন শুরু হয়।
১৪০০ বছর আগে: ইসলামের উত্থান।
৫০০ বছর আগে: বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূচনা। ইউরোপীয়রা আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ গড়তে শুরু করে। সমুদ্রপথে চলাচলের রাজত্ব চলে আসে তাদের হাতে।
২০০ বছর আগে: শিল্প বিপ্লবের সূচনা। বিজ্ঞানের বিপ্লবের কারণে একে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি হতে থাকে। যে কাজ আগে মানুষ করতো সে কাজ করানো হতে থাকে যন্ত্রের সাহায্যে। যে কাজ মানুষের দ্বারা সম্ভব হতো না সে কাজও করতে থাকে যন্ত্র। শিল্প বিপ্লবের ফলে নগর ও বাজারের প্রসার হতে থাকে। সমান্তরালে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হতে থাকে।
বর্তমান: সমগ্র পৃথিবী জয় করে ফেলেছে মানুষ। পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রান্ত, সমুদ্রের গভীর তলায়, মহাকাশের সু-উচ্চ শিখরে মানুষের পদাচারণা। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাঁচানোর মতো প্রতিষেধক লক্ষ লক্ষ মানুষ মারার মতো অস্ত্র মানুষের হাতের নাগালে।
১৯১৪ সাল: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৩৯ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো এতে অংশগ্রহণ করে। দুই যুদ্ধে বিশেষ করে দুই যুদ্ধে এমন ক্ষয়ক্ষতি হয় যে পৃথিবীর সব দেশে তার প্রভাব পড়ে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেটি এই যুদ্ধের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
১৯৪৭ সাল: ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে যায় এবং ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ভাগে ভাগ করে যায়। পাকিস্তান অংশে দুটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড পড়ে। একটি পূর্ব অংশ আরেকটি পশ্চিম অংশ।
১৯৭১ সাল: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিরোধের জের ধরে পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের নিয়ন্ত্রণ থেকে পূর্ব অংশ স্বাধীন হয়ে যায়। এর জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হয়েছে। ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এই সময়কালে।
১৯৭৫ সাল: রাজনৈতিক বিরোধ ও আভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা। এর তিন মাস পরেই আরেকটি অভ্যুত্থানের সংঘটন এবং তার তিন দিন পর আরো একটি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। এই তিন মাসের রাজনৈতিক ঘটনাবলী প্রভাব রাখে বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনীতিতে।