বন্দুকযুদ্ধে ২ সন্ত্রাসী নিহত ২ র‌্যাব সদস্য আহত

মুন্সিগঞ্জ সদরের রামপাল এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে একদল সন্ত্রাসীর বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। এ সময় খসরু ওরফে ল্যাংড়া খসরু (৩৭) ও কানা সুমন (৩৭) নামে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

এ ঘটনায় র‌্যাবের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মোকারম হোসেন ও ল্যান্স নায়েক শাফায়েত হোসেন গুলিবিদ্ধ হন।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

আহত র‌্যাব সদস্য দু’জনকে ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএসএইচ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতর পিলখানার বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ডিএডি মোকারম হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রাত ১১টার দিকে র‌্যাব-১১ এর মুন্সিগঞ্জ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি (সিপিসি)-১ এর কমান্ডার এসপি এনায়েত হোসেন মান্নান এ তথ্য জানান।

 তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়, র‌্যাব, পুলিশ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তালিকাভুক্ত মুন্সিগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী খসরু তার কয়েকজন সহযোগীসহ রামপালের নিজ বাড়ির আশেপাশে অবস্থান করছে। তবে র‌্যাব সদস্যরা খসরু’র চেহারা চিনত না। এ সংবাদে দুপুর ২টার দিকে অভিযান চালানো হয়।

অভিযানের কৌশল হিসেবে সন্ত্রাসীরা যেন বুঝতে না পারে সে জন্য গাড়ি দূরে রেখে র‌্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে সিএনজি অটোরিকশায় ঘটনাস্থলের দিকে যায়। সাদা পোশাকে হলেও ভেতরে তাদের বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরা ছিল। কারণ র‌্যাব, পুলিশ ও এনএসআইয়ের তথ্যমতে খসরু এতই ভয়ঙ্কর যে, র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খরা বাহিনীর সদস্য দেখলেই নির্দিধায় গুলি করে।

কমান্ডার এনায়েত হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, র‌্যাব সদস্যরা সরু পথ দিয়ে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি আসলে তিন ব্যক্তিকে একটি প্রাইভেটকারে বসা অবস্থায় দেখতে পায়। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে খসরু বুঝে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গেছে তারা। সঙ্গে সঙ্গে সে ও তার সহযোগী কানা সমন র‌্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় ২০ মিনিট গুলি বিনিময় হয়। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা ৪৫ রাউন্ড গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে খসরু ও সুমনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

প্রাইভেটকার তল্লাশি করে ও ঘটনাস্থল থেকে ২টি বিদেশি আধুনিক পিস্তল, ২টি ম্যাগজিনে ৩টি ও ২টি করে ৫টি গুলি, উদ্ধার করা পস্তিলের ৮টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

অপরদিকে বন্দুকযুদ্ধে ডিএডি মোকারম হোসেন ২টি গুলিতে বিদ্ধ হন। একটি গুলি বগলের নিচ দিয়ে বুলেটপ্রুফ ভেস্টের ফাঁক গলে পাজর ভেঙ্গে নাভীর কাছে গিয়ে আটকে যায়। অপর গুলিটি তার মুত্রথলিতে (ইউরিনাল ব্লাডার) গিয়ে মেরুদন্ডের কাছে আটকে যায়। অস্ত্র পোচার করে নাভীর কাছে গুলিটি বের করে সার্জনরা। তবে মেরুদন্ডের কাছে আটকে থাকা গুলিটি বের করা সম্ভব হয়নি।

সিএমএইচের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জনরা জানিয়েছেন, গুলিটি বের করার চেষ্টা করা হলে মোকারম হোসেনর মৃত্যু হতে পারে। না হলে সেনাবাহিনী থেকে র‌্যাবে আসা এ কর্মকর্তাকে গলিটি দেহে বহণ করেই সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে।

এছাড়া বিজিবি হাসপাতালে ল্যান্স নায়েক শাফায়েত হোসেনের অস্ত্রপোচার করা হয়েছে। বিজিবি থেকে র‌্যাবে আসা এ সদস্য হাতের কব্জির ওপরে গলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিতে তার হাতের হাড় ভেঙ্গে গেছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে সার্জনরা।

এসপি আরো জানান, মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় খসরু ও সুমনের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে ১০ট করে মামলা রয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, অপহরণ ও হত্যাসহ ১০টি মামলায় খসরু এতদিন পলাতক ছিল। আর মাদক, অপহরণ ও বিভিন্ন সন্ত্রসী কর্মকান্ডে সুমনের বিরুদ্ধেও ১০টি মামলায় রয়েছে। সেও পলাতক ছিল।

এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীকে আটক করতে মাঠে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান র‌্যাবের এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)