গালি দেয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?

গুস্তি ছোড়া বা গালি দেয়া মানুষের একটি সহজাত অভ্যাস। প্রায় সকল প্রাপ্ত বয়স্কই জেনে বা মনের ভুলে গালি দিয়ে থাকেন। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যদি দিনে প্রায় ৮০ বার গালি বা খারাপ শব্দ ব্যবহার করে থাকে যার গড় করলে প্রতি ঘন্টায় ৫ থেকে ৬ বার। সমাজের বা অন্যান্য মানুষের চোখে ব্যাপারটি বাজে হলেও গবেষণা কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। মার্কিন গবেষকদের মতে গালি দেয়া স্ব্যাস্থের জন্য উপকারী।ব্যাপারটি অদ্ভুত শোনালেও সত্যিই! গবেষকদের মতে, যে সকল মানুষ বেশি গালি বা খারাপ শব্দ ব্যবহার করে তারা সুখী এবং হতাশাবিহীন জীবন যাপন করেন। কিন্তু গালি দেয়া কীভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে?

গালি দেয়ার মাধ্যমে মানুষ আসলে সুখ বা দুঃখের মত একটি অনুভূতি প্রকাশ করে যা রাগ বা হতাশার বহিঃপ্রকাশ।ধরুন আপনি কোথাও পড়ে গিয়ে আহত হলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই একটি খারাপ শব্দ ব্যবহার করলেন। জেনে বা না জেনেই হোক আপনি গালি দেয়ার মাধ্যমে নিজের উপকার করলেন।কারণ গালি দিলে বা খারাপ শব্দ ব্যবহার করলে মানুষের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আবার অনেক গবেষকের মতে, যদি ব্যায়াম বা শারীরিক কসরতের সময় গালি ব্যবহার করা হয় তবে তা বেশি কার্যকারী হয় এবং ব্যায়াম করার সময় শারীরিক কষ্ট কমে যায়।কারণ গুস্তি ছোড়া হৃদ স্পন্দন বাড়ানোর পাশাপাশি পেশির গ্রিপ এবং মুভমেন্ট বেড়ে যায়।যে কারণে খুব সহজেই মানুষ কোনো ভারী কাজ করতে পারে।অপরদিকে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে বেশিরভাগ মানুষেরই বাঁধা হল হতাশা। কাজের বা পড়ালেখার চাপ ও অন্যান্য কারণে মানুষ প্রায় সব সময়ই কোনো না কোনো হতাশায় ভুগে থাকে। আর এই হতাশা প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্যে।

নিউজিল্যান্ডের গবেষকদের মতে, একজন মানুষ যখন গালি দেয় তখন তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।ফলে রক্তে অক্সিজেন এর প্রবাহ বেড়ে যায়।যে কারণে মন তথা মস্তিস্ক কিছুটা প্রফুল্ল বোধ হয় এবং শান্তির একটি অনুভূতি আসে।যা হতাশা নিরাময়ে সাহায্য করে।গবেষকরা এই গবেষণার জন্য একটি ব্যস্ত জনবহুল রাস্তায় কিছু ড্রাইভারের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে।দেখা যায় যেসকল ড্রাইভার গাড়ি চালানোর সময় গালি উচ্চারণ করে তারা রাস্তার ঝঞ্জাট ও ঝামেলার হতাশা থেকে মুক্ত ছিল। অন্যদের ক্ষেত্রে ফলাফল ভিন্ন ছিল। এমনকি এই গালি দিয়ে প্রাশান্তি অনুভব করার একটি নির্দিষ্ট টার্মও রয়েছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ল্যালোসেজিয়া’ বলে। এমনকি গবেষনায় এটিও দেখা গেছে যে সকল মানুষ বেশি বেশি গালি ব্যবহার করে তারা বাস্তব জীবনে অনেক বেশি সচেতন।

এমনকি এসকল মানুষকে লাই ডিটেকশন মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এসকল মানুষের সততার হার ও অন্যান্যদের তুলনায় বেশি।অপরপক্ষে গালি দেয়া রাগ প্রাকাশেরও বহিঃপ্রকাশ বটে। গবেষকদের মতে, রাগ প্রকাশের মাধ্যমেও পাওয়া যায় মানসিক প্রশান্তি। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাগ প্রকাশে মারামারি বা ঝামেলায় জড়ানোর থেকে গালি ব্যবহার অবশ্যই ভাল। তবে কাজের পরিবেশেও গালি দেয়া কর্মচারীদের হতাশা কমায় ,পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু তাই বলে নিজের উর্ধত্বন কর্মকর্তাকে গালি দেয়া বোকামিই বটে। কাজের পরিবেশ বা সামাজিক মূল্যবোধ এর কথা চিন্তা করলে গালি দেয়াটা একরকম অপরাধই বটে। গালি দেয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও তা বয়ে আনতে পারে মূল্যবোধের ঘাটতি। তবে মার্কিনদের কাজের চাপ এবং হতাশা নিবারণের পাশাপাশি স্ব্যাস্থের উপকারের জন্য গালি ব্যব্যবহারের বুদ্ধিটি খারাপ বলা ভুল হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)