সুন্দুরির ডাকে সুন্দরবনের পথে ভেসে চলেছি
সুন্দরবনের জলরাশির সঙ্গে দুপাশের বনরাজিকে পিছনে ফেলে ভেসে চলেছি আমরা। যান্ত্রিক যন্ত্রণার বাইরে প্রকৃতির কোনও কিছু আমার কাছে একঘেয়ে লাগে না। বরং নদীর পানি, গাছের সবুজ কিংবা বনে জীবজন্তুর হাঁকডাক বেশ ভালোই লাগে। তাই মাঝে মধ্যে সময় পেলে ছুটে যায় প্রকৃতির কাছে।
তিন বছর পরে এবার সুন্দরবনে দুবলার চর রাসমেলায় গিয়েছিলাম কিছু বড়ভাই ও বন্ধুদের সঙ্গে। সাতক্ষীরার তালার কপোতাক্ষ নদী থেকেই আমারা রওনা শুরু করি। সন্ধ্যা বেলাই পৌঁছে গেলাম নলিয়ান ষ্টেশনে পাশ নেওয়ার জন্য। রাত ১২টার পর পাশ পেলাম কিন্তু আইন অনুযায়ী সকালে আমাদের নৌকায় রওনা হলাম রাসমেলার উদ্দেশ্যে। নলিয়ান ষ্টেশন হয়ে শিবসা নদী, মরজাত তারপর দুবলার চরে পৌঁছে গেলাম প্রায় দুইটার দিকে।
জলরাশির মাঝ দিয়েই চলছিলো আমাদের নৌকাটি। দুপাশের বনরাজিকে পিছনে ফেলে ভেসে চলেছি আমরা। এক অসাধারণ মুহুত্ব অনুভব করছি। নৌকাতে বড়ভাই রাকেশের নেতৃত্বে গান চলছে, সাথে সুর মেলাচ্ছি আমিও। যেতে যেতে আমাদের নৌকাটি খারাপ হওয়ার কারণে সুযোগ হয়েছিল বনের মধ্যে নামার। সাহস করে নৌকাতে থাকা ছোট ভাই অভিকে নিয়ে আমি ঢুকে গেলাম বনের মধ্যে। সুন্দরবনের হরিণের দেখা না মিললেও পায়ের ছাপের দেখা মিললো। ধারনা করলাম ভাটার সময় পানি খেতে এসেছিল হযতো। নৌকাটি অতিদ্রুত ঠিক হয়ে গেলে আমরা রওনা হয়ে গেলাম দুবলার চরে।
দুবলার চরে পৌছে একটি খালের মধ্যে নৌকাটি দাড়ালো। সকলে সিদ্ধান্ত নিলো সাগর থেকে আমার মাছ মারবো। সাথেসাথেই সাইফুল দাদু বেরিয়ে পড়লেন জালনিয়ে মাছ ধরতে। প্রথমে জাল মারলেই ছোট সাইজের দুইটা বাগদা,একটা বেলে ও ছোট ছোট চিংড়ী মাছ পেলাম। মাছ পেয়েই সকলেই মহাখুশি। কিছু সময় মাছ ধরার পরে সেই মাছ রান্না করে খেতে খেতে সন্ধ্যা নেমে এলো। দেখা মিললো অপরূপ দৃশ্য।
সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের দৃশ্যে হাঁটাহাটি করছি। এতো সুন্দর দৃশ্যের কথা খাতা কলমে উঠানো কষ্টসাধ্য। সৈকতে দাঁড়িয়ে দেখছি ডুবন্ত কমলা রঙের বড় একটি সূর্যের ভিতর দিয়ে সদ্য সাগর ফেরত জেলেদের হাঁটাচলা। কালো ছায়ার মানুষগুলো সাগর থেকে উঠে ডুবন্ত সূর্যের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত দিয়ে চলে যায় শুটকি পল্লীর পথে।
চলবে…….