শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট উদ্বোধন আজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণকৃত বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট আজ উদ্বোধন করা হবে। এই ইনস্টিটিউটের চিফ কোঅর্ডিনেটর ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আগুনে পোড়ার চিকিৎসার লক্ষ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে রোগিদেরকে সর্বোত্তম সেবা দেয়া হবে।

এই ইনস্টিটিউটে আরো অধিক পোড়ার রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ হবে এবং এখানকার প্লাস্টিক সার্জনরা দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর চাঁনখাঁরপুল এলাকায় অবস্থিত এই হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারি ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে অবস্থিত ১২তলা এই ইনস্টিটিউটে পোড়ার রোগিরা যেমন উন্নততর সেবা পাবেন, তেমনি ডাক্তার ও নার্সরা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষন পাবেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আশা প্রকাশ করেছেন, এই বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে পোড়ার রোগিরা উন্নততর চিকিৎসা সেবা পাবেন। তিনি বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সম্বলিত এই ইনস্টিটিউটটি চিকিৎসা, গবেষনা ও অধ্যয়নের কেন্দ্রে পরিনত হবে।

তিনি বলেন, পাঁচশ’ শয্যা, ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার বিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউটটি বিশ্বের বৃহত্তম বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পরিনত হবে।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসা সেবার উন্নয়নের প্রতি আন্তরিকতার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এই ইনস্টিটিউটের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর চাঁনখারপুলে ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই একর জমিতে ১৮ তলাবিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথমে ৫২২ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ৯১২ কোটিতে দাঁড়ায়।

২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁনখারপুলে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৭ এপ্রিল থেকেই বাংলদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

জানা গেছে, বহুতল বিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউটটির মাটির নিচে তিনতলা বেজমেন্ট। সেখানে গাড়ি পার্কিং ও রেডিওলজিসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ রাখা হচ্ছে। ইনস্টিটিউটটিতে ৫০০টি শয্যা, ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড থাকবে।

আকাশছোঁয়া এ ভবনটি তিনটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। একদিকে থাকবে বার্ন ইউনিট, অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আর অন্য ব্লকটিতে করা হবে অ্যাকাডেমিক ভবন। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি হাসপাতালে হেলিপ্যাড সুবিধা রাখা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনও পুরো কাজ শেষ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তিনদিন আগে থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের আউটডোর থেকে জরুরি বিভাগের আশপাশের রাস্তার ফুটপাতের ভাসমান দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইনস্টিটিউটের চৌহদ্দিতে টহল বৃদ্ধি করেছেন।

বার্ন বিশেষজ্ঞরা জানান, আশির দশকের প্রথম ভাগেও দগ্ধ রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেলে কোনো ইউনিট ছিল না। পোড়া রোগীদের জায়গা হতো হাসপাতালের বারান্দায়। ১৯৮৬ সালে ছয়টি শয্যা নিয়ে দেশে প্রথম বার্ন ইউনিট চালু হয় ঢাকা মেডিকেলে। এটি ৫০ শয্যা করা হয় ১৯৯৬ সালে। আরও ৫০ শয্যা বাড়তে সময় লাগে ২০০৩ সাল পর্যন্ত।

২০১৩ সালে সরকার ইউনিটটিকে ইনস্টিটিউট করে ৩০০ শয্যা করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ইউনিটের জনবল ১০০ শয্যার, ওষুধপথ্যের জোগানও ১০০ জনের হিসাবে। বাকিটুকু চলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদান নিয়ে। বিরোধী দলের অগ্নীসন্ত্রাস ও পেট্রোল দগ্ধের ঘটনা বেড়ে গেলে সরকারের নির্দেশনায় রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ফরিদপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট চালু করা হয়।

জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা, আঙুল জোড়া লাগানো, পায়ের ত্রুটি, ক্যান্সার, দুর্ঘটনা, ট্রমা, হাত-পা সার্জারি রোগীদের একটা বড় অংশ ঢামেক বার্ন ইউনিটে আসে। দেশে প্লাস্টিক সার্জন দরকার ন্যূনতম ৪০০ জনের মতো। কিন্তু বাংলাদেশে এখন প্লাস্টিক সার্জন রয়েছেন ৬৫ জন। তাই জনবল সংকট নিয়েই বুধবার উদ্বোধন হচ্ছে। ৫০০ শয্যার ইনস্টিটিউটটি উদ্বোধনের খবরে পোড়া রোগী ও তাদের অভিভাবকদের মনে আশা জেগেছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)