কালিগঞ্জে কাল থেকে দুর্গাদেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে ৫১টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপুজা শুরু

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা কাল (১৪ অক্টোবর) শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর বোধন এর মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে। কালিগঞ্জে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ৫১ টি পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকল বিভেদ ভুলে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্রে করে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৪ অক্টোবর মহা পঞ্চমীতে দেবীর বোধন , ১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১৬ অক্টোরর সপ্তমী, ১৭ অক্টোবর অষ্টমী, ১৮ অক্টোবর নবমী ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা পরিসমাপ্তি ঘটবে। আর এ উপলক্ষ্যে কালিগঞ্জ থানা এলাকায় ৫২টি পূজা মন্ডপে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কারিগররা এসেছিলেন প্রতিমা তৈরীর জন্য। দুর্গা প্রতিমার সাথে সাথে একই মঞ্চে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ এবং শ্রী কার্তিক দেবী-দেবতাদের প্রতিমা তৈরীর কাজ চলছে পুরোদমে। এছাড়া এ উৎসবকে ঘিরে মন্দির ও মন্ডবগুলোতে আগাম শারদীয় উৎসবের আমেজ চলছে। পূজা মন্ডপ গুলোর মধ্যে কালিগঞ্জের মৌতলা পরমানন্দকাটী সার্বজনীন দুর্গা মন্ডব অন্যতম। এবার জেলার সর্বপ্রথম ৩১টি ষ্টলে ১শ ২১ টি দৃষ্টি নন্দন প্রতিমার সমন্বয়ে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই মন্ডবে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। ইতোমধ্যে মন্ডপটিতে প্রতীমা তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে ব্যস্ত ভাস্কর শিল্পীরা। তাছাড়া মন্ডপের পূজা উদযাপন কমিটির বর্ণিল আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে উৎসবের অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মৌতলা পরমানন্দকাটী সার্বজনীন পুজা কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার সাহা এবং সাধারন সম্পাদক গনেশ চন্দ্র ভাইয়া জানান, মৌতলা পরমানন্দকাটী পূর্জা মন্ডপে ৪৭তম সার্বজনীন দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা মন্দিরের আকর্ষনীয় বৈচিত্রময় দৃশ্যাবলীর মধ্যে ১শ ২১ টি প্রতিমার সমন্বয়ে অতি মনোরম পরিবেশে মন্ডপটি সুসজ্জিত করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এবার শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরি, মন্ডব সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা করতে প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। পূজা উদযাপন কমিটি দুর্গোৎসব সর্বজনীন রুপ দিতে প্রশাসন ও সকলের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেন। তাহারা বলেন, মন্দিরের বিশেষ আকর্ষনীয় ৩১টি ষ্টলে ১ শ ২১টি প্রতিমার মধ্যে দেবীর ঘোটকে আগমন, শংকর পরিবার, গনেশের শিক্ষা গ্রহন, কপীলা গাভী হতে দুগ্ধ দোহনের বাস্তব দৃশ্য, শিবহীন যঞ্জে সতীর দেহত্যাগ, শিবহীন যঞ্জে দক্ষের-ছাগমুন্ডু ধারন, ক্ষিরোধ সাগরে বিজ্ঞুদেব, দাতা কর্নের দান পরীক্ষা, পাতাল পুরে মহিরাবন বধ পূর্ব রাম লক্ষ্মণ উদ্ধার, সাগর রাজার ক্ষিপ্তরুপ, মহাপ্রভু নিমাইয়ের সন্ন্যসযাত্রা, বাস্তবে রাধা কৃষ্ণের দোলায় দোল, মনসা কতৃক বেহুলাকে স্বপ্নাদেশ, নবরুপে পঞ্চতত্ব, নন্দালয়ে শ্রীকৃষ্ণের মাতৃআদর, শ্রীকৃষ্ণের ননীচুরী, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের বিশ্বরুপ দর্শন, নিধুবনে শ্রীরাধিকার কৃষ্ণকালী পূজার বাস্তব দৃশ্য, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ভক্তির প্রদর্শন, মুল মন্দিরে, ফিরে দেখা সেই ১৯৭২ সালের মায়ের মৃম্মময়ী রুপ, ভগিরথের গঙ্গা আনায়নের বাস্তব দৃশ্য, রামপ্রসাদের কালী ভক্তি, রাম প্রসাদ সারদাদেবী বিবেকানন্দের শিব দর্শন, রাজা হরিশ চন্দ্রের শশ্মান মিলন, সাবিত্রি সত্যবান, হরিশ চন্দ্রের শশ্মান মিলন, শ্রীকৃষ্ণের নৌকা বিলাস, গঙ্গাপুত্র ভীষ্মের শেষশয্যা ও দেবীর দোলায় গমন। মন্ডপে ডেকোরেশনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বলেন, দর্শানার্থীদের মুগ্ধ করতে ডেকোরেশনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে, সকল কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রতিমা তৈরির কারিগররা বলেন, পূজা মন্ডপের প্রতিমা গুলো দর্শকের আকর্ষনীয় করে তুলতে আমরা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি। পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পর্যবেক্ষণ করতে পূজা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পূজা মন্ডপসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া উপজেলার গোবিন্দকাটি সার্বজনীন পূজা মন্ডপটিও দর্শকের বিশেষ আকর্ষনীয় হবে। গোবিন্দকাটি পূজা মন্ডপটিতে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় সম্পন্ন। গোবিন্দকাটি সার্বজনীন দূর্গা পূজা মন্ডপ কমিটির উপদেষ্টা চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার সরকার জানান, মন্ডপের দূর্গা প্রতিমা সুন্দর পরিবেশে তৈরি হয়েছে। এ মন্ডপে পূজায় আনুমানিক ৪ থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। আমাদের স্থানীয় প্রশাসন এর্ব সর্বস্তরের জনসাধারন আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করছেন। আগামী দিন গুলো তাদের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগীতা পাব বলে আশা করছি। দল মত নির্বিশেষে পূজার দিনগুলোতে সকলের শান্তিপূর্ণ উপস্থিতি ও সার্বিক সহযোগীতা কামনা করি। কোন রকম সমস্যা ছাড়াই সঠিক সময়ে সকল প্রস্তুতি শেষ হবে বলে আশা করা যায়। গোবিন্দকাটি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পশুপতি সরকার জানান শরদীয় দূর্গা পূজার আর অল্পদিন বাকি আছে এর ভিতরে আশা করি সকল কার্যক্রম শেষ হবে। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, আসন্ন দূর্গাপূজা নির্বিঘ্নে পালনে পুলিশ সকল ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পূজা চলাকালীন দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন স্তরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ মন্ডপে বিশেষ নজরদারি ও দায়িত্বে থাকবে। ইতিমধ্যে থানা এলাকার প্রতিটি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা সহ সার্বিক বিষয়ে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)