মাশরাফি পারলে পারবে বাংলাদেশও!

পঞ্চপাণ্ডব সেনাপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। লড়াকু মনোভাবটা সব দলের বিপক্ষে সব ম্যাচেই তার থাকে। হারার আগে হারেন না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যান। নিজ গুণে দলকেও উজ্জীবিত রাখেন।

শুক্রবার এশিয়া কাপের ফাইনালে একটু বেশিই উজ্জীবিত থাকবেন মাশরাফি। দুবাইয়ের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যে ভারত। আর ইতিহাস বলে ভারতই মাশরাফির প্রিয় প্রতিপক্ষ।

ভারতের মুখোমুখি হলেই জ্বলে উঠেন মাশরাফি। শিকারের নেশায় থাকেন মত্ত। পরিসংখ্যান অন্তত সেটাই বলে। ভারতের মুখোমুখি হলেই তেলে-বেগুনে ফুটতে থাকেন মাশরাফি।

ভারতের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ৩৫টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। তার ২৮টিতেই জিতেছে ভারত। বাংলাদেশ জিতেছে ৫টিতে। বাকি দুটি ম্যাচের একটি পরিত্যক্ত, অন্যটিতে ফল হয়নি। তো বাংলাদেশের ৫ জয়ের প্রথম দুটিই মাশরাফির হাত ধরে। মানে প্রথম দুটি জয়েই বড় নায়ক ছিলেন মাশরাফি। হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। পরের তিনটি জয়ের একটিতে ম্যাচসেরা সাকিব আল হাসান। ২০১২ সালের এই এশিয়া কাপে। বাকি দুটিতে নায়ক মুস্তাফিজুর রহমান। ২০১৫ সালে নিজেদের মাটির ওয়ানডে সিরিজে।

পরের তিনটি জয়ে মাশরাফি নায়ক হতে পারেননি বটে; তবে অবদান রেখেছেন ঠিকই। মানে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৫টি জয়েই রয়েছে মাশরাফির ভূমিকা।

ভারতের মুখোমুখি হওয়া মানেই বাংলাদেশের বড় হার, তখন এটাই যেন নিয়ম! ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর, ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচ শুরুর আগেও এই বিশ্বাসটাই ছিল সবার-বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হারবে। মাত্র ২২৯ রানের পুঁজি গড়ে ভারতকে অনায়াস জয়ের রাস্তাটা তৈরিও করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

কিন্তু ভারতের ইনিংসের তৃতীয় বলেই সেই বিশ্বাসে বড় একটা ধাক্কা মারেন মাশরাফি। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উপড়ে ফেলেন ভারতের হার্ডহিটার ওপেনার বীরেন্দর শেবাগের স্টাম্প। মাশরাফি আগুনে পুড়ে শূন্য রানেই বিদায় নেন শেবাগ। তারপরও ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে সৌরভ গাঙুলি, যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফ, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো ব্যাটসম্যানরা ছিলেন।

কিন্তু শুরুতেই মাশরাফি যে বিশ্বাসটা ছড়িয়ে দেন তা ছড়িয়ে পড়ে তাপস বৈশ্য, খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ রফিকদের মধ্যেও। ৪ জনে মিলে একের পর এক ফিরিয়ে দেন ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের। ৪ জনেই নেন দুটি করে উইকেট। অন্য দুটি রানআউট। শেবাগের পর মাশরাফি আউট করেন ডেঞ্জারম্যান ধোনিকে। মাশরাফি-তাপস-সুজন-রফিকের তোপে মহাপরাক্রমশালী ভারত অলআউট হয়ে যায় ২১৪ রানে।

মাত্র ২২৯ রানের পুঁজি গড়েও বাংলাদেশ পায় ভারতের বিপক্ষে ১৫ রানের প্রথম জয়। অলরাউন্ড নৈপূণ্যে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান মাশরাফি। বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার আগে ব্যাট হাতে দলের বিপদের সময় নেমে করেন ৪৪ বলে অপরাজিত ৩১ রান। নবম উইকেটে তাপস বৈশ্যর সঙ্গে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। তাতেই মূলত ২২৯ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ।

এরপর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়টি ২০০৭ বিশ্বকাপে। ক্যারিবিয়ানের পোর্ট অব স্পেনে গ্রুপপর্বের ম্যাচটিতে ভারতকে ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। যে জয়ের বড় নায়ক ছিলেন মাশরাফি। তার আগুন-ঝরা বোলিংয়ের কারণেই মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় সৌরভ গাঙুলি, শেভাগ, টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ, ধোনিদের ভারত।

এই ম্যাচেও মাশরাফি ছত্রছান করে দেন শেবাগের স্টাম্প। ৯.৩ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে মাশরাফি তুলে নেন ৪ উইকেট। পরে তামিম, মুশফিক, সাকিব-তিনজনের তিন হাফসেঞ্চুরিতে পেয়ে যায় ৫ উেইকেটের জয়। যে জয়ে বাংলাদেশ উঠে যায় সুপার সিক্সেও। গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় শিরোপা প্রত্যাশী ভারত।

পরের তিনটি জয়েও কম-বেশি ভূমিকা রেখেছেন। সব মিলে ভারতের বিপক্ষে ১৮ ম্যাচ খেলে মাশরাফি নিয়েছেন ২২ উইকেট। যা ওয়ানডেতে কোনো দেশের বিপক্ষে তার তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট। ভারতের চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন কেবল জিম্বাবুয়ে (৩৯ ম্যাচে ৬২টি) ও শ্রীলঙ্কার (২২ ম্যাচে ২৬টি) বিপক্ষে। ব্যাট হাতে ভারতের বিপক্ষে ১৩ ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে করেছেন ২৪.৮৮ গড়ে ২২৪ রান।

উপরের এই তথ্যই বলছে মাশরাফির সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ ভারত। মাশরাফি পারবেন অতীতের ধারাবাহিকতায় সেই ভারতের বিপক্ষে আরেকবার জ্বলে উঠতে? পারবেন দুবাইয়ে ঢাকা ও পোর্ট অব স্পেনের সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে? তিনি পারলে পারবে বাংলাদেশও!

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)