প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচে মাশরাফিরা জিতেছে ৩৭ রানে (বাংলাদেশ ২৩৯, পাকিস্তান ২০২)।

আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা।

ওপেনিং করতে নামেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। কিন্তু জাতিকে হতাশ করে জুনায়েদ খানের ৩য় ওভারের ৫ম বলে ফখর জামানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। মাঠে নামেন মমিনুল হক। তিনিও সৌম্যর পথ ধরে ৪ বলে ৫ রান করে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান। দলীয় ১৩ রানে ১৬ বলে ৬ রান করে জুনায়েদ খানের বলে বোল্ড হয়ে একই পথ ধরেন লিটন দাসও।

শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর মোহাম্মদ মিথুনকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। দুজনের ব্যাটে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। মুশফিক ৬৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। মুশফিকের পথ ধরে মোহাম্মদ মিথুনও ৬৭ বলে তুলে নেন ওডিআই ক্যারিয়ারের ২য় হাফ সেঞ্চুরি। ৩৩.৩ ওভারে ৬০ রানে হাসান আলীর বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে জুটি ভেঙে ফিরে যান মোহাম্মদ মিথুন।

মুশফিকের সঙ্গী হন ইমরুল কায়েস। ৩৬ ওভারের সাদাব খানের প্রথম বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ৯ রান করে ফেরেন তিনি। তখন দলীয় রান ১৬৬। এরপর মুশফিকের সঙ্গে দলের হাল ধরেন তারই ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেঞ্চুরি দিকে ধীরে ধীরে এগোলেও মাত্র ১ রানের দূরে থাকতে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে সরফরাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মুশি। মাত্র এক রানের আক্ষেপ থেকে গেল তার। স্পর্শ করা হলো না নিজের ওডিআই ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরিটাকে।

মাঠে নামেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১১ বলে ১২ রান করে জুনায়েদ খানের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে তিনিও ফিরে যান সাজঘরে। মাঠে নামেন অধিনায়ক। কিন্তু তখনই ৪৭.৩ ওভারে জুনায়েদ খানের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় মাহমুদউল্লাহকে ২৫ (৩১)। রুবেল হোসেন নামেন। তার পথও দীর্ঘ হয়নি। ৩ বলে ১ রান করে রান আউট হয়ে তিনিও ফেরেন।

পথা চল শেষ হয়ে যায় ৪৮.৫ ওভারেই। হাসান আলীর বলে ফখর জামানের কাছে ক্যাচ তুলে দেন অধিনায়ক ১৩(১৩)। দলীয় ২৩৯ রানে শেষ হয় টাইগারদের মিশন। পাকিস্তানের জুনায়েদ খান মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন।

২৪০ রানের টার্গেট ছিল পাকিস্তানের সামনে। তেমন বড় টার্গেট নয়। তবে এই রানই যে তাদের জন্য এতটা কঠিন হয়ে উঠবে, ভাবা যায়নি। মিরাজের হাত ধরে শুরুতেই উইকেট পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দল। মিরাজ ১ রানে ফেরান ফকর জামানকে। এরপর জ্বলে ওঠেন মোস্তাফিজুর রহমান। দারুণ স্পেলে পরপর দুই উইকেট। বাবর আজমকে ১ রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন কাটার বয়। পরের শিকার হন সরফরাজ আহমেদ।

তবে তাতে বড় অবদান উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের। যেভাবে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন তাতে ভয়ের কারণই ছিল। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন সরফরাজ। ক্যাচটি সহজ ছিল না। ঝাপিয়ে পড়ে দুই হাতে বল তালুবন্দি করেন মুশি। তিনি এমনভাবে ক্যাচটি ধরেন যে, শরীরের পুরো ভর পড়েছিল বুক ও কোমরের উপর। তিনি হয়তো একটু ব্যথাও পেয়েছিলেন।

মাত্র ১৮ রানে তিন উইকেট ফেলে দিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেয় টাইগাররা। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ইমামুল হক ও শোয়েব মালিক দৃঢ়রা দেখান। বড় পার্টনারশিপের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। ৬৭ রান যোগ করার পর রুবেলের বলে মাশরাফির অসাধারণ ক্যাচে পরিণিত হন শোয়েব।

এর কিছু পর শাদাব খানকে ৪ রানে স্লো মিডিয়াম পেসে বিদায় করেন সৌম্য সরকার। ৯৪ রানে ৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশর হাতে। তবে এখান থেকে দলকে টেনে নিতে থাকেন বিপজ্জনক ইমামুল হক। তিনি এমন এক ব্যাটসম্যান যিনি একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে জানেন। তাকে সঙ্গ দেন আসিফ আলী। অবশ্য ২২ রানের মাথায় ফিরতে পারতেন এই আসিফ। কিন্তু মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকের জায়গায় কিপিং করা লিটন দাস। অবশেষে সেই আসিফকে মিরাজের বলে ৩১ রানে স্ট্যাম্পিং করেন লিটন। ২১ রানের জুটি ভাঙার পর স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে।

সেই স্বস্তি আনন্দে রূপ নেয় যখন ৮৩ রান করা ইমামুল হককে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে তড়িৎ স্ট্যাম্পিং করেন লিটন। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। গ্যালারিতে বাংলাদেশি সমর্থকদের উল্লাস শুরু হয়ে যায়। এরপর হাসান আলীকে ৮ রানে মোস্তাফিজ বিদায় করেন। মোহাম্মদ নেওয়াজকেও ৮ রানে বিদায় করেন আবারো মোস্তাফিজ। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে পাকিস্তান থামে ২০২ রানে। ২ উইকেট নেন মিরাজ। একটি করে পান রুবেল, সৌম্য ও রিয়াদ। অসাধারণ বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ। ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে ধস নামান তিনি। গত ম্যাচেও কাটার বয়ের কারণে শেষ ওভারে নাটকীয়ভাবে জিতেছিল বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই মনে করিয়ে দেয় ২০১২ সালের ২২ মার্চের সেই দুঃস্বপ্ন ঘেরা রাতের কথা। সেই স্মৃতি এখনো আগুন হয়ে জ্বলছে টাইগারদের চোখে। মাত্র দুটি রান। এই দুটি রানের জন্য ঘরের মাঠে ১১তম আসরের শিরোপা বাংলাদেশ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় পাকিস্তান। তারই প্রতিশোধ নিল টাইগাররা।

টানা দ্বিতীয় ও শেষ চার আসরে তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। শুক্রবার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। গতবারও ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এ দুদল। বাংলাদেশকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। এবার বাংলাদেশের সামনে তাই প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)