শেষ দুই দিনে ১৬ লাখ গরু এসেছে প্রতিবেশী দেশ থেকে

বাংলাদেশে এবার কোরবানির পশু এবং চামড়ার বাজার নিয়ে হতাশাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করেছে৷ শুরুতে পশুর দাম চড়া থাকলেও শেষে দরপতন পশুর ব্যাপারীদের কাঁদিয়েছে৷ সরকার চামড়ার দাম কম নির্ধারণ করেছে৷ তবে বাজারে ছিল আরো কম৷

কোরবানির পশুর বাজার শুরুতে ছিল বেশ চড়া৷ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং ঈদুল আজহা কাছাকাছি সময়ে পড়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়৷ কারণ, ১৫ আগস্ট শোক দিবসে দুস্থদের খাবার বিতরণে প্রচুর গরু জবাই করা হয়৷

কিন্তু কোরবানির এক-দুইদিন আগে পশুর বাজার পড়তে থাকে৷ যে গরু  এক লাখ টাকার নীচে বিক্রিতে বাজি ছিলেন না ব্যবসায়ীরা, তার দাম কোনোভাবে ৬০ হাজার টাকার বেশি বলছিলেন না ক্রেতারা৷ ফলে অনেকে গরু বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হন৷ আবার কেউ কেউ খরচের কথা চিন্তা করে কম দামে বা লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন৷ এমনকি কোরবানির দিন ভোররাতে অনেক ব্যাপারীকে (পশু ব্যবসায়ী) কাঁদতে দেখা গেছে৷ বিশেষ করে যাঁরা শেষ দুই দিনে কোরবানির পশু নিয়ে বাজারে এসেছেন, তাঁরাই বিপাকে পড়েছেন বেশি৷

ফরিদপুর থেকে শনির আখড়া বাজারে একশ’র মতো গরু নিয়ে এসেছিলেন বিল্লাল হোসেন৷ তিনি তাঁর সব গরুই বিক্রি করতে পেরেছেন৷ এটা কিভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আগেই গরু নিয়ে বাজারে এসেছি৷ শেষ সময়ের অপেক্ষা করিনি৷ কোরবানির দু’দিন আগেই বিক্রি শেষ৷ তারপরও শেষ দিকে দাম কম পেয়েছি৷ গড় দাম হিসেবে আমি চার-পাঁচ হাজার টাকার ব্যবসা করেছি প্রতিটি গরুতে৷ আমার গরু ছিল ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে৷ কিন্তু শেষের দুই দিনে যাঁরা বেশি ব্যবসা করার জন্য গরু নিয়ে এসেছেন, তাঁরা ধরা খেয়েছেন৷ কারণ, তখন বাজারে আবার নতুন গরু এসেছে৷”

কোথা থেকে শেষ সময়ে নতুন গরু এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘খামারিরা ওই সময়ে গরু বাজারে নিয়ে এসেছে৷ আর ভারত ও মিয়ানমার থেকেও গরু এসেছে বলে শুনেছি৷ কিন্তু আমি দেখিনি৷”

সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, দেশে কোরবানির গরু-ছাগলের পর্যাপ্ত মজুদ আছে৷ রবিবার  মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিকে জানায়, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু (সব ধরনের পশু) রয়েছে প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ৷ গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক কোটি চার লাখ ২২ হাজার৷ বাংলাদেশে কোরবানিতে ২৫-৩০ লাখ গরু কোরবানি হয়৷ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ২০১৬ সালে দেশে পশু কোরবানি হয়েছে এক কোটি তিন লাখ (সব ধরনের পশু)৷ ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল এক কোটি পাঁচ লাখ৷ সে অনুযায়ী এবার পাঁচ বা ১০ ভাগ কোরবানি বেশি হলেও এক কোটি ১৬ লাখ পশু যথেষ্ট৷ তবে কথা বলে জানা গেছে, কোনোভাবেই ৪০ লাখের বেশি গরু কোরবানি হয় না্৷

কথা বলে জানা গেছে, শুরুর দিকে কোরবানির পশুর দাম বেশি থাকায় অনেক ব্যাপারীই পশু ধরে রাখছিলেন আরো বেশি দামের আশায়৷ শেষের দিকে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় তাঁদের মাথায় হাত পড়ে৷ গাবতলির ব্যাপারী দুদু মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেকে গরু ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ, তাঁরা কেনা দামও পাচ্ছিলেন না, কেননা, একটি গরু ৬-৭ মাস আগে কেনা হয়, বাজারে নিয়ে আসা পর্যন্ত গরুর পিছনে অনেক খরচ আছে৷ আবার কেউ কেউ লোকসান দিয়েও বিক্রি করেছেন৷ কারণ, গরু ফেরত নিয়ে গেলে আবারো খাওয়াতে হবে, পুষতে হবে৷ তাতে লোকসান আরো বেড়ে যাবে৷ কসাইরা গরু কেনে বাজারে মাংশের কেজি কত দাম তা দেখে ব্যবসার হিসাব করে৷”

সাংবাদিক  শাহেদ শফিক  এবার গরুর হাট নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গরুর বাজার ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রাখায় শেষ দিকে সীমান্ত বলতে গেলে খুলে দেয়া হয়৷ শেষ দুই দিনে ১৬ লাখ গরু এসেছে প্রতিবেশী দেশ থেকে৷”

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)