পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর হবে ভোমরা

বিএনপি জামায়াত জোট সরকার আমলে মংলা বন্দরে সাড়ে ১১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল উল্লেখ করে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন এখন সেখানে ৭৫ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। তিনি বলেন চট্টগ্রাম বন্দর ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ২০১৭ সালে ৯৮ তম থেকে ৭১ তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে ভোমরা স্থলবন্দরও ক্রমেই বেশী মুনাফা অর্জনের দিকে যাচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী যেকোনো সময় ভোমরা স্থল বন্দর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দরে পরিণত হবে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রী শুক্রবার বিকালে সাতক্ষীরার ভোমরায় স্থলবন্দর উপদেষ্টা কমিটির চতুর্থ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন। তিনি আরও বলেন, গত চার বছরে লঞ্চডুবিসহ কোন ধরনের নৌ দুর্ঘটনা ঘটেনি। নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় এই সফলতা অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রতিটি নৌযানে জনসংখ্যা ও পণ্য ধারণ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই ক্ষমতার বাইরে গেলে তখনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন দেশে ৫২টি স্থলবন্দর এখন ৭৪ টিতে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ার সাথে সাথে ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব আয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্থলবন্দর কমিটির চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটির সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.আফম রুহুল হক এমপি, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি, নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সামাদ, কাস্টমস কমিশনার অহিদুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মো. নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, ৩৩ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল সরকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, কাস্টমস উপ কমিশনার আবদুল জলিল, সহকারী কমিশনার সাগর সেন, সিভিল সার্জন ডা.তৌহিদুর রহমান, ভোমরা সিঅ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম, আমদানি রফতানি সমিতির সভাপতি আসাদুর রহমান সহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
মন্ত্রী বলেন আগে আরও কম থাকলেও ২০০৯ সালে ১২টি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। গত নয় বছরের ব্যবধানে আরও ১০টি স্থল বন্দর বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা ২২টিতে উন্নীত হয়েছে। আগে বন্দরসমূহে লাভের মুখ দেখা যেতো না । এখন আমদানি রফতানি বানিজ্যে অগ্রগতি হওয়ায় সরকার অনেক মুনাফা অর্জন করছে। ভোমরা স্থল বন্দরে ১৪০ কোটি টাকা আয়ের উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন আগে মাত্র দুটি সমুদ্র বন্দর ছিল। এখন তার সঙ্গে পায়রা ও মাতারবাড়ি যুক্ত হয়ে মোট ৪টি সমুদ্রবন্দর হল। এছাড়া মহেশখালিতে আরেকটি বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন ভোমরা বন্দরকে আরও উন্নত করতে বেনাপোলের আদলে সাতক্ষীরায় আরও জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে বেনাপোলে ১৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভোমরা স্থলবন্দর অচিরেই বেনাপোলের কাছাকাছি চলে আসতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শাহজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যাবতীয় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে এবং আরও কয়েকটি স্থলবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি বলেন এমনকি বান্দরবন ও খাগড়াছড়ির মত এলাকায় বন্দর উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি বেশী অথচ রফতানি কম এমনটি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টির দিকে ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের অনেক অপ্রচলিত পণ্য বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। বিদেশের বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরে ৫২টি অনুমোদিত আমদানি পণ্যের সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হয়ে এখন তা ৭৪এ উন্নীত হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন আজ থেকে তা কার্যকর হলো।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রীসভা যে আইন অনুমোদন করেছে তা সংসদে পাশ হওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে সড়কের শৃঙ্খলা ফিরেছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান মন্ত্রী। তিনি আরও বলেন ভোমরা বন্দরে একটি পূর্নাঙ্গ পুলিশ থানা স্থাপিত হবে। এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কাজ চলছে।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। জামায়াতের কারণে অনেক কলঙ্ক মাখা সাতক্ষীরা এখন এক পরিবর্তিত শান্তির জেলা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন এই শান্তির ধারাকে ধরে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসের সাথে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ২০১৯ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু আমরা পার হতে পারবো বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন হাত পেতে বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে অর্থ আনার চেয়ে নিজ দেশের অর্থায়নে এতবড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস ও শক্তি কেবলমাত্র শেখ হাসিনারই আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন সাহস করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। একইভাবে তার কন্যাও সেই সাহস দেখিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)