বাবার ফাঁসি চায় ছোট্ট মুগ্ধ

পৃথিবী বুঝে ওঠার আগেই মাকে হারিয়েছে সাজিয়াতুজ জোহরা মুগ্ধ (৭)। বুধবার রাতে নানাবাসায় বসে মুগ্ধ এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল কিন্তু চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল না। মাতৃহত্যার বিচার চায় অবুঝ শিশু মুগ্ধ। মাকে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যাকারী বাবার ফাঁসি দেখতে চায় সে। কঠোর শাস্তি চায় হত্যায় সহযোগিতাকারীদেরও।

মুগ্ধ জানায়, বাবা-মা বিদেশ যাওয়ার আগে তাকে ফুফুর বাড়িতে রেখে যায়। ফুফু নানা নানু, খালা-মামা কারো সঙ্গে কথা বলতে দিতো না। নানাবাড়ি আসার আগে ফুফু বলেন, তার বাবা মাকে হত্যা করেছে। এ কথা বলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি অবুঝ শিশু মুগ্ধ।

মুগ্ধর দাবি এখন একটাই, যে বাবার নিষ্ঠুরতায় অকালে সে মা হারিয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি চায় সে। সে বলে, আমি বাবার ফাঁসি চাই।

নিহত বুলবুলের বোন খাদিজা পারভিন উপমা জানান, তার বোন আইনজীবী সাজেদা-ই-বুলবুলকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আগে ভাগনি মুগ্ধকে ঘাতক শাহজাদার বোন মোসা. শাহানা নাজনীন পারভিনের বাড়ি রেখে যায়। একদিকে বোনকে মালায়শিয়ায় বসে ঘাতক শাহজাদা হত্যা করে অপরদিকে ঘাতকের বোন অবুঝ মুগ্ধকে বাড়িতে আটকে নির্যাতন চালায়।

উপমা বলেন, গত ১৭ জুলাই মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় মোসা. শাহানা নাজনীন পারভিনের কাছ থেকে মুগ্ধকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি।

বুলবুলের বাবা মো. আনিস হাওলাদার (ফিটার) ও মা মমতাজ বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবা শেষবারের মতো আমাদের মেয়েটারে দেখতে চাই। মেয়ের লাশ দেশে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা ও ঘাতক শাহজাদাসহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নারী আইনজীবী সাজেদা-ই-বুলবুলকে (২৯) নৃশংসভাবে খুন করেন তার স্বামী শাহজাদা সাজু। এ ঘটনায় শাহজাদাকে গ্রেফতার করেছে সে দেশের (সিআইডি) পুলিশ। টানা ২০ দিনের মাথায় দেশটির সীমান্তবর্তী প্রদেশ জহুর বারু থেকে ২৫ জুলাই বুধবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সাজেদা-ই-বুলবুল পটুয়াখালী সদরের পুরাতন আদালত পাড়ায় মো. আনিস হাওলাদারের মেয়ে। তিনি প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এলএলএম পাস করেন। বিয়ের পর ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর স্বামীর সঙ্গে মালেয়েশিয়া যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর শাহজাদা মালয়েশিয়ায় নিজে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ তৈরি করে দেননি। নিয়মিত নির্যাতন করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুলাই বুলবুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে শাহজাদা। অপরাধ গোপন করতে স্ত্রীর মরদেহ টুকরো টুকরো করে লাগেজে ভরে ডোবায় ফেলে গা ঢাকা দেন শাহজাদা।

পরে দুই লাগেজে ভর্তি বুলবুলের আট টুকরো মরদেহ প্রথমে দেখতে পান এক ব্যক্তি। তিনি পুলিশে খবর দিলে এই নৃশংস ঘটনাটি সামনে আসে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)