পাকিস্তানে নির্বাচন: কী ঘটছে?

সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে পাকিস্তানে চলছে নানা হিসেব-নিকেষ৷ রাজপথ যেমন হয়ে উঠছে সহিংস, তেমনি রাজনীতির মাঠেও চলছে যোগ-বিয়োগের খেলা৷ সেনাবাহিনী যেমন হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ধর্মও৷

নির্বাচনকে ঘিরে এ পর্যন্ত ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে৷ বিশেষ করে নির্বাচনের মাস জুলাইয়ে বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ ১০ জুলাই আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে৷ ১২ জুলাই এক সাবেক সংসদ সদস্যকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়৷ ১৩ জুলাই দু’টি বোমা হামলায় ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়৷

আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাকিস্তানের মজলিশ-ই-সূরা বা সংসদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে আগামী ২৫ জুলাই৷ সেদিন জাতীয় সংসদ ও চারটি প্রদেশের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবেন পাকিস্তানের জনগণ৷

জাতীয় সংসদের ৩৪২টি আসনের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ ২৭২ জন জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন৷ বাকি ৭০টি আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের জন্য ও ১০টি অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত৷ এছাড়া প্রাদেশিক সভার আরো একশ’ জন সদস্য নির্বাচিত করা হয়৷

২০১৮ সালের মার্চে নতুন করে আসন বিন্যাস করা হয়েছে৷ সে অনুযায়ী, ইসলামাবাদ ক্যাপিটাল টেরিটরিতে তিনটি, পাঞ্জাবে ১৪১টি, সিন্ধ-এ ৬১টি, খাইবার পাখতুনখোয়াতে ৩৯টি, বালোচিস্তানে ১৬টি ও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত উপজাতীয় এলাকাগুলোতে ১২টি আসনে নির্বাচন হবে ।

পাকিস্তান সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে কমপক্ষে ৩৪২টির মধ্যে কমপক্ষে ১৭২টি আসন জিততে হবে৷ প্রশ্ন হলো, কেউ কি পাবে তা? এবারের নির্বাচনে যে দু’টি দলের মধ্যে লড়াই হবার কথা সেগুলো হলো পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল)৷ পাকিস্তানের বিখ্যাত সিকিউরিটি ফার্ম একেডির করা এক জরিপ বলছে, পিটিআই এবার ৯৯টি ও পিএমএল ৭২টি আসন জিতবে৷ সে হিসেবে জোট সরকার ছাড়া গতি নেই৷

ইমরান খানের দল পিটিআই, শেহবাজ শরিফের পিএমএলের বাইরে তৃতীয় বড় দল হলো পাকিস্তান পিপলস পার্টি, যার প্রধান প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টো ও আসিফ আলি জার্দারির বড় সন্তান বিলাওয়াল জার্দারি৷ নির্বাচন পূর্ববর্তী বিভিন্ন জরিপ বলছে, এই তিন দলকেই জোট সরকার গঠন করতে হবে৷ পাকিস্তানের প্রধাননমন্ত্রী হবার ক্ষেত্রে বিতর্কিত রাজনীতিক, এক সময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেটার ইমরান খান এগিয়ে আছেন৷ তিনি ও তাঁর দল শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট বলে কথিত আছে৷ শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগেই বিচার বিভাগ, সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভোটের ফল পিটিআইয়ের পক্ষে আনতে কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷ এমনকি উগ্র ডানপন্থিদেরও কাছে টানতে নানারকম চেষ্টা চালাচ্ছেন ইমরান৷

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ সম্প্রতি দেশটির জনপ্রিয় পত্রিকা ডনের করা এক জরিপে দেখা যায়, পাকিস্তানের ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন আসছে নির্বাচনে সেনা প্রভাব থাকবেই৷ ৩৫ শতাংশ মনে করেন, সেনারাই ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে৷ গেল মেয়াদে নেওয়াজ শরিফের জনপ্রিয়তা কমতে থাকলে এবং তালেবানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷

পাকিস্তানের রাজনীতিতে ধর্মও অনেক বড় বিষয়৷ এইতো ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী হতে মরিয়া ইমরান খান উগ্র ডানপন্থিদের সমর্থন পেতে ব্লাসফেমি আইনের প্রতি তাঁর জোর সমর্থন দিলেন৷ এমনকি জঙ্গি সংযোগের অভিযোগ অভিযুক্ত অনেক ‘ইসলামিক’ নেতাও লড়ছেন নির্বাচনে৷

গত ৬ জুলাই পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন)-এর নেতা নওয়াজ তাঁর মেয়ে মরিয়মের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে পাকিস্তানের আদালত৷ দুর্নীতির দায়ে নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৮৯ লাখ পাউন্ড জরিমানা এবং মরিয়মকে আট বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লক্ষ পাউন্ড জরিমানার আদেশ দেয়া হয়৷ এরপরই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে ফেরেন মরিয়ম ও নওয়াজ৷ গ্রেফতার হন৷ তাদের এই ফিরে আসায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে৷ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে মত অনেকেরই৷

জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি৷ সবশেষ নওয়াজ শরিফের সামনে সে সুযোগ থাকলেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়৷ প্রশ্ন হলো, আগামী মেয়াদে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি কি পারবেন?

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)